আজকাল ওয়েবডেস্ক: সকাল থেকেই মিষ্টির দোকানে বিরাট ভিড়। তার মধ্যেই নরম পাকের সন্দেশ, দুধ কালাঁকাদ, চিত্তরঞ্জনেরাও জায়গা করে নিচ্ছে। ডাব সন্দেশ, বাটার স্কচ আর নানা কিসিমের বরফি আর ফিউশন রসগোল্লারাও বাজারে আছে।
বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, কড়া পাকের ল্যাংচা ইত্যাদি ক্রমশ পিছনে চলে যাচ্ছে। তবে মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী ইন্দ্রজিৎ দত্ত, যাদের সীতাভোগ মিহিদানা সবচেয়ে বিখ্যাত তিনি জানালেন, 'সীতাভোগ,মিহিদানা আমাদের ঐতিহ্য। এর কদর সবসময় আছে, থাকবে। বাইরে নিয়ে যেতে গেলে অন্য কিছুর সঙ্গে এ দুটোও প্রায় সবাই নিয়ে যান।'
এদিকে ভাইফোঁটার দিনে এবারেও বর্ধমানের নীলপুর ব্লাইন্ড একাডেমিতে অনাথ বোনের হাতে ফোঁটা নিলেন প্রাক্তন সভাধিপতি দেবু টুডু। এখন তিনি আর সরকারি পদে নেই৷ রাজ্য এসটি সেলের চেয়ারম্যান দেবু তবু প্রতিবারের অভ্যাসে এখানে আসেন। অনাথ শিশু কিশোরদের সঙ্গে সময় কাটান। মিষ্টি খাওয়ান তাদের। তাঁর সঙ্গে ছিলেন জেলা পরিষদের মেন্টর মহম্মদ ইসমাইল।
আবার ফিরে আসা যাক, মিষ্টিকথায়।
ভাইফোঁটা মানেই ভাইয়ের পাতে কিছু খাবারদাবার তুলে দিতে বোনের আকাঙ্খা। আর তার সঙ্গে থাকবেই নানা ধরণের মিষ্টি দিয়ে মিষ্টিমুখের পালা। দক্ষিণবঙ্গের বর্ধমানে মিষ্টির নানা ধরণের আধিপত্য কোন কাল থেকেই। তবে সবার উপরে রয়েছে জিআই ট্যাগ পাওয়া সীতাভোগ আর মিহিদানা। অন্য মিষ্টির সঙ্গে এই দুটোও পড়বে ভাইয়ের পাতে। তবে এবারের ট্রেন্ড হল, ক্রমশ কম মিষ্টির দিকে ঝুঁকছেন মফস্বলি বাঙালি। আর বাড়তি দামের সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে আগের চেয়ে কম আইটেম নিতে হচ্ছে।
আরও পড়ুন: আজ সোনা আরও সস্তা! বিয়ের মরশুমের আগে আরও কমবে দাম না বাড়বে? মধ্যবিত্তদের জন্য বিরাট আপডেট
মিষ্টি উৎসব ভাইফোঁটা। আগেরদিন থেকেই মিষ্টির দোকানগুলোতে ভিড় জমেছে ক্রেতাদের। এবারে মিষ্টির দাম কিছুটা বেড়ে গিয়েছে।
ক্রেতারা জানাচ্ছেন, ভাইফোঁটা উপলক্ষে অনেক স্পেশাল মিষ্টি তৈরি হয়। সেগুলো তাঁরা কিনছেন। তার সঙ্গে সীতাভোগ আর মিহিদানা, হ্যাঁ সেটাও চাই। বিশেষত বাইরে নিয়ে যাবার জন্য এদের চাহিদা এখনও আছে। বিক্রেতারা জানান, এবারেও ভাইফোঁটা সন্দেশ-সহ অন্য মিষ্টি হয়েছে। লোকে একটু হালকা মিষ্টি চাইছেন। তাই নানা রকমের বরফি, সন্দেশ, বাটার স্কচ সন্দেশ ইত্যাদি রয়েছে। রয়েছে নানা রকম রসগোল্লা। আর সীতাভোগ মিহিদানা তার আকর্ষণ তো আছেই।
বর্ধমানের একটি মিষ্টির দোকানের কর্ণধার প্রমোদ সিং জানান, উপকরণের দাম বাড়ায় তাঁদের দাম বাড়াতে হয়েছে। তাই মনের মতো মিষ্টি নিতে চিন্তা করতে হচ্ছে ক্রেতাদের। সেজন্য কিছু কম দামের মিষ্টি রাখতে হয়েছে। তিনি জানান, ক্রেতারা ক্রমশই 'হেলথ কনসাস' হয়ে চলেছেন। কড়া পাকের চেয়ে তাই নরম পাকের হালকা মিষ্টি আস্তে আস্তে বাজার দখল করছে। তবে রসগোল্লা এখনও তার বাজার ধরে রেখেছে অনেকটাই।
তবু বাঙালির ভাইফোঁটা মানেই একথালা সাজানো মিষ্টি! ভাই-বোনের স্নেহের এই উৎসবে মিষ্টির বিকল্প ভাবা কঠিন। তাই স্বাভাবিক ভাবেই ভাইফোঁটার আগের দিন থেকেই বর্ধমানের মিষ্টির দোকানগুলিতে ভিড় চোখে পড়ার মতো। বর্ধমানের বিখ্যাত মিষ্টির দোকানগুলো তো গমগম করছে।
যেহেতু এখন মানুষ ক্রমশ স্বাস্থ্য সচেতন হচ্ছেন, তাই দোকানদাররাও নতুনত্ব আনছেন পরিবেশনে। এসেছে অনেক কম চিনির মিষ্টি, যা নিয়ে আগ্রহী অনেক ক্রেতাই। তবে বর্ধমানের ঐতিহ্যবাহী সীতাভোগ ও মিহিদানা-র ক্ষেত্রে কম চিনির ব্যবহার সহজ নয়। দোকানদারদের দাবি, 'এই মিষ্টি দুটোর স্বাদই নির্ভর করে সঠিক পরিমাণ চিনির ওপর।' ফলে চাহিদা থাকলেও অনেকেই এবার পরিমিত পরিমাণে কিনছেন প্রিয় মিষ্টি। অন্যদিকে, কিছু দোকানে দেখা যাচ্ছে নতুন নতুন উদ্ভাবন— যেমন ডাব সন্দেশ, যা এখন জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। সব মিলিয়ে ভাইফোঁটার আগের দিন থেকেই রাজার শহর বর্ধমানের মিষ্টির বাজারে উপচে পড়া ভিড়, উৎসবের আমেজে মিষ্টিতে নজর সবার।
জি টি রোড, মিউনিসিপ্যাল মার্কেট, রানিগঞ্জ বাজার, আরামবাগ রোড কিম্বা বি সি রোড শহরের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে আছে অভিজাত মিষ্টির দোকানগুলো। বর্ধমানের মিষ্টি স্বাদে, গুণে, মাণে আর দামে টেক্কা দিতে পারে হুগলি, কলকাতার সঙ্গে। ডায়াবেটিসের হুমকি যতই চোখ রাঙাক, এক দিনের জন্য তো নিয়ম ভাঙাই যায়।
'উৎসবে নিয়ম নাস্তি!'
