আজকাল ওয়েবডেস্ক: রাজ্যে ফের এনআরসি আতঙ্কে মৃত্যু। এই ঘটনায় ফের কেন্দ্রকে তীব্র আক্রমণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। উত্তর ২৪ পরগনার আগরপাড়ার মহাজাতি নগর এলাকায় ঘটে গিয়েছে এই মর্মান্তিক ঘটনা। জানা গিয়েছে, মহাজাতি নগরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ৫৭ বছর বয়সি প্রদীপ কর আত্মহত্যা করেছেন। তাঁর রেখে যাওয়া সুইসাইড নোটে লেখা রয়েছে ‘আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী এনআরসি।’ ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসতেই এলাকায় নেমে এসেছে গভীর শোক ও ক্ষোভের ছায়া। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রদীপবাবু দীর্ঘদিন ধরেই এনআরসি (National Register of Citizens) ইস্যু নিয়ে মানসিক চাপে ভুগছিলেন। নিজের নাগরিকত্ব নিয়ে অনিশ্চয়তা ও ভয় তাঁর মনে গভীর দুশ্চিন্তা তৈরি করেছিল। এই ঘটনার পর রাজনৈতিক মহলে তীব্র জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে। শুরু হয়েছে তীব্র প্রতিক্রিয়া ও দোষারোপের পালা। শাসকদলের তরফে বিজেপিকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করা হয়েছে।
এক রাজনৈতিক নেতার বক্তব্য, "এনআরসি আতঙ্কে একজন সাধারণ নাগরিকের আত্মহত্যা ভারতের সংবিধান ও মানবতার উপর ভয়ানক আঘাত। বিজেপি বছরের পর বছর ধরে নাগরিকদের মনে ভয় ঢুকিয়েছে— মিথ্যা প্রচার, বিভ্রান্তি, আতঙ্ক এবং ঘৃণার রাজনীতি চালিয়ে মানুষের মৌলিক অধিকারে আঘাত করেছে।"
আত্মহত্যার ঘটনায় মৃতের নাম করে বিজেপি-কে নিশানা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, "৫৭ বছর বয়সী প্রদীপ কর, ৪ মহাজ্যোতি নগর, পানিহাটি, খড়দহ (৯ নং ওয়ার্ড) থেকে আত্মহত্যা করেছেন, একটি চিরকুট রেখে গেছেন যেখানে লেখা আছে, "আমার মৃত্যুর জন্য এনআরসি দায়ী।" বিজেপির ভয় ও বিভাজনের রাজনীতির এর চেয়ে বড় অভিযোগ আর কী হতে পারে?"
আরও পড়ুন: মুষলধারে বৃষ্টির সঙ্গে চলছে ঝোড়ো হাওয়ার দাপট! ল্যান্ডফলের আগেই বাংলায় তাণ্ডব শুরু ঘূর্ণিঝড় মান্থার
তিনি আরও লিখেছেন, "বিজেপি বছরের পর বছর ধরে এনআরসির হুমকি দিয়ে নিরীহ নাগরিকদের উপর নির্যাতন চালিয়েছে, মিথ্যা ছড়িয়েছে, আতঙ্ক ছড়িয়েছে এবং ভোটের জন্য নিরাপত্তাহীনতার অস্ত্র তৈরি করেছে, তা কল্পনা করলে আমার মাথায় দাগ কেটে যায়। তারা সাংবিধানিক গণতন্ত্রকে একটি কঠোর আইন-শাসনে পরিণত করেছে, যেখানে মানুষকে তাদের অস্তিত্বের অধিকার নিয়ে সন্দেহ পোষণ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। এই মর্মান্তিক মৃত্যু বিজেপির বিষাক্ত প্রচারণার প্রত্যক্ষ পরিণতি। যারা দিল্লিতে বসে জাতীয়তাবাদ প্রচার করে তারা সাধারণ ভারতীয়দের এমন হতাশার দিকে ঠেলে দিয়েছে যে তারা তাদের নিজের দেশেই মারা যাচ্ছে, এই ভয়ে যে তাদের 'বিদেশী' ঘোষণা করা হবে।"
এখানেই থামেননি মমতা। তিনি লিখেছেন, "আমি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে এই নির্মম খেলা চিরতরে বন্ধ করার দাবি জানাচ্ছি। বাংলা কখনই এনআরসিকে অনুমতি দেবে না, এবং কাউকে আমাদের জনগণের মর্যাদা বা স্বত্ব কেড়ে নিতে দেবে না। আমাদের মাটি মা, মাটি, মানুষের, ঘৃণার উপর ভর করে এমনদের নয়। দিল্লির জমিদারদের এই কথাটি স্পষ্টভাবে শুনতে দিন: বাংলা প্রতিরোধ করবে, বাংলা রক্ষা করবে এবং বাংলা জয়ী হবে।"
মৃতের বাড়ি গিয়ে কথা বলেন মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, বিধায়ক নির্মল ঘোষ-সহ স্থানীয় নেতৃত্ব। গোটা ঘটনা শোনেন এবং ডায়রিতে কী লিখে গিয়েছেন তাও শোনেন। ঘটনাস্থলে যান ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনার মুরলীধর শর্মা-সহ উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা।
