আজকাল ওয়েবডেস্ক: কিছুদিন আগে আমার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু আমাকে জিজ্ঞেস করল, আমি কি আমার টাকা সেভিংস অ্যাকাউন্টে রাখব, নাকি SIP শুরু করব? আমি হাসলাম। প্রশ্নটা সহজ মনে হলেও, এর ভেতরে লুকিয়ে আছে ভারতীয় অর্থনীতির এক গভীর পরিবর্তনের ইঙ্গিত। দশকের পর দশক ধরে ব্যাঙ্কই ছিল আমাদের সঞ্চয়ের প্রধান ঠিকানা। উপার্জনের প্রতিটি টাকা, বাড়তি যেকোনও অর্থ সবার আগে জায়গা করে নিত সেভিংস অ্যাকাউন্ট বা ফিক্সড ডিপোজিটে। 


আজ সেই আধিপত্য চ্যালেঞ্জের মুখে। আর যিনি এই চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন, তিনি কেউ সাধারণ ব্যক্তি নন—তিনি মিউচুয়াল ফান্ড। এটি কোনও হালকা প্রতিযোগিতা নয়, বরং এটি এক বৃহৎ লড়াই। ভারতের ঘরোয়া সঞ্চয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে এক গঠনমূলক যুদ্ধ।

আরও পড়ুন:  নিজের গ্র্যাচুইটি এখনই বুঝে নিন, জেনে নিন কী নিয়ম রয়েছে


ভারতের মিউচুয়াল ফান্ড ইন্ডাস্ট্রির AUM ৭৫ লাখ কোটি টাকার গণ্ডি পেরিয়ে গেছে। SIP -এর মাধ্যমে আসা টাকা শুধু স্থিতিশীলই নয় বরং প্রতি মাসে নতুন নতুন রেকর্ড গড়ছে। এর বিপরীতে, ব্যাঙ্কের ফিক্সড ডিপোজিট এবং সেভিংস অ্যাকাউন্টে নতুন টাকা তোলা দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে।
২০১৯ সালে ভারতে AMC ছিল ৪১টি, যা এখন বেড়ে ৫০ হয়েছে। প্রতিটি সংস্থা যেন এই নতুন আর্থিক সেনাবাহিনীর একজন সৈনিক। এটি একটি স্পষ্ট বার্তা যে, বিনিয়োগকারী এবং উদ্যোক্তারা কোথায় সম্ভাবনা দেখছেন। সম্প্রতি, একটি বড় প্রাইভেট ব্যাঙ্ক তাদের সেভিংস অ্যাকাউন্টের মিনিমাম ব্যালেন্স বাড়ানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু গ্রাহকদের প্রবল আপত্তিতে সেই সিদ্ধান্ত ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হয়। বার্তা ছিল পরিষ্কার: আমাদের উপেক্ষা কর না। যখন বিকল্প মাধ্যমে সুদের হার দ্বিগুণ বা তারও বেশি কম্পাউন্ড হয়ে ফেরত আসছে, তখন ৩–৪% সুদের সেভিংসে কেউ টাকা রাখতে চায় না।


যদি ভাবেন এটি শুধু ভারতের গল্প, তবে ভুল করছেন। আমেরিকার দিকে তাকান। এপ্রিল ২০১৯-এ, ইউএস মিউচুয়াল ফান্ড পরিচালিত সম্পদের পরিমাণ ছিল 16,700 বিলিয়ন, যা তখনকার ব্যাঙ্কে থাকা 12,700 বিলিয়নের চেয়েও বেশি। এপ্রিল ২০২৫-এ, এই পরিমাণ বেড়ে হয়েছে 21,200 বিলিয়ন, যেখানে ব্যাঙ্ক ডিপোজিট 18,000 বিলিয়নে পৌঁছেছে। 


২০১৯ সালে ব্যাঙ্ক ডিপোজিট ছিল ১২৬ লাখ কোটি, যেখানে মিউচুয়াল ফান্ডের AUM ছিল ২৪ লাখ কোটি অর্থাৎ ব্যাঙ্ক ডিপোজিটের মাত্র ১৯%। ২০২৫ সালে, মিউচুয়াল ফান্ড AUM বেড়ে ৭৫ লাখ কোটিতে পৌঁছেছে। এখন এটি ব্যাঙ্ক ডিপোজিটের প্রায় ৩২%। ব্যবধান দ্রুত কমছে।


ব্যাঙ্কগুলি কি তবে হারিয়ে যাবে?
তা না হলেও তারা আজ ভুল দিকের দণ্ডে দাঁড়িয়ে আছে। ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্র স্বভাবতই নতুনত্বে ধীর। নিয়মনীতি, পুরনো সিস্টেম ও অতিরিক্ত সতর্কতার সংস্কৃতি তাদের পরিবর্তনে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।


অন্যদিকে, মিউচুয়াল ফান্ড ব্যবসা চলে দ্রুততা, স্বচ্ছতা ও ডিজিটাল সুবিধার মাধ্যমে। তারা তরুণদের কল্পনা এবং প্রবীণদের বিশ্বাস জয় করছে। এই পরিবর্তনের প্রভাব শুধু বিনিয়োগকারীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এর মাধ্যমে তৈরি হচ্ছে এক নতুন ইকোসিস্টেম—AMCs, মিউচুয়াল ফান্ড ডিস্ট্রিবিউটর, টেক পার্টনার, RTA, এবং অ্যাডভাইজাররা।