আজকাল ওয়েবডেস্ক: নদীতে বিপদ জেনেও পরিবারের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য মাছ ধরতে গিয়েছিলেন এক গৃহবধূ। তিনি যখন নদীতে মাছ ধরছিলেন তখন সেখানে ছিল একটি দৈত্যাকার কুমির। সুযোগ বুঝে অতর্কিতভাবে ওই বধূকে আক্রমণ করে কুমির। এরপর টানতে থাকে গভীর জলের দিকে। প্রাণ বাঁচাতে একদিকে কুমিরের সঙ্গে লড়াই, অন্যদিকে চিৎকার করতে থাকেন ওই গৃহবধূ।
জলের মধ্যে প্রায় এক ঘণ্টা চলে কুমিরের সঙ্গে তাঁর লড়াই। শেষপর্যন্ত কোনওরকমে কুমিরের মুখ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে প্রাণে বাঁচেন তিনি। সাঁতরে উঠে পড়েন পাড়ে। শনিবার এমনই চাঞ্চল্যকর একটি ঘটনা ঘটেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাথরপ্রতিমা ব্লকের অন্তর্গত বনশ্যামনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের অশ্বিনী মাইতি খেয়াঘাট সংলগ্ন এলাকায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওই গৃহবধূর নাম, প্রণতি প্রামানিক। স্বামী গৌতম প্রামানিক পেশায় পরিযায়ী শ্রমিক। এক চিলতে ঘরে দুই মেয়েকে নিয়েই থাকেন প্রণতি। নদীতে কাঁকড়া ধরে প্রতিদিন নিজের ও পরিবারের জন্য অন্ন সংস্থান করতেন তিনি। প্রতিদিনের মতোই শনিবার কাঁকড়া ধরতে গিয়েছিলেন প্রণতি। কাঁকড়া ধরার সময় একটি কুমির আক্রমণ করে ওই গৃহবধূকে। এরপর ওই গৃহবধূ প্রাণ বাঁচাতে নদীতে ঝুঁকে পড়া একটি গাছকে জড়িয়ে ধরেন। গাছের ডালে কাপড় দিয়ে জড়িয়ে প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা করেন।
কুমিরও নাছোড়বান্দা তার শিকার নিয়ে। প্রণতিকে গভীর জলে নিয়ে যাওয়ার জন্য তার ধারালো দাঁত দিয়ে প্রণতিকে কামড়ে ধরে টানতে থাকে। লেজ দিয়ে আঘাত করার চেষ্টা করে। গৃহবধূর চিৎকারে দৌড়ে আসেন এলাকার মানুষজন। পাড়ে দাঁড়িয়ে চিৎকার করতে থাকেন তাঁরা। কুমিরকে লক্ষ্য করে ছুঁড়তে থাকেন ইট পাথর। শেষপর্যন্ত রণে ভঙ্গ দেয় কুমির। স্থানীয়রা ওই গৃহবধূকে উদ্ধার করে পাথরপ্রতিমা গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে আসেন। সেখানেই চিকিৎসা চলছে প্রণতি প্রামানিকের।
ভয়ে এবং রক্তক্ষরণের জন্য দুর্বল প্রণতি এই রুদ্ধশ্বাস ঘটনা জানান। তিনি বলেন, 'কাঁকড়া ধরতে নদীতে গিয়েছিলাম। সেই সময় একটি কুমির আক্রমণ করে। দীর্ঘক্ষণ বাঁচার জন্য লড়াই করেছি। ঈশ্বরের অসীম কৃপায় অবশেষে প্রাণ ফিরে পেয়েছি।' মেয়ের এই অবস্থার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন প্রণতি প্রামানিকের মা। তিনি জানান, 'ভগবানের কৃপায় প্রাণ ফিরে পেয়েছে মেয়ে। এলাকাবাসীরা যদি সঠিক সময় না আসতেন তাহলে অঘটন ঘটতে পারত।' তবে অসীম সাহসে ভর করে রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ের পর জীবন ফিরে পেয়ে খুশি ওই গৃহবধূ।
