মিল্টন সেন, হুগলি: চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ। বেসরকারি হাসপাতালকে এক লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিল রাজ্য স্বাস্থ্য কমিশন। হুগলির কোন্নগরের বাসিন্দা সঞ্জয় ঘোষ। তিনি পেশায় রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাঙ্কের ম্যানেজার। ২০২৪ সালে ব্যাঙ্কে কাজ করার সময় হঠাৎই অসুস্থতা বোধ করেন সঞ্জয়। তড়িঘড়ি তাঁকে পরিবারের লোকজনের তরফে কলকাতার নামী বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। শুরু হয় চিকিৎসা।
অভিযোগ, সেখানেই চিকিৎসার গাফিলতিতে সঞ্জয়ের কিডনি নষ্ট হয়ে যায়। এমনই অভিযোগ তুলে স্বাস্থ্য কমিশনের দ্বারস্ত হয় পরিবার। চলতি মাসের দশ তারিখে এই ঘটনার রায় দান করে রাজ্য স্বাস্থ্য কমিশন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে এক লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দেয়। যদিও এই ক্ষতিপূরণ নিতে অস্বীকার করেছে সঞ্জয়ের পরিবার।
মা, মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে সঞ্জয়ের সংসার। সঞ্জয়ের স্ত্রী সুমিতা ঘোষ (মুখার্জী) তিনিও সরকারি কর্মচারী। সুমিতা দেবীর অভিযোগ, ২০২৪ সালে জানুয়ারি মাসের ২০ তারিখে স্বামী ব্যাঙ্কে কাজ করার সময় হঠাৎই শারীরিক অসুস্থ বোধ করে। তাঁকে চিকিৎসার জন্য কলকাতার একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যায়। সেখানে যাওয়ার পর দীর্ঘক্ষণ তাঁদের বসিয়ে রাখা হয়। প্রায় চার ঘণ্টা পর এমার্জেন্সিতে নিয়ে যাওয়া হয়।
আরও পড়ুন: পুরনিগমে মেয়রের ঘরের সামনে তাণ্ডব, সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর, চন্দননগরে গ্রেপ্তার চার বিজেপি কর্মী
বেশ কিছু টেস্ট করতে বলা হয়। কিন্তু প্রথমে হার্ট অ্যাটাক করেছে এরকম কিছু বলা হয়নি। কার্ডিয়লজি স্পেশালিস্ট ডক্টর সুনীল বরণ রায়, তিনি সহ আর বেশ কয়েকজন চিকিৎসক তাঁর স্বামীকে দেখেছিলেন। ডাক্তার ভুল চিকিৎসা করেন। তাঁর হার্টের সমস্যা ছিল। চিকিৎসায় কিডনি ড্যামেজ হয়ে যায়। এরপর তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন সঞ্জয়কে ওখানে আর চিকিৎসা করাবেন না। অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া হবে। তখন তাঁরা সঞ্জয়কে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যান।
সেখানে তাঁকে মোট দশটি ডায়ালিসিস নিতে হয়। এবং তার বাঁ হাত অকেজো হয়ে যায়। ঠিকভাবে নাড়াচাড়া করতে পারেন না। কথাও সেভাবে বলতে পারছেন না। এই ভুল চিকিৎসার জন্য তাঁকে সাত মাস আবার চিকিৎসা করাতে হয়। এরপরেই তিনি মেডিক্যাল কমিশনের দ্বারস্থ হন। গত ১০ জুলাই ২০২৫ কমিশন রায় দান করে। এক লক্ষ টাকা জরিমানা দিতে হবে ওই হাসপাতালকে। যদিও তিনি সেই টাকা নিতে ইচ্ছুক নন।
তিনি চান দোষী চিকিৎসক এবং ওই হাসপাতালের বিরুদ্ধে কঠিন কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হোক। প্রথমে যে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল সেই হাসপাতালের চিকিৎসক সুনীল বরন রায়, তিনি হাসপাতালের কাগজে লিখে দিয়ে গেছিলেন ওই ব্যক্তির চিকিৎসা তিনি করতে পারবেন না। মরণাপন্ন অবস্থায় বারবার ওই ডাক্তারের কাছে তিনি আবেদন জানিয়েছেন। তবুও তিনি এসে দেখেননি। তাঁর অনুমান ডাক্তার বুঝতে পেরেছিলেন যে, তিনি ডাক্তার হয়েও ভুল চিকিৎসা করেছেন। তাই তিনি আসছিলেন না। বর্তমানে সঞ্জয় ঠিকভাবে কথা বলতে পারছেন না। তাঁর কথা কিছুটা জড়িয়ে যাচ্ছে।
তবু তিনি বলেন, ভুল চিকিৎসার কারণে তাঁর এত বড় একটা ক্ষতি হয়ে গেল। তাঁর হৃদপিন্ডের সমস্যা থাকলেও কিডনির কোনও সমস্যা ছিল না। এখন তাঁর একটা কিডনি পুরোপুরি অকেজো। ডায়ালিসিসের যে যন্ত্রণা, তা ভাষায় ব্যক্ত করতে পারছেন না। এখনও তাঁর কর্মজীবনের সাত বছর বাকি রয়েছে। আমি অফিসে গিয়ে কোনওরকম কাজ করতে পারছেন না। কারণ তিনি তাঁর হাত ঠিকভাবে নড়াচড়া করতে পারছেন না।
ছবি: পার্থ রাহা
