আজকাল ওয়েবডেস্ক: নির্বাচন কমিশনের নাগরিকত্ব দেওয়ার ক্ষমতা নেই, নেওয়ারও কোনও ক্ষমতা নেই — এমনই বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন রাজ্যের কারামন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা। শনিবার বোলপুরে তৃণমূল কংগ্রেসের কোর কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, কমিশনের কাজ শুধু বৈধ ভোটারদের নাম তালিকাভুক্ত করা। বিজেপি যেভাবে ভয় দেখিয়ে মানুষকে আতঙ্কিত করার চেষ্টা করছে, তাতে অনেকের মনোবল ভেঙে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন মন্ত্রী।
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার বীরভূমের ইলামবাজারের স্কুলবাগান সুভাষপল্লীতে নিজের মেয়ের বাড়িতে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন পশ্চিম মেদিনীপুরের কোতোয়ালি থানার কোড়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ক্ষিতীশ মজুমদার (৯৫)। ওইদিন সকালে পরিবারের সদস্যরা তাঁকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। বেশ কিছু মাস আগে মেয়ের বাড়িতে এসে সেখানেই থাকতে শুরু করেছিলেন তিনি। পরিবারের দাবি, ভোটার তালিকা নিয়ে গুজব ও ‘এসআইআর’-এর আতঙ্কে তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন। সকালে ঝুলন্ত দেহ দেখতে পেয়ে পরিবার খবর দেয় পুলিশে। পরে দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয় বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে। ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। মৃতের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে ঘটনাস্থলে যান বীরভূম জেলার তৃণমূল কোর কমিটির আহবায়ক অনুব্রত মণ্ডল। পরবর্তীতে ওই পরিবার ইলামবাজার থানায় অভিযোগও দায়ের করে। এই ঘটনায় জেলা তথা রাজ্য রাজনীতিতে ব্যাপক তরজা শুরু হয়।
এসআইআর নিয়ে রাজ্যজুড়ে যখন শোরগোল চলছে, সেই প্রেক্ষাপটে মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহার বক্তব্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেন, এসআইআর নিয়ে বিজেপি যেভাবে নোংরামি করছে এবং মানুষকে ভীতসন্ত্রস্ত করছে, তার ফলেই অনেকের মনোবল ভেঙে যাচ্ছে। কারণ এসআইআরের পরে বিজেপি বলছে এনআরসি চালু করবে। এতে সাধারণ মানুষ যারা অতীতে পূর্ববঙ্গ থেকে এসেছিলেন তাঁরা ভাবছেন এসআইআরে নাম না তুলতে পারলে নাগরিকত্ব চলে যাবে। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের নাগরিকত্ব দেওয়া বা কেড়ে নেওয়ার কোনও ক্ষমতা নেই। তারা কেবল বৈধ ভোটারদের নাম তালিকাভুক্ত করে। অথচ বিরোধীরা নক্কারজনকভাবে বাংলায় অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি করছে।
মন্ত্রী আরও বলেন, 'আমার মনে হয় এই মানুষগুলো টেনশন ও ভয়ের কারণেই এমন (আত্মঘাতী) কাজ করছেন। এভাবেই তাঁরা প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।' অনুব্রত মণ্ডল এসআইআর ভালো বলেছেন, এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, 'এসআইআর ভাল না মন্দ সেটা ভবিষ্যৎ বলবে, অনুব্রত মণ্ডল কী বলেছেন সেটা তাঁর ব্যাপার। কিন্তু এই মুহূর্তে মানুষকে ভয় পাওয়ার কোনও দরকার নেই।' তিনি জানান, মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ও তৃণমূল কংগ্রেস নির্বাচনী কমিশনকে স্পষ্টভাবে জানিয়েছে—প্রতিটি বৈধ ভোটারের নাম তুলতে হবে, অন্যায়ভাবে কাটা চলবে না। বৈধ ভোটারদের অধিকার কেড়ে নেওয়া হলে তা মেনে নেওয়া হবে না।
ঘটনাটি গত বৃহস্পতিবার ঘটার পর থেকেই রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে। তৃণমূলের দাবি, এসআইআরের আতঙ্কই বৃদ্ধের মৃত্যুর কারণ। অন্যদিকে, বিজেপির দাবি—এটা রাজনৈতিক নাটক। নির্বাচন কমিশনের এসআইআর কর্মসূচি যেমন চলছে, তেমন চলবে। তবে মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই গ্রামে এখনও শোক ও আতঙ্কের পরিবেশ বজায় রয়েছে।
