রবিবার ২রা নভেম্বর ৯০-তে পা দিলেন সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে এইমুহূর্তে তাঁকে বাংলা সাহিত্যের জীবন্ত কিংবদন্তি বললে পাঠকমহলেরর তরফে যে কোনও আপত্তি আসবে না সে কথা হলফ করেই বলা যায়। বেশ দেরি করেই লেখক জীবন শুরু তাঁর। যদিও সাহিত্য চর্চা ছিল ছোট থেকেই। তাই তো ‘ঘুণপোকা’ প্রকাশিত হওয়ার পরপরই নড়েচড়ে বসেছিল বাংলার সাহিত্যমহল। বোঝা গেছিল, খাতায় কলমে প্রথম উপন্যাস হলেও জাত লেখক ছাড়া এ জাতীয় রচনা সম্ভব নয়।সবরকম পাঠকদের মধ্যে সে উপন্যাস দারুণ সাড়া জাগাতে না পারলেও একটু বিদগ্ধ, উচ্চাঙ্গ পাঠকশ্রেণীর কাছে দারুণভাবে গৃহীত হয়েছিল ‘ঘুণপোকা’ উপন্যাস। খ্যাতির মধ্যগগনে থেকেও নাম, যশ, অর্থ কোনওদিনই প্রলুব্ধ করেনি বাঙালির এই প্রিয় লেখককে। আজকাল ডট ইন-কে শীর্ষেন্দু জানিয়েছেন, নতুন একটি উপন্যাস লেখার প্লট মাথায় ঘুরছে তাঁর। আর 'বার্থ ডে রেজোলিউশন'? এক গাল হেসে লেখকের সাফ জবাব, “জীবনে এত কিছু পেয়েছি না চাইতেই যে আমার চাওয়ার আর কিছুই নেই। সেসব না পেলেও আমার চলত। তবু পেয়েছি। বিশেষ করে অসংখ্য পাঠকের ভালবাসা, আশীর্বাদ। বাকি জীবনটা তাতেই দিব্যি কেটে যাবে।”

 

 

 

অভিনেতা রাহুল অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাহিত্যের প্রতি ঝোঁকের কথা আজ আর কারও কাছে অজানা নয়। অভিনয়ের পাশাপাশি সমানতালে চলে তাঁর লেখালিখি। এবং সেসব যথেষ্ট সমাদৃত পাঠক ও সমালোচক- দুই মহলেই। অভিনেতার প্রিয় সাহিত্যিকদের তালিকায় একেবারে উঁচুতে রয়েছেন শীর্ষেন্দু। শুধুই তাঁর লেখা নয়, তাঁর লেখা থেকে তৈরি হওয়া একাধিক ছবিতে অভিনয়ও করেছেন রাহুল। বাংলা সাহিত্যের এই জনপ্রিয় লেখক তাঁর কাছে ‘জেঠু’। এদিন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের জন্মদিনে তাঁর লেখা, তাঁকে নিয়ে নানান রঙের ভাবনা আজকাল ডট ইন-এর সঙ্গে ভাগ করে নিলেন এই দর্শকপ্রিয় অভিনেতা। 

 

 

 

“আমাদের প্রজন্মের কাছে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় এক বিস্ময়। উনি যে যে বিষয় নিয়ে লেখা লিখেছেন, সেই বিষয়গুলো ভাবলেই চমকে উঠতে হয়। এত ভার্সেটাইল লেখা, এত রকমের লেখা লিখেছেন, লিখতে পারেন উনি, ভাবলে বিস্ময় জাগা ছাড়া আর কোনও উপায় থাকে না। ওঁর প্রথম উপন্যাস ‘ঘুণপোকা’-র কথাই ধরা যাক। এক অবসাদগ্রস্থ মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি ধরে এগিয়েছে সেই উপন্যাস...এরকম দৃষ্টিভঙ্গি থেকে যে একটা আস্ত উপন্যাস হতে পারে, কেউ ভাবতে পেরেছিল কখনও? আবার চক্র উপন্যাস শুরুই হচ্ছে একটা সাপের শীতঘুম ভাঙা থেকে! আবার ‘দূরবীন’ উপন্যাসের প্রতিটি অধ্যায় আলাদা আলাদা প্রজন্মের। এছাড়াও মনে আসছে ‘মানবজমিন’, ‘পার্থিব’, ‘যাও পাখি’ উপন্যাসের নাম...কত বলব। বাংলা সাহিত্যের এক-একটি রত্ন বলা যায় ওঁর এই উপন্যাসগুলোকে। এছাড়া বলতেই হবে শিশু-কিশোর সাহিত্যে ওঁর অবদানের কথা। আমাদের প্রজন্মের বড় হওয়াটাই তো ওঁর লেখা ‘মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি’, ‘গোঁসাইবাগানের ভূত’, ‘নবীগঞ্জের দৈত্য’-র মতো অদ্ভুতুড়ে উপন্যাসগুলো পড়ে।” 

 

সামান্য থেমে তিনি আরও বলেন, “আমি ওঁকে জেঠু বলে ডাকি। ওঁর কাছে যতবার যাই, বোবা হয়ে যাই। আর জেঠু যেদিন আমার লেখা পড়ে বলেছিল, ‘তুমি খুব ভাল লেখো’, সেই রাতে আমার ঘুম হয়নি আনন্দে!” রাহুলের লেখায় কি শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের প্রভাব এসেছে? সঙ্গে সঙ্গে জবাব ভেসে আসে, “সেকথা হলফ করে আমি বলতে পারব না। রক্তস্রোতের মধ্যে মিশে গিয়েছেন উনি। শুধু উনি-ই না, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, সৈয়দ মুজতবা আলী, নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় - নিজের মধ্যে এঁদেরকে নিয়ে এমনভাবে ঘরে করেছি যে বুঝে উঠতে পারি না যে ওঁরা আমাকে লিখতে  কতটা, কীভাবে, কোন কোন জায়গায় প্রভাবিত করেছে।”

 

এরপর আলোচনা ফের ফিরল শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়তে। “শীর্ষেন্দুর নায়কের সঙ্গে না নিজের খুব মিল খুঁজে পাই। কেমন চেনা চেনা লাগে। আসলে, শীর্ষেন্দুর নায়ক খুব চৌখস নয়। একটু ভীতু, কেমন মাঝে মাঝে হেরেও যায়, তার খিদে পেলে সে ভুল করে, মিথ্যা কথা বলে। তাই শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের লেখা উপন্যাস অবলম্বনে ‘কাগজের বউ’ ছবিতে মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করতে পেরে খুব খুশি হয়েছিলাম, তৃপ্তি পেয়েছিলাম” সাফ কথা রাহুলের!  

 


কথা শেষে বর্ষীয়ান সাহিত্যিককে শুভেচ্ছা জানাতে অবশ্য ভুললেন না রাহুল – “শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়-এর আজ ৯০-এর কোঠায় পা রাখলেন। আরও একটা ৯০ হোক, সেটা দেখতে চাই। জেঠু এখনও সুস্থ আছেন, নিয়মিত হাঁটাচলা করছেন, ট্যাব-এ লিখছেন...কর্মক্ষম আছেন! উনি এরকমই থাকুন। আর কী চাই?”  কোনও অদ্ভুতুড়ে উপন্যাসের আবদার করবেন না জেঠুর কাছে? প্রশ্ন শোনামাত্রই হেসে ফেললেন অভিনেতা। তারপর বললেন, “সবারই তো একটা সময়ের পর একটু জিরোতে ইচ্ছে করে। যেদিন ওঁর মনে হবে, সেদিন লিখবেন। আর অনেক তো সেবা করলেন উনি আমাদের পাঠকদের, বাংলা সাহিত্যের। এবার বরং আমরা করি ওঁর একটু সেবা।”