আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এখন ব্যাঙ্ক আমানতকে ডিজিটাল টোকেনে রূপান্তর করার জন্য একটি বড় পদক্ষেপ করছে। আরবিআই শীঘ্রই "আমানত টোকেনাইজেশন"-এর জন্য একটি পাইলট প্রকল্প চালু করবে। প্রাথমিকভাবে এই পরীক্ষাটি নির্বাচিত ব্যাঙ্কগুলির মাধ্যমে পরিচালিত হবে। ধারণা করা হচ্ছে যে, এই প্রক্রিয়া ব্যাঙ্কিং লেনদেনকে দ্রুত এবং আরও নিরাপদ করবে।

আরবিআই-এর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এই তথ্য প্রদান করেছেন। তিনি ব্যাখ্যা করেছেন যে, ডিপোজিট টোকেনাইজেশন মানে ব্যাঙ্ক আমানতকে ডিজিটাল টোকেনে রূপান্তর করা, যা ব্লকচেনে নিরাপদে সংরক্ষণ করা হবে। এই টোকেনগুলির মূল্য প্রকৃত আমানতের সমান হবে এবং ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার মধ্যে অর্থপ্রদান, স্থানান্তর এবং নিষ্পত্তির জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।

নিরাপত্তা মান তৈরি করা হয়েছে
এই উদ্যোগের লক্ষ্য হল, ভবিষ্যতের ডিজিটাল ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করা। আরবিআই কর্মকর্তা আরও বলেছেন যে, টোকেনাইজেশন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এবং বৈধতা অপরিহার্য। সংশ্লিষ্ট ঝুঁকিগুলি সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রিত, এবং আরবিআই প্রয়োজনীয় সুরক্ষা মান প্রতিষ্ঠা করেছে।

২০২২ সালে ডিজিটাল মুদ্রা চালু হয়েছে
সরকারি সিকিউরিটিজ লেনদেন ডিজিটাইজ করার জন্য রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এর আগে ১ নভেম্বর, ২০২২ তারিখে তার ডিজিটাল মুদ্রার পাইলট প্রকল্প চালু করেছিল। এরপর ১ ডিসেম্বর, ২০২২ তারিখে খুচরা পাইলট প্রকল্প শুরু হয়েছিল, যা ব্যক্তি-থেকে-ব্যক্তি এবং ব্যক্তি-থেকে-ব্যবসায়িক লেনদেনকে সহজতর করেছিল। ২০২৪ সালের মার্চ মাসের মধ্যে, খুচরা ডিজিটাল মুদ্রার ব্যবহার ছয় কোটি থেকে বেড়ে ২৩৪ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছিল, যা ডিজিটাল মুদ্রার প্রতি ক্রমাগত ক্রমবর্ধমান আস্থা প্রদর্শন করে।

এই প্রকল্পের সঙ্গে সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

১. ডিজিটাল টোকেনাইজেশন কী?
এর অর্থ হল একটি প্রকৃত সম্পদ (যেমন একটি ব্যাঙ্ক আমানত, শেয়ার, বন্ড ইত্যাদি) একটি ডিজিটাল টোকেনে রূপান্তর করা যাতে এটি ব্লকচেনে নিরাপদে সংরক্ষণ করা যায়।

২. এটি কীভাবে ব্যবহার করা হবে?
এই টোকেনগুলি দ্রুত অর্থ স্থানান্তর এবং বিভিন্ন ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার মধ্যে লেনদেন নিষ্পত্তির জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।

৩. জনসাধারণ কী সুবিধা পাবে?
এই পরিকল্পনা লেনদেনকে দ্রুত, সস্তা এবং নিরাপদ করবে। এটি ব্যাঙ্কিং প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করবে এবং জালিয়াতির সম্ভাবনা হ্রাস করবে। ভবিষ্যতে এই পরিকল্পনা সফল হলে, গ্রাহকরা তাদের আমানত, বিনিয়োগ, অথবা সরকারি বন্ড ডিজিটাল টোকেন হিসেবে রাখতে পারবেন।

৪. আরবিআই কোন প্রযুক্তি ব্যবহার করবে?
কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক এই পাইলট প্রকল্পে তার সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক ডিজিটাল কারেন্সি (সিবিডিসি)-এর পাইকারি অংশ ব্যবহার করবে। এটি একই প্রযুক্তি, ব্লকচেন-ভিত্তিক, যা ব্যাঙ্ক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বৃহৎ লেনদেন নিষ্পত্তি করতে ব্যবহৃত হয়।

৫. এই প্রযুক্তি কতটা নিরাপদ?
এই প্রযুক্তির সাহায্যে, সমস্ত লেনদেন ব্লকচেনে রেকর্ড করা হবে, ত্রুটি বা নকল লেনদেন রোধ করা হবে।

৬. এটি কি ডিজিটাল মুদ্রার (সিবিডিসি)-এর মতো পরিকল্পনা?
না, এটি ভিন্ন। সিবিডিসি হল একটি ডিজিটাল মুদ্রা যা সাধারণ মানুষ ব্যবহার করতে পারে, অন্যদিকে ডিপোজিট টোকেনাইজেশন ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার মধ্যে আমানতকে ডিজিটাল আকারে রূপান্তর করতে ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি ব্যাঙ্কিং লেনদেনকে নিরাপদ করবে।

৭. পাইলট প্রকল্প?
আরবিআই আজ, ৮ অক্টোবর এই পাইলট প্রকল্পটি চালু করছে। প্রাথমিকভাবে, এটি নির্বাচিত ব্যাঙ্কগুলিতে পরীক্ষামূলকভাবে পরিচালিত হবে। সফল হলে, ভবিষ্যতে এটি আরও বৃহত্তর পরিসরে বাস্তবায়িত হতে পারে।

৮. ব্লকচেইন প্রযুক্তি কী?
এটি একটি ডিজিটাল প্রযুক্তি যেখানে সমস্ত লেনদেন একটি ডিজিটাল রেজিস্টার ফর্ম্যাটে রেকর্ড করা হয়। প্রতিটি নতুন লেনদেন একটি ব্লক হিসাবে যুক্ত করা হয়, তাই এর নাম "ব্লকচেন"। এর অনন্য বৈশিষ্ট্য হল, কোনও রেকর্ড পরিবর্তন বা মুছে ফেলা যায় না। ডেটা সম্পূর্ণ সুরক্ষিত থাকে। এটা লঙ্ঘন করা  কার্যত অসম্ভব।

আরও পড়ুন- ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা না থাকলেও করা যাবে ইউপিআই পেমেন্ট, জানুন কীভাবে?