আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিশ্বকর্মা পুজোতেও কাজ থেকে বিরত থাকার উপায় নেই। প্রতিদিনের মতো কাজের জন্য বেরিয়েও পড়েন সকলে। কিন্তু উৎসবের আবহে উদযাপন হবে না, তা কি হয়! তাই যাত্রা পথেই বিশ্বকর্মা পুজোয় মেতে উঠলেন লোকাল ট্রেনের সহযাত্রীরা।
লোকাল ট্রেনের কামরাতেই হল পুজোর আয়োজন। তাও আবার ধুমধাম করে। আয়োজনে কোনও খামতি নেই। মন্ত্র উচ্চারণ থেকে, ফুল দিয়ে সাজানো আসন, বিশ্বকর্মা ঠাকুর, এমনকী প্রসাদ বিতরণ। লোকাল ট্রেনের কামরা কয়েক ঘণ্টার জন্য পুজো মণ্ডপে পরিণত হল এদিন।
তবেই এই প্রথমবার নয়। গত চার বছর ধরেই লোকাল ট্রেনের কামরায় বিশ্বকর্মা পুজোয় মেতে উঠেছেন নিত্যযাত্রীরা। এবারেও তার অন্যথা হয়নি। ভোরের ট্রেনে জাঁকজমকপূর্ণ পুজোর আয়োজন। পুজো সেরে, প্রসাদ খেয়ে আবারও যে যাঁর মতো কাজে বেরিয়ে যান।
ফুল দিয়ে সাজানো ট্রেনের কামরা। হাওড়াগামী কাটোয়া লোকাল তখন ছুটছে পরের স্টেশনের দিকে। এর মধ্যেই হচ্ছে মন্ত্রপাঠ। চলন্ত ট্রেনের কামরাতেই হল পুজো। ফুল দিয়ে মণ্ডপের মতো সাজানো হয়েছে ট্রেনের কামরা। হাওড়াগামী কাটোয়া লোকাল যেন পুজো মণ্ডপ। এর মধ্যেই হচ্ছে মন্ত্রপাঠ করে পুজোপাঠ।
পুজোর পর নিত্যযাত্রীদের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ করাও হল। হইহই করে ট্রেনের কামরার ভেতরেই পালিত হল বিশ্বকর্মা পুজো। কাটোয়া থেকে ট্রেনটি পাঁচটা বেজে ৪০ মিনিটে ছেড়ে হাওড়ায় পৌঁছয় আটটা বেজে ৪৫ মিনিটে। প্রতিদিন দীর্ঘ ১৪৫ কিলোমিটার পথ সহযাত্রীরা একসঙ্গে কাটান।
তাঁরা কাটোয়া লোকালের চার নম্বর কামরার নিত্যযাত্রী। কেউ বা কলকাতা বড় বাজারের খুব কম বেতনের কোনও দোকানে হেলপারের কাজ করেন, কেউ আবার সরকারি বড় অফিসার, কেউ সাংবাদিক, কেউ বা কলেজ পড়ুয়া। কিন্তু এই তিন ঘণ্টার যাত্রা পথে তাঁদের একটাই পরিচয়, তাঁরা সবাই সহযাত্রী।
প্রচন্ড ঠান্ডা হোক বা গরম বা বর্ষা, এই নিত্যযাত্রীদের দিন শুরু হয় এই তিন ঘণ্টা একই সঙ্গে এই চেনা মুখগুলোর সঙ্গে দেখা হওয়ার পর থেকে। এই তিন ঘণ্টায় তাঁরা যেমন নিজেদের সুখ দুঃখ ভাগ করে নেন। অনেক ভাল গল্প যেমন তৈরি হয় নিজেদের মধ্যে, মাঝে মাঝে ঝগড়াঝাঁটিও যে লাগে না তা নয়। কিন্তু দিনের শেষে একটাই পরিচয়, তাঁরা সহযাত্রী।
সারা বছর দিন শুরুর এই তিন ঘণ্টা তাঁরা একইসঙ্গে সময় কাটান। গত ২০ বছর ধরে নিত্য যাত্রীদের উদ্যোগে ওই ট্রেনের চার নম্বর কামরায় হয়ে আসছে বিশ্বকর্মা পুজো। মূর্তি এনে ট্রেনের কামরার ভিতরই ধুমধাম করে হয় পুজো। এবারও ট্রেনের কামরায় বিশ্বকর্মা পুজোর আয়োজন করলেন নিত্যযাত্রীরা। নিজেরাই চাঁদা তুলে এই পুজোর ব্যবস্থা করেছেন। একটা দিনের পুজো বা এই হুল্লোড়ে করে উৎসব পালন করা, তাঁদের সারা বছরের যাত্রা পথকে যেন আরও মসৃণ করে দেয়।
