আজকাল ওয়েবডেস্ক: দীপাবলি কেটে গিয়েছে। আর এরপরই কর্মচারী ভবিষ্যনিধি সংস্থা-র সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ট্রাস্টিজ কর্মচারী পেনশন স্কিম-এর সদস্যদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ নতুন বিধান ঘোষণা করেছে। এই পদক্ষেপের ফলে অধিকাংশ সদস্যই আর পেনশন থেকে বঞ্চিত হবেন না, বরং অবসরকালীন সময়ে আরও বেশি অর্থ হাতে পাবেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক, কীভাবে এই নতুন নিয়মগুলো ইপিএফ সদস্যদের পেনশন পাওয়ার যোগ্যতা ও প্রভিডেন্ট ফান্ডের পরিমাণ বাড়াবে।
বর্তমান পরিস্থিতি
বর্তমানে অনেক ইপিএফও সদস্যই কর্মচারী পেনশন স্কিম (EPS)-এর আওতায় খুবই কম বা কোনও পেনশন পান না। একইভাবে, অবসরের পর তাঁদের ইপিএফ অ্যাকাউন্টেও টাকার পরিমাণ খুব কম থাকে। এর প্রধান কারণ কয়েকটি হল—
চাকরিজীবনের সময় সদস্যরা বিভিন্ন প্রয়োজনে বারবার টাকা তোলেন, ফলে অবসরের সময় তাঁদের অ্যাকাউন্টে খুব সামান্য পরিমাণ অর্থ থাকে।
ঘন ঘন টাকা তোলার কারণে ৮.২৫% হারে যে সুদের উপর চক্রবৃদ্ধি সুবিধা পাওয়া যায়, তা থেকেও তাঁরা বঞ্চিত হন।
অনেকে ১০ বছরের ন্যূনতম চাকরির যোগ্যতা পূরণ করতে পারেন না, ফলে তাঁরা পেনশনের জন্য অযোগ্য হয়ে পড়েন।
চাকরি হারালে অনেকেই EPS অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে নেন, ফলে তাঁদের মৃত্যু হলে পরিবারের সদস্যরা পেনশন সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন।
আরও পড়ুন: বিশ্বের এই দেশকে বলে ‘সাত পাহাড়ের শহর’, কারণ জানলে আকাশ থেকে পড়বেন
নতুন নিয়ম অনুযায়ী কী পরিবর্তন আসছে
পরিষেবা চলাকালীন ২৫% উত্তোলন বন্ধ:
এখন থেকে চাকরিজীবনের সময় ইপিএফ সদস্যরা তাঁদের অ্যাকাউন্টের ২৫% টাকা তুলতে পারবেন না। এর ফলে অবসরের সময় তাঁদের হাতে থাকবে একটি সম্মানজনক পরিমাণ ভবিষ্যনিধি।
চাকরি হারালে আংশিক উত্তোলনের সুবিধা:
চাকরি হারালে সদস্যরা ইপিএফ অ্যাকাউন্ট থেকে ৭৫% অর্থ সঙ্গে সঙ্গে তুলতে পারবেন এবং বাকি ২৫% এক বছর পরে। যদি সদস্য সেই এক বছরের মধ্যে নতুন চাকরি পান, তাহলে পূর্ববর্তী অ্যাকাউন্টে নতুন নিয়োগকারীর অবদান যোগ হতে থাকবে।
ইপিএফও-র ভাষায়, “বেকারত্বের ক্ষেত্রে মোট ব্যালান্সের ৭৫% (কর্মচারী ও নিয়োগকর্তার অংশসহ সুদ) সঙ্গে সঙ্গে তোলা যাবে, বাকি ২৫% এক বছর পরে।”
জরুরি পরিস্থিতিতে পুরো উত্তোলনের সুযোগ:
অবসর (৫৫ বছর পর), স্থায়ী অক্ষমতা, স্বেচ্ছাবসর, বা বিদেশে স্থায়ীভাবে চলে যাওয়ার ক্ষেত্রে সদস্যরা তাঁদের সম্পূর্ণ ফান্ড তুলতে পারবেন, কোনো প্রশ্ন ছাড়াই।
দীর্ঘমেয়াদি পেনশন যোগ্যতার উৎসাহ:
নতুন নিয়ম অনুযায়ী, এখন থেকে সদস্যরা চাকরি হারানোর ৩৬ মাস (আগে ২ মাস ছিল) পরেই EPS অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলতে পারবেন।
ইপিএফও-র তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ৭৫% সদস্য তাঁদের পেনশন অ্যাকাউন্ট থেকে ৪ বছরের মধ্যেই টাকা তুলে ফেলেন, ফলে তাঁরা ১০ বছরের আগে সদস্যপদ হারিয়ে ফেলেন এবং পেনশন সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন।
নতুন বিধানটি সদস্যদের পেনশন যোগ্যতা পূরণে উৎসাহিত করবে এবং তাঁদের পরিবারের জন্যও মৃত্যুর পর তিন বছর পর্যন্ত পেনশন সুবিধা নিশ্চিত করবে, যদি অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ না তোলা হয়।
ইপিএফও জানিয়েছে, “এই পরিবর্তনের ফলে সদস্য ও তাঁদের পরিবার দীর্ঘমেয়াদে সামাজিক সুরক্ষা ও পেনশনের সুবিধা পাবে।” ইপিএফও-র এই নতুন নিয়মগুলি মূলত সদস্যদের দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে গৃহীত হয়েছে। একদিকে পেনশন পাওয়ার যোগ্যতা বাড়বে, অন্যদিকে অবসরের সময় হাতে থাকবে বেশি টাকাও।
