আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারত ও চীন এই দুই দেশ মিলে বিশ্বের সোনার চাহিদার অর্ধেকেরও বেশি জোগান দেয়। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দামের ওঠানামায় এই দুই দেশের ভূমিকা সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে সোনার দাম রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছলেও আগামী কয়েক সপ্তাহে ধাতুটির চাহিদা শক্তিশালী থাকবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এর মূল কারণ উৎসবের মরশুম, সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট এবং কেন্দ্র সরকারের জিএসটি সংস্কার।


জিএসটি সংস্কারের প্রভাব
কেন্দ্রীয় সরকার সম্প্রতি ১২ শতাংশ ও ২৮ শতাংশের জিএসটি স্ল্যাব বাতিল করেছে। এর ফলে বেশিরভাগ পণ্য ও পরিষেবা এখন ৫ শতাংশ বা ১৮ শতাংশ হারে করযোগ্য হয়েছে। ফলে অনেক জিনিসে কার্যত করের বোঝা কমেছে। এতে সাধারণ মানুষের হাতে খরচ করার মতো অর্থ বাড়বে, যা সোনার মতো ঐতিহ্যবাহী পণ্যের চাহিদা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। ভারতীয় বাজারে সোনার গয়নার ক্রয় বাড়াতে পারে। যদিও তারা সতর্ক করে বলেছে, দামের স্থিতিস্থাপকতা চাহিদার এই বৃদ্ধিকে সীমিত করে দিতে পারে।

আরও পড়ুন: বিশ্বযুদ্ধ-ভূমিকম্প থেকে শুরু করে ভিনগ্রহীদের আগমন, ২০২৬ নিয়ে আর কী জানালেন বাবা ভাঙ্গা


আন্তর্জাতিক ও দেশীয় বাজার
আগস্ট মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম প্রতি আউন্সে ৩,৪২৯ মার্কিন ডলারে বন্ধ হয়েছে। এক মাসে ৩.৯ শতাংশ বেড়েছে দাম, আর বছরের হিসাবে এই বৃদ্ধির হার ৩৫ শতাংশেরও বেশি। ভারতের সোনা বাজার আন্তর্জাতিক মানের তুলনায় আরও শক্তিশালী। কারণ এখানে বিনিয়োগের পাশাপাশি গৃহস্থালি ভোগও সমানভাবে সোনার চাহিদা বাড়ায়।


ভারতের মাল্টি-কমোডিটি এক্সচেঞ্জ-এ বর্তমানে সোনার দাম ১০ গ্রামে প্রায় ১,০৯,০০০ টাকা। বিশ্লেষকরা বলছেন, উৎসব ও বিয়ের মরশুমের চাহিদা, তার সঙ্গে জিএসটি সংস্কার মিলে দাম আরও বাড়তে পারে।


সাংস্কৃতিক কারণ ও উৎসবের প্রভাব
ভারতীয় পরিবারে সোনা কেনার সঙ্গে উৎসব, বিয়ে এবং বিশেষ উপলক্ষ জড়িয়ে আছে। সোনা কেবল অলঙ্কার বা বিনিয়োগ নয়, অনেকের কাছে এটি ঐতিহ্যের প্রতীক। দীপাবলি, দুর্গাপুজো বা বিবাহের সিজনে সোনা কেনা প্রায় রীতি। ফলে এই সময়ে দাম যতই বাড়ুক না কেন, চাহিদা মোটেই কমে না।


বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ২০২৬ সালের মধ্যে সোনার দাম ভারতে ১,২৫,০০০ টাকা অতিক্রম করতে পারে। বিশেষত যদি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ এবং গৃহস্থালির চাহিদা একইভাবে শক্তিশালী থাকে।


ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
স্বল্পমেয়াদে বাজারে দামের ওঠানামা থাকলেও দীর্ঘমেয়াদে সোনা আরও ঊর্ধ্বমুখী হবে বলে আশা করা হচ্ছে। মাঝেমধ্যে সংশোধনের সময় আসতে পারে। তবে সামগ্রিকভাবে সোনার ঝলকানি আগামী বছরগুলোতে অটুট থাকবে। সব মিলিয়ে, জিএসটি সংস্কারের কারণে মানুষের হাতে অতিরিক্ত অর্থ, সাংস্কৃতিক গুরুত্ব ও উৎসবের মরশুমের খরচ মিলিয়ে সোনার বাজারে আবারও বাড়তে চলেছে চাহিদা। দাম যতই বাড়ুক না কেন, ভারতীয় ক্রেতার কাছে সোনা এখনও অমূল্য ঐতিহ্য ও ভবিষ্যতের সুরক্ষা।