আজকাল ওয়েবডেস্ক: জাঁকজমকভাবে পালিত হল ইস্টবেঙ্গলের প্রতিষ্ঠা দিবস। সকালে পতাকা উত্তোলন, কেক কাটার পর বৃহস্পতিবার সন্ধেয় ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রে তারকার মেলা। মন্ত্রী, ফুটবলার, ক্রিকেটার থেকে শুরু করে বলিউডের তারকা। এক ছাদের তলায় সবাই। ছিল চলতি মরশুমের ইস্টবেঙ্গল দল এবং কোচ কার্লেস কুয়াদ্রাতও। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া মাথায় নিয়েই হাজির সকলে। একই মঞ্চে দেখা গেল সৌরভ গাঙ্গুলি এবং মহম্মদ সামিকে। সৌরভ গাঙ্গুলিকে 'ভারত গৌরব' সম্মানে ভূষিত করা হয়। দেওয়া হয় ৫ লক্ষ টাকার চেক। দু'দিন আগেই মোহনবাগান দিবসে 'মোহনবাগান রত্ন' পেয়েছিলেন। এদিন 'ভারত গৌরব' সম্মানের প্রাপক। এদিনও বাংলার ফুটবলের মানের উন্নতির কথা বলেন তারকা ক্রিকেটার। 

সৌরভ বলেন, 'ইস্টবেঙ্গলের এই সম্মান পেয়ে খুশি। ক্লাবের এত সমৃদ্ধি প্লেয়ারদের জন্য। যারা এত বছর মানুষকে মাঠে টেনেছে। মাজিদ, জামশেদের খেলা আমি ছোটবেলায় দেখেছি। সমস্ত গুণীজনদের মাঝে থাকতে পেরে গর্বিত। ময়দান ছোট্ট জায়গা। কিন্তু অনেক মানুষের কেরিয়ার জড়িয়ে আছে। ইস্টবেঙ্গলের সবচেয়ে শক্তিশালী দিক হল জার্সির রং। তার মধ্যে একটি বিশেষ শক্তি লুকিয়ে আছে। দর্শকরা ক্লাবের হৃদস্পন্দন। তবে দর্শকদের দেখতে হবে যাতে প্লেয়ারদের মান না পড়ে যায়। গ্যালারিতে বসে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের খেলা দেখার সময় অন্য হাফে বল গেলে সমর্থকরা চিৎকার করে বলে ব্রিং ইট হোম। সমর্থকদেরও চাইতে হবে যাতে ফুটবলের মান বাড়ে। আলকারাজ যদি জোকোভিচকে হারাতে পারে, তাহলে মানুষ যা কিছু করতে পারে। তিনটে বড় ক্লাব আইএসএল খেলবে। যা বাংলার ফুটবলের জন্য ভাল।'

'প্রাইড অফ বেঙ্গল' পুরস্কার দেওয়া হয় মহম্মদ সামিকে। তুলে দেন ফিরহাদ হাকিম এবং অরূপ বিশ্বাস। পাঁচ লক্ষ টাকার আর্থিক পুরস্কারও দেওয়া হয়। 'দ্য মেকার অফ এ চ্যাম্পিয়ন' সম্মান জানানো হয় সানিয়া মির্জার বাবা ইমরান মির্জাকে। তিনি জানান, কলকাতায় ফেরা তাঁর কাছে হোমকামিং। একসময় বাংলার টেনিস তারকা জয়দীপ মুখার্জির খেলা দেখে অনুপ্রাণিত হন তিনি। 

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, পরিবহন মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী, দমকল মন্ত্রী সুজিত বসু, মেয়র ফিরহাদ হাকিম, বিধায়ক দেবাশিস কুমার। এছাড়াও ছিলেন অজিত ব্যানার্জি, সুব্রত দত্ত, অনির্বাণ দত্ত, স্নেহাশিস গাঙ্গুলি,‌ ডোনা গাঙ্গুলি প্রমুখ। নতুন মরশুমে ইস্টবেঙ্গলে আরও ট্রফি দেখতে চান ক্রীড়ামন্ত্রী। অরূপ বিশ্বাস বলেন, 'আমার কাছে ইস্টবেঙ্গল একটা জেদ, সংগ্রাম, লড়াই। হার না মানার অপর নাম ইস্টবেঙ্গল। সেরা ফুটবলারদের আতুরঘর ইস্টবেঙ্গল ক্লাব। যখন এনআরসি নিয়ে আন্দোলন হচ্ছিল। ইস্টবেঙ্গলে লেখা ছিল, আমরা কাগজ দেখাব না। কয়েকবছর অন্ধকার গিয়েছে। আশা করছি এবার লাল হলুদ পতাকা উড়বে। অনেক ট্রফি আসবে।' জীবনকৃতি সম্মান পেয়ে প্রশান্ত ব্যানার্জি জানান, 'ফুটবল খেলার স্বীকৃতি পাচ্ছি ইস্টবেঙ্গলে খেলার জন্য। এতদিনে মনে হচ্ছে ফুটবলে আমি কিছু একটা করেছি।'

ক্লাবের অ্যালমানাক রিলিজ করেন টলিউডের তারকা প্রসেনজিৎ চ্যাটার্জি। লাল হলুদ জার্সিতে একসময় রুপোলি পর্দায় দেখা গিয়েছে তাঁকে। এবার ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পেরে খুশি। প্রসেনজিৎ বলেন, 'আমার ছেলে অসম্ভব ফুটবল ভালবাসে। প্লেয়ারদের সঙ্গে দেখা হলে আমাকে অভিনন্দন জানাতে বলেছে। এটা ইস্টবেঙ্গলের ঐতিহাসিক মুহূর্ত। শুধু বাংলার জন্য নয়, ভারতের জন্য। মুম্বইয়ে যখন খেলা হত তখন এসডি বর্মন ছাতা নিয়ে গিয়ে খেলা দেখতেন। আমার বাবাও তাই। আশ্রয় সিনেমায় আমি ফুটবল প্র্যাকটিস করার জন্য ইস্টবেঙ্গলে এসেছি। ইস্টবেঙ্গল জার্সি পরে শুটিংও করেছি।'

এদিন পিকে ব্যানার্জি মেমোরিয়াল সম্মান দেওয়া হয় লাল হলুদ কোচ কার্লেস কুয়াদ্রাতকে। ড. রমেশ চন্দ্র সেন মেমোরিয়াল 'জীবনকৃতী সম্মান' পান রঞ্জিত মুখার্জি। ফিরে যান পুরোনো দিনের স্মৃতিতে। মঞ্চে দাঁড়িয়ে গানও গান। বোমকেশ বোস মেমোরিয়াল 'জীবনকৃতি সমান' জানানো হবে প্রশান্ত ব্যানার্জিকে। বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কার পান নন্দকুমার সেকার। উদীয়মান ফুটবলার হন প্রভসুখন গিল। অজয় বোস মেমোরিয়াল সাংবাদিক সম্মান দেওয়া হয় রাজদীপ সারদেশাইকে। পুষ্পেন সরকার মেমোরিয়াল সাংবাদিক সম্মানের প্রাপক সরোজ চক্রবর্তী। বর্ষসেরা ক্রিকেটার সাত্যকি দত্ত। সেরা সমর্থক মুকুল গাঙ্গুলি এবং গনেশ দাস। সেরা রেফারির সম্মান পান সুকৃতি কুমার দত্ত এবং জয়ন্ত ব্যানার্জি।

ছবি: অভিষেক চক্রবর্তী