সংবাদ সংস্থা মুম্বই: ৪৬ বছর বয়স! শুনলেই চোখ কপালে তুলবেন অনেকেই, কারণ সম্প্রতি প্রকাশিত একটি ম্যাগাজনেরন প্রচ্ছদে যেভাবে ধরা দিলেন, নিজেকে মেলে ধরলেন অভিনেত্রী বিদ্যা বালান, তা দেখে নেটপাড়া বাকরুদ্ধ। এই কভার শুটে বিদ্যাকে দেখা গেল এক চোখ ঝলসে দেওয়া লুকে—গাঢ় লাল গাউনে, ডিপ নেকলাইনে, হালকা গয়না, আর নতুন হেয়ারস্টাইলে যেন সময়কে পিছিয়ে দিলেন তিনি!
“যে ঝড়কে উপেক্ষা করা যায় না” — ঠিক যেমন তিনি বরাবরই ছিলেন, একজন নারী অভিনেত্রী যিনি পুরুষ-নিয়ন্ত্রিত ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের আলাদা জায়গা করে নিয়েছেন, বারবার।এই ছবির মাধ্যমে যেমন বিদ্যার গ্ল্যামারাস রূপের পুনরাবিষ্কার হল, তেমনি উঠে এল আলোচনা এবং বিতর্কের ঝড়।
ইনস্টাগ্রামে পোস্ট হওয়ার পর থেকেই কমেন্ট বক্স ভরে উঠেছে প্রশংসায়— “ওহ বাপ্ রে! কী লাগছে বিদ্যাকে!”, “এরকম আরও লুক বিডিআর ট্রাই করা উচিত!” “ চেহারা থাকুক ন্যাচারাল কিন্তু মুখেচোখে ফিলার্স ব্যবহৃত হোক। পার্ফেক্ট সৌন্দর্য!” কেউ কেউ বলেন, “বর্তমান নেপোটিজম তারকারা বিদ্যার থেকে স্টাইলিং টিপস নিক, সবাই তো দেখতে একই রকম!”
তবে এর মধ্যেই দেখা গেল একাংশের কটাক্ষও। পাশাপাশি উঠেছে সমালোচনার ঝড়ও - ‘বডি পজিটিভিটি’র আদর্শ কি বদলে গেল?’ কেউ কেউ বিদ্যার অতীত মন্তব্য টেনে আনলেন— “একসময় বলতেন, মেয়েদের মোটা শরীরই আসল আকর্ষণ, এখন নিজেই কমিয়ে ফেললেন!”
“বডি পজিটিভিটির মুখ হয়ে এমন ট্রান্সফর্মেশন? কী বলব এখন…”অনেকে এটাকে দ্বিচারিতা বলেও ব্যাখ্যা করেছেন—যদিও অভিনেত্রী নিজে এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি।
?utm_source=ig_embed&utm_campaign=loading" target="_blank" rel="noopener">A post shared by The Peacock Magazine (@thepeacockmagazine_)
বিদ্যার সাম্প্রতিক কাজ কিন্তু সাফল্য ও প্রশংসায় ভরপুর। বিদ্যাকে শেষ দেখা গিয়েছে ‘ভুলভুলাইয়া ৩’-তে, যেখানে কার্তিক আরিয়ান ও মাধুরী দীক্ষিতের সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করেন তিনি। বক্স অফিসে ৪০০ কোটিরও বেশি আয় করে ছবিটি। তার আগেই প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন ‘দো আর দো প্যায়ার’ ছবিতে, যেখানে প্রতীক গান্ধী, ইলিয়ানা ডি’ক্রুজ এবং সেন্ধিল রামামূর্তির সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন।
ম্যাগাজিন কভার হোক বা সিনেমার চরিত্র—বিদ্যা জানেন কীভাবে আলোচনার কেন্দ্রে থাকতে হয়। বয়স শুধু সংখ্যা, আর গ্ল্যামার? সেটা তো মন আর মেজাজের ব্যাপার।
সম্প্রতি, বিদ্যা বালন নিজেই তুলে ধরলেন সেই দুঃসহ অতীত, যেখানে তাঁকে বলা হত 'অপয়া' .আর সেই অপবাদে বিদ্ধ হয়ে বাদ পড়তেন একের পর এক ছবি থেকে! বিদ্যা শোনান, কীভাবে দক্ষিণের একটি প্রজেক্ট ‘চক্রম’-এর হাত ধরে ফিল্মি সফর শুরু হলেও, সেটা কীভাবে এক বিভীষিকাময় অধ্যায়ে পরিণত হয়।একটি বিজ্ঞাপনের কাজ করতে গিয়ে দক্ষিণ ভারতে গিয়েছিলেন বিদ্যা, আর সেখানেই চলছিল মোহনলালের 'চক্রম' ছবির অডিশন। তাঁকে ডাকা হয় অডিশনের জন্য, এবং তিনি জানালেন—“মা বলেছিলেন হ্যাঁ করো, কারণ উনি মোহনলালের বড় ভক্ত।
পরবর্তীতে পরিচালক তাঁর সঙ্গে দেখা করতে চান। মা ও দিদির সঙ্গে গিয়ে দেখা হয় পরিচালকের সঙ্গে। শুটিংও শুরু হয়ে যায়, ১৫ দিন শুটও হয়। এরপর শোনানো হয় ‘শিডিউল র্যািপ’। বলা হয়, মোহনলালের ডেট সমস্যা, তাই এক মাস পর আবার শুরু হবে। বিদ্যার কথায়, “বম্বে ফিরে এসে দেখলাম, সবাই বলছে এক দক্ষিণী মেয়ে একটা মালায়ালম ছবিতে কাজ করছে— তখনকার দিনে যেখানে বেশিরভাগ দক্ষিণী ছবির নায়িকাই পাঞ্জাবি। ফলে ৮–৯টা ছবির প্রস্তাব এসে যায় আমার কাছে।”বিদ্যা বলে চলেন, “প্রযোজকরা ফোন করতেন, চিত্রনাট্য শোনাতেন, আমার পারিশ্রমিক নিয়ে আলোচনা করতেন। আমি মনে করছিলাম, আমি মনে হয় তারকা হয়ে গিয়েছি!”
কিন্তু সেই আশার আলো নিমেষে নিভে যায়— যখন খবর আসে, চক্রম ছবি বাতিল হয়ে গিয়েছে। ছবির পরিচালক ও মোহনলালের মধ্যে সমস্যা তৈরি হয়, আর একরাশ স্বপ্ন মুহূর্তেই ভেঙে চুরমার। “আমি যে ছবিগুলোতে কাজ করতে রাজি হয়েছিলাম, হ্যাঁ বলেছিলাম, সেগুলো একে একে হাতছাড়া হয়ে গেল। মানুষ ভাবল, হয়তো আমি ‘অপয়া’। সেই পরিচালক-অভিনেতা জুটি ৮টা হিট দিয়েছিল, ৯টা ছবিতে আমাকে নেওয়া হল, আর সেইসব ছবিই বাতিল হয়ে গেল! সবাই ভাবল, এই মেয়েটাই হয়তো ‘অপয়া’!’
২০০৫ সালে মুক্তি পায় পরিণীতা, আর সেখান থেকেই বিদ্যার জীবনের পাল্টে যায় চিত্রনাট্য। লাগে রহো মুন্নাভাই, গুরু, ভুল ভুলাইয়া, পা, দ্য ডার্টি পিকচার, কাহানি— একের পর এক সফল সিনেমা, প্রশংসা, পুরস্কার, আর জনমানসে তাঁর অটুট অবস্থান।