তিন কন্যার টক-মিষ্টি বন্ধুত্ব। 
নিউজরুমের অন্দর কি বাত। 
গুরুতর এক সামাজিক সমস্যা সমাধানে থ্রিলারের গন্ধ। 
এবং একা হয়ে পড়া এক মিষ্টি মেয়ের সব বাধা পেরিয়ে রূপকথার মতো উত্থান।

 
ইদানীং ওটিটি দুনিয়ায় একটা সিরিজকে লোভনীয় করে তুলতে যে যে মশলা লাগে, প্রত্যেকটাই মজুত। আর যে রেসিপিতে রাঁধা, তার সবটুকু জুড়ে ফুরফুরে রোদের মতো ঝলমলে আমেজ। অ্যামাজন প্রাইমের নতুন সিরিজ, করণ জোহর প্রযোজিত ‘কল মি বে’-র স্বাদ যে মন ছুঁয়ে যাবে, সন্দেহ কী! 


দিল্লির সুন্দরী সোশ্যালাইট, ধনীর দুলালি বেলা রাজবংশ ওরফে বে (অনন্যা পাণ্ডে)-কে সেই ছোট্টবেলা থেকেই মা গায়ত্রী (মিনি মাথুর) শিখিয়েছিলেন একটাই কথা— ট্রফি ওয়াইফ হয়ে ওঠাটাই তার জীবনের মোক্ষ। এ দিকে, বিত্তশালী শিল্পপতির একমাত্র ছেলে, ব্যস্ত ব্যবসায়ী অগস্ত্য চৌধুরীর (বিহান সামাত)সঙ্গে তার তিন বছরের বিবাহিত জীবনে তিন ফোঁটাও সুখ নেই! অগস্ত্য ওরফে অ্যাগি সময়ই দেয় না যে! সোনার খাঁচায় ছটফট করতে করতে একদিন বে বেছে নেওয়া এক চিলতে খোলা হাওয়া। সেলেব্রিটি জিম ট্রেনার প্রিন্স ভাসিন (বরুণ সুদ)-এর সঙ্গে প্রেম হাতেনাতে ধরা পড়লে তাকে তাড়িয়ে দেয় বর। সমাজে মুখ দেখাবে কী করে, ব্যবসার কী হবে, এমন সব দুর্ভাবনায় পাশ থেকে সরে যায় মা আর দাদা সমরও (শিব মসন্দ)। একাই মুম্বইতে শূন্য থেকে নতুন করে জীবন শুরু করে বে। পকেটে পয়সা নেই; প্রাসাদোপম বাড়ি ছেড়ে ঠাঁই হস্টেলে কিংবা এক কামরার ফ্ল্যাট ভাগাভাগিতে; দামি গাড়ির বদলে অটো; সঙ্গী দুই মধ্যবিত্ত বান্ধবী সায়রা (মুসকান জাফেরি) ও টামারা (নীহারিকা দত্ত) — বদলে যাওয়া জীবন পাল্টে দিতে থাকে বে-কেও। ভাইরাল ভিডিওর হাত ধরে পাওয়া নামী টিভি চ্যানেলের ইন্টার্নশিপ তার চোখ খুলে দেয় আরও। বলিষ্ঠ রিপোর্টার নীল (গুরফতে পীরজাদা) বনাম স্রেফ সেনশেসনে আস্থা রাখা জনপ্রিয় টক শো অ্যাঙ্কর সত্যজিৎ সেনের (বীর দাস) দড়ি টানাটানি আর এক অনামী নারীর ‘মি টু’ কাহিনি বে-কে শিখিয়ে ছাড়ে সত্যের জন্য লড়াই। পাশে থাকে সায়রা, টামারা, নীল আর প্রিন্স। কী ভাবে সে তল পাবে সব সত্যির, কীভাবে টেনে ছিঁড়বে মিথ্যের মুখোশ— তা নিয়েই এগিয়েছে সিরিজ।


অভিজাত, রক্ষণশীল পরিবারে কন্যাসন্তানের ভাগ্য ঠিক কোন পথে এগোয়, সোনার চামচ মুখে দেওয়া জীবন বাস্তব থেকে ঠিক কতটা দূরে, কেনই বা তাতে স্বাধীনতা মেলে না, সে উত্তর আছে এ সিরিজে। আছে মানসিক সমস্যার শিকড় খোঁজা, আছে সৎ বনাম অসৎ সাংবাদিকতার লড়াই কিংবা বিনোদন দুনিয়ার ঝলমলানির আড়ালে অন্ধকারের খোঁজ। তবে এমন গুরুতর সব সমস্যাকে আলগোছে ছুঁয়ে গিয়েছে কলিন ডি কুনহার পরিচালনা। বরং হাল্কা মেজাজে সোশ্যাল মিডিয়ায় মন দিয়ে হয়ে উঠতে চেয়েছে ইনস্টাগ্রাম-প্রজন্মের মনের মতো।   
‘গেহরাইয়াঁ’, ‘খো গয়ে হম কহাঁ’র মতো ছবিতে আগেই নজর কেড়েছিলেন অনন্যা। সিরিজে প্রথম পা রেখে ভীষণ রকম অপটিমিস্টিক, দিলখোলা, শিরদাঁড়া সোজা রাখা মিষ্টি এক মেয়ের ভূমিকাতেও তিনি অনবদ্য। সত্যজিতের টিআরপি-সর্বস্ব চরিত্রে চমকে দেন জনপ্রিয় স্ট্যান্ড আপ কমেডিয়ান বীর দাস। প্রিন্সের ভূমিকায় বরুণ মন কাড়েন। ভাল লাগে গার্ল গ্যাং কিংবা নীলকেও। 


সিরিজে বে-র চরিত্রটা কিংবা তার গতিপথ বাস্তব থেকে ঢের দূরে। কিন্তু লজিকের চেয়ে রূপকথার ম্যাজিকেই আস্থা রাখেন কাহিনিকার ঈশিতা মৈত্র, সামিনা মোটলেকাররা। চারপাশের অস্থিরতা, বিষন্নতার মধ্যে সেই আলো আলো গল্প মন্দ লাগেনা কিন্তু!