মিল্টন সেন, হুগলি: চন্দননগরে জগদ্ধাত্রী পুজোর ইতিহাসে এই প্রথম। বিদ্যুৎহীন হল না শহর। জলের সমস্যা পোহালেন না কেউই। বিসর্জনের সারাদিনই শহরে চালু থাকল বিদ্যুৎ পরিষেবা। সাড়ম্বরে অনুষ্ঠিত হল জগদ্ধাত্রী পুজোর শোভাযাত্রা।
গত ২০২৩ সালে এই সমস্যা থেকে মুক্তি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন চন্দননগরের মন্ত্রী তথা রাজ্যের মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন। বলেছিলেন, জগদ্ধাত্রী পুজোয় আর বিদ্যুৎ পরিষেবা বন্ধ থাকবে না। পরিষেবা সচল রেখে হবে শোভাযাত্রা, প্রতিমা নিরঞ্জন। বিগত প্রত্যেক বছরই দশমীর দিন বিসর্জনের সময় বেশ কয়েক ঘণ্টার জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করা হত। মূলত সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত এই সমস্যা পোহাতে হত বাসিন্দাদের।
প্রতিমার উচ্চতা বেশি হওয়ায় রাস্তায় থাকা তারের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হত। ফলে শহর জুড়ে জলের সমস্যাও দেখা দিত। দশমী ও একাদশী দুই দিন বিদ্যুৎ ছাড়া থাকা অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল চন্দননগর বাসীর। বিদ্যুৎ দপ্তরের হুগলি রিজিওনাল ম্যানেজার মধুসূদন রায় জানিয়েছিলেন, এ বছর আর সমস্যা হবে না। আন্ডার গ্রাউন্ড কেবল বসানোর কাজ সম্পন্ন হয়েছে। নিরবিচ্ছিন্ন থাকবে বিদ্যুৎ পরিষেবা।
তিনি আরও বলেন, এবারই প্রথম সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ চালু রেখে শোভাযাত্রা হবে। এর জন্য গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে মাটির তলা দিয়ে যেমন কেবল নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তেমনি গলির ভিতরে বাড়ির বিদ্যুৎ সংযোগের ক্ষেত্রে ওভারহেড তারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ১১ হাজার কেভির বিদ্যুৎ এর লাইনের প্রায় পুরোটাই মাটির তলা দিয়ে করে দেওয়া হয়েছে।
১২০ কোটি টাকার প্রকল্পের এই কাজ শেষ হওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি তাঁর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন পোস্তা থেকে। গত ১৩ অক্টোবর চন্দননগর রবীন্দ্র ভবনে পুজো কমিটিগুলির সঙ্গে পুলিশ প্রশাসনের সমন্বয় বৈঠকে মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন জানিয়েছিলেন, চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী শোভাযাত্রা শুধুমাত্র চন্দননগরের গর্ব নয় গোটা বিশ্বের গর্ব। শোভাযাত্রা দেখতে আসা দর্শণার্থীদের জন্য ভাল থাকার জায়গা ছিল না। রাজ্য পর্যটন দপ্তরের উদ্যোগে কেএমডিএ পার্কে তৈরি হয়েছে আলো রিসোর্ট। একইসঙ্গে ১২০ কোটি টাকা খরচ করে আন্দার গ্রাউন্ড কেবেলিং এর কাজও সমাপ্ত হয়েছে। শোভাযাত্রার সময় চন্দননগর আর বিদ্যুৎহীন থাকবে না।
বিদ্যুৎ দপ্তর সূত্রে খবর, জগদ্ধাত্রী পুজোর ইতিহাসে এই প্রথম বিদ্যুৎ চালু রেখে শোভাযাত্রা প্রতিমা নিরঞ্জন হবে। বিগত বছরগুলিতে চন্দননগর পুরনিগমের তরফে বিভিন্ন এলাকায় জলের ট্যাঙ্ক সরবরাহ করে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করা হত। বারোয়ারীগুলোও জেনারেটারের সাহায্য নিত। রাজ্য সরকারের এই উদ্যোগে খুশি পুজো উদ্যোক্তারা।
বিবির হাট উত্তরাঞ্চলের সভাপতি সূর্য দাস বলেন, মাটির তলা দিয়ে বিদ্যুৎ পরিষেবা চালু হওয়ায় আর লোডশেডিং হবে না। এতে সকলেরই সুবিধা হবে। এই প্রসঙ্গে চন্দননগর পুরনিগমের মেয়র রাম চক্রবর্তী বলেছেন, গত বছর পর্যন্ত বিদ্যুৎ বন্ধের কারণে যে সমস্যায় পড়তে হয়েছে এবার তা হবে না। যে সমস্ত প্রতিমা দিনের বেলায় বিসর্জন হয় সেই এলাকাগুলোতে বিদ্যুৎ পরিষেবা বন্ধ রাখা হত। ফলে জলের সমস্যা দেখা দিত। বাড়িতে আলো পাখা চলত না। চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর সময় প্রায় প্রত্যেক বাড়িতেই আত্মীয়-স্বজনরা আসেন।তাই এই সময় জলের প্রয়োজন হয় বেশি। বিদ্যুৎ না থাকলে অন্যান্য অসুবিধাও হত। শোভাযাত্রা যে পথ দিয়ে যায়, চন্দননগরের বড় বাজার স্ট্যান্ড রোড, উর্দি বাজার, লক্ষীগঞ্জ বাজার, সরিষা পাড়া, পঞ্চানন তলা, তালডাঙ্গা, উত্তরাঞ্চল পালপাড়া রোড, বিদ্যালংকার বাগবাজার, জিটি রোড রথের সড়ক, লিচুতলা জ্যোতিরমোর তেমাথা, বেশোহাটা হয়ে স্ট্যান্ড রোড প্রায় আট কিমি রাস্তা। রাস্তায় দুই পাশে বিদ্যুতের তার থাকায় ওভারহেড তার সরানোর প্রয়োজন হয়েছে এতদিন। এবার সেই তার আর থাকছে না। মাটির তলা দিয়ে বিদ্যুৎ চালিত হচ্ছে।
ছবি: পার্থ রাহা
