বিনোদন জগতের সুপরিচিত অভিনেতা ইউ মেংলং-এর আকস্মিক ও মর্মান্তিক মৃত্যু ঘিরে যে রহস্য এবং বিতর্ক দানা বেঁধেছিল, তা দ্রুতই সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসে। গত ১১ই সেপ্টেম্বর বেইজিংয়ের একটি আবাসিক ভবনের উঁচু স্থান থেকে পড়ে যাওয়ার পরই অভিনেতার মৃত্যু হয়। এই ঘটনাটি অপ্রত্যাশিতভাবে তাঁর অনুরাগীদের মধ্যে গভীর শোক ও জল্পনার সৃষ্টি করে।

 

 

প্রাথমিকভাবে, পুলিশ তাঁর মৃত্যুকে একটি দুর্ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত করে। কিন্তু, জনপ্রিয় অভিনেতার এমন রহস্যজনক পরিণতি মেনে নিতে পারেননি নেটিজেনরা। অতি দ্রুত অনলাইনে এই মৃত্যুর কারণ নিয়ে নানা ধরনের গুজব ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। অনেকে এটিকে নিছক দুর্ঘটনা মানতে নারাজ হয়ে 'ফাউল প্লে' বা অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত দিতে থাকেন। 

 


এই জল্পনাগুলির মধ্যে সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর ছিল আক্রমণের দাবি। নেটিজেনরা দাবি করে পোস্ট করতে থাকেন যে, মৃত্যুর আগে ইউ মেংলং-কে নাকি শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছিল, জোর করে মদ্যপান করানো হয়েছিল এবং সম্ভবত চরম হতাশায় তিনি ঝাঁপ দিয়েছিলেন, অথবা তাঁকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়া হয়েছিল।

 

 

এই গুজবগুলি এতটাই ভয়াবহ রূপ নেয় যে, কিছু ব্যক্তি সোশ্যাল মিডিয়ায় চরম নৃশংসতার কাল্পনিক বিবরণ প্রচার করতে শুরু করে। এক অভিযোগে বলা হয়, একজন 'বড় মাপের ব্যক্তি' অভিনেতার উপর সুবিধা নিতে চেয়েছিলেন এবং কিছু লোক তাঁকে ফাঁদে ফেলেছিল। এরপর তাঁকে মদ্যপানে বাধ্য করা হয়, মারধর করা হয় এবং অবশেষে তিনি হতাশা থেকে লাফ দেন। অন্য এক নেটিজেন দাবি করেন যে, মেংলং-কে নাকি উঁচু বিল্ডিং থেকে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তাঁর নখ উপড়ে ফেলা হয়েছিল এবং পেটে ছুরি দিয়ে আঘাত করার পর ফেলে দেওয়া হয়েছিল—যদিও এই সমস্ত তথ্য পরে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে প্রমাণিত হয়। 

 

 

আরও পড়ুন: 'সুলতান' থেকে 'বজরঙ্গি ভাইজান' সবেতেই 'না' বলেছেন! সলমনের নায়িকা হতে কেন চান না দীপিকা?

 

এই সমস্ত জল্পনা যখন বেইজিংয়ের জনজীবন ও সোশ্যাল মিডিয়ার শান্তি বিঘ্নিত করছিল, তখন মেংলং-এর পরিবার পরিস্থিতি স্পষ্ট করতে এগিয়ে আসেন। তাঁর মৃত্যুর পাঁচ দিন পর ১৬ই সেপ্টেম্বর অভিনেতার ম্যানেজমেন্ট দল সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম উইবো-তে ইউ মেংলং-এর মায়ের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে।

 

 


তাঁর মায়ের সেই হৃদয়বিদারক বার্তায় বলা হয়, 'সাম্প্রতিক দিনগুলিতে আমি তীব্র ব্যথা ও দুঃখের অভিজ্ঞতা লাভ করেছি। কারণ আমার ছেলে মেংলং মদ্যপান করার পর একটি উঁচু স্থান থেকে পড়ে গিয়ে চিরতরে আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছে।' তিনি নিশ্চিত করেন যে, এটি একটি দুর্ভাগ্যজনক দুর্ঘটনা ছিল। তিনি আরও জানান যে, কর্তৃপক্ষ ঘটনার তদন্ত করেছে এবং তাঁদের তদন্তের ফলাফল তাঁকে অবহিত করা হয়েছে। তিনি জনসাধারণের প্রতি অনুরোধ জানান যেন তাঁরা এই মর্মান্তিক ঘটনাকে যুক্তিযুক্তভাবে দেখে এবং আর কোনও জল্পনা না ছড়ায়। যাতে পরিবার কিছুটা হলেও শান্তি ফিরে পেতে পারে।

 

 


গুজব ও মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর গুরুতর প্রভাবের পরিপ্রেক্ষিতে বেইজিং পুলিশও কড়া পদক্ষেপ নেয়। পুলিশ জানায়, মেংলং-এর মাদক সেবনের পর আকস্মিক পতনের পরপরই তারা তদন্ত শুরু করে। ঘটনাস্থল পরীক্ষা, ফরেনসিক পরীক্ষা, সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা এবং সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশ নিশ্চিত করে যে, এই ঘটনায় কোনও ধরনের অপরাধমূলক সন্দেহ নেই।
এরপর পুলিশ তিনটি ভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তিনজন ব্যক্তিকে আটক করে। তাঁদের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য ও ভুয়ো ভিডিও তৈরির অভিযোগ আনা হয়, যা নেটমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে জনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত করছিল। আটককৃতরা স্বীকার করে যে তারা মনোযোগ আকর্ষণ এবং নিজেদের প্ল্যাটফর্মে ট্র্যাফিক বাড়ানোর জন্য এই সমস্ত মিথ্যা গুজব তৈরি করেছিল।

 

 

শেষ পর্যন্ত, ইউ মেংলং-এর মৃত্যুটিকে পুলিশ একটি দুর্ভাগ্যজনক দুর্ঘটনা হিসাবেই নিশ্চিত করে। তবে এই ঘটনা দেখিয়ে দেয় যে, কীভাবে একজন তারকার মৃত্যুর মতো সংবেদনশীল মুহূর্তে সোশ্যাল মিডিয়ায় যাচাইবিহীন গুজব ও ষড়যন্ত্র তত্ত্বে ভরে উঠতে পারে।