আজকাল ওয়েবডেস্ক: সুইং একদিকে, সিম অন্যদিকে, ক্রিকেট জগতে যার চেনা নাম ‘ওবল সিম’। সম্প্রতি শেষ হওয়া ভারত-ইংল্যান্ড পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজে এটাই ছিল মহম্মদ সিরাজের সাফল্যের মন্ত্র। সিরিজের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি হিসেবে ২৩টি উইকেট নিয়ে শীর্ষে ছিলেন তিনি। ওভালে পঞ্চম ও শেষ টেস্টের শেষ দিনে, যখন ভারতের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল মাত্র চার উইকেট এবং ইংল্যান্ড লক্ষ্যর কাছাকাছি পৌঁছে যাচ্ছিল। ঠিক তখনই এই ওবল সিমের কৌশল সিরাজ এবং টিম ইন্ডিয়াকে এনে দেয় ঐতিহাসিক জয়। 

প্রথমে ইংল্যান্ডের উইকেটকিপার ব্যাটার জেমি স্মিথকে আউটসুইং ডেলিভারিতে ক্যাচ আউট করান উইকেটকিপারের হাতে। এরপর আসে সিরাজের সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক অস্ত্র, ওবল সিম। যা তিনি গোটা সিরিজ জুড়ে দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করেন। সিরাজের পরের শিকার ক্রেইগ ওভারটন, যাকে তিনি এলবিডব্লিউ করেন এমন এক ডেলিভারিতে যা ছিল না প্রচলিত ইনসুইং, না অফ-কাটার, আবার সম্পূর্ণ সোজা সিম-আপও নয়। ওবল সিম ডেলিভারির মূল বৈশিষ্ট্য হলো সিমকে খানিকটা কাত করে, সোজা উল্লম্বভাবে না রেখে বল ছাড়া। তবুও বলের ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকে নিখুঁত।

আরও পড়ুন: ছত্তিশগড়ের যুবকের কাছে হঠাৎই ফোন এল কোহলি, ডিভিলিয়ার্সের, তারপর যা হল…

এই বল পিচে পড়ে হঠাৎ দিক পরিবর্তন করতে পারে। কখনও ভিতরে ঢোকে, কখনও বাইরে বেরিয়ে যায় বা কখনও সোজা চলে আসে। যা ব্যাটারকে বিভ্রান্ত করে। সিরাজ ম্যাচ শেষে বলেন, ‘নেটে ওবল সিম অনুশীলন শুরু করি ইন-ডাকার বল তৈরি করার জন্য। ওবল সিম ব্যাটারকে অনুমান করতে দেয় না বল কোথায় যাবে’। শুধু সিরাজ নন, আকাশ দীপ ও প্রসিদ্ধ কৃষ্ণও এই ডেলিভারি কাজে লাগিয়েছেন সিরিজে। প্রচলিত সিম বা সুইং বোলিংয়ে আঙুল সিমের কাছাকাছি রেখে স্লিপ বা ফাইন লেগের দিকে নির্দেশ করা হয়। কিন্তু ওবল সিমে আঙুল সিম থেকে দূরে রাখা হয় এবং সিম উল্লম্বভাবে ব্যাটসম্যানের দিকে থাকে।

এমনকি, হ্যারি ব্রুককে একাধিকবার এই বলে আউট করেছেন তিনি। এর মূল কার্যকারিতা আসে সিমের অবস্থান থেকে, যা বাতাস ও পিচের সঙ্গে অপ্রত্যাশিত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। প্রচলিত সুইংয়ের মতো এখানে বলের উজ্জ্বল দিক ও সিমের কোণ দিয়ে দিক অনুমান করা যায় না। ফলে ব্যাটারের পক্ষে দিক বোঝা কঠিন হয়। ১৯৯০ সালের দশকে ইংল্যান্ডের কাউন্টি ক্রিকেটে ভেজা, ঘাসঢাকা পিচে ‘ওবল সিম’ জনপ্রিয় হয়।

তবে ধীরগতির কারণে অনেক ব্যাটার তখন সেই বল সামলাতে পারতেন। ২০০০ সালের মাঝামাঝি থেকে ২০১০ সালের শুরুর দিকে দক্ষিণ আফ্রিকার শন পোলক ও পাকিস্তানের মহম্মদ আসিফ ছিলেন এই ডেলিভারির ওস্তাদ। বিশেষ করে আসিফের নিখুঁত বোলিং থেকে ইংল্যান্ডের জেমস অ্যান্ডারসন ও স্টুয়ার্ট ব্রড এই কৌশল দখলে আনেন। অ্যান্ডারসন স্বীকার করেছেন, ২০১০ সালে পাকিস্তানের ইংল্যান্ড সফরে আসিফের জাদুকরী স্পেল দেখেই তিনি ওবল সিম আয়ত্ত করার পথে এগিয়েছিলেন। বর্তমান যুগে ওবল সিম আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফাস্ট বোলারদের অন্যতম বড় অস্ত্র হয়ে উঠেছে। যা হয়তো রিভার্স সুইংয়ের পর ফাস্ট বোলিংয়ের কৌশলে সবচেয়ে বড় বিপ্লব।