আজকাল ওয়েবডেস্ক: কখনও ভেবেছেন, আমাদের মনটাও অনেকটা আকাশের মতো? যেখানে কখনও ঝলমলে রোদ, আবার কখনও কালো মেঘের ঘনঘটা। কিন্তু সেই মেঘ যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, যদি সারাক্ষণই মাথায় রাজ্যের নেতিবাচক চিন্তা ঘুরপাক খায়, তবে জীবনের স্বাভাবিক ছন্দটাই যেন হারিয়ে যায়। কর্মজীবনের চাপ, সম্পর্কের টানাপোড়েন আর ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা। সব মিলিয়ে বহু মানুষই আজকাল এই ধরনের মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। মনে হচ্ছে যেন নেতিবাচক চিন্তার এক চক্রব্যূহে আটকে গিয়েছেন, যেখান থেকে বেরোনোর পথ নেই।
মনোবিদরা জানাচ্ছেন, মাঝেমধ্যে নেতিবাচক চিন্তা আসাটা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু সেই ভাবনাই যখন সর্বক্ষণের সঙ্গী হয়ে ওঠে এবং দৈনন্দিন জীবনে তার প্রভাব পড়তে শুরু করে, তখনই সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। তবে আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। কয়েকটি সহজ কৌশল এবং কিছু দৈনন্দিন অভ্যাস বদলের মাধ্যমেই এই মনখারাপের মেঘ সরানো সম্ভব।
কীভাবে লড়বেন এই মানসিকতার সঙ্গে?
১। মনে কোনও নেতিবাচক চিন্তা এলে তাকে জোর করে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবেন না। এতে সেই ভাবনা আরও জেঁকে বসে। বরং নৈর্ব্যক্তিক ভাবে একজন দর্শকের মতো নিজের ভাবনাকে পর্যবেক্ষণ করুন। মনোবিদদের মতে, ভাবনাটাকে স্বীকার করে নিলে তার জোর অনেকটাই কমে আসে। ভাবুন, এই ভাবনা শরতের মেঘের মতো, যা নিজে থেকেই মিলিয়ে যাবে।
২। যখনই মনে হবে, ‘আমার দ্বারা কিচ্ছু হবে না’ বা ‘সবাই আমায় নিয়েই সমালোচনা করছে’- তখন নিজেকে পাল্টা প্রশ্ন করুন। এই ভাবনার পিছনে কি কোনও বাস্তব প্রমাণ আছে? অতীতেও কি এমন ভাবনা এসেছে? সেই ভাবনার পরে কি আমি সফল হইনি? এই যুক্তিবাদী বিশ্লেষণ অনেক সময়েই নেতিবাচক চিন্তার অসারতা প্রমাণ করে দেয়।
আরও পড়ুন: মধুচক্র চালানোয় অভিযুক্ত অভিনেত্রী অনুষ্কা দাস! সেক্স র্যাকেট থেকে উদ্ধার বাংলা সিরিয়ালের আরও ২ নায়িকা! তুলকালাম মহারাষ্ট্রে
৩। বর্তমান নিয়ে ভাবুন। নেতিবাচক চিন্তা আসে হয় অতীতকে নিয়ে আক্ষেপ করার কারণে, নয়তো ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশি ভাবার ফলে। এর সেরা ওষুধ হল মনকে বর্তমানে ফিরিয়ে আনা। একে ‘মাইন্ডফুলনেস’ বলে। গভীর শ্বাসপ্রশ্বাস নিন। যখন শ্বাস নেবেন বা ছাড়বেন, তখন নিজের শ্বাসের উপর মনোযোগ দিন। আপনার চারপাশে এমন পাঁচটি জিনিস লক্ষ্য করুন যা আপনি দেখতে পাচ্ছেন, চারটি জিনিস যা আপনি স্পর্শ করতে পারছেন, তিনটি জিনিস যা আপনি শুনতে পাচ্ছেন। এই অনুশীলন মনকে শান্ত করে।
৪। একটানা নেতিবাচক চিন্তা এলে সেই চক্র ভাঙাটা জরুরি। তৎক্ষণাৎ জায়গা বদল করুন। উঠে গিয়ে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করুন, পছন্দের গান শুনুন অথবা এমন কাউকে ফোন করুন যাঁর সঙ্গে কথা বললে মন ভাল থাকে। ছোট ছোট কাজ, যেমন- গাছে জল দেওয়া বা ঘর গোছানোর মধ্যেও মনকে ব্যস্ত রাখা যায়।
কখন বিশেষজ্ঞের সাহায্য জরুরি?
যদি দেখা যায়, এই সমস্ত চেষ্টার পরেও নেতিবাচক চিন্তা আপনার ঘুম, খিদে, কাজ বা সম্পর্কে প্রভাব ফেলছে, তবে বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিতে দ্বিধা করবেন না। মনে রাখবেন, শরীর খারাপ হলে যেমন আমরা চিকিৎসকের কাছে যাই, মনের যত্ন নিতে মনোবিদ বা কাউন্সেলরের সাহায্য নেওয়াটাও ঠিক ততটাই স্বাভাবিক এবং জরুরি। এটি কোনও দুর্বলতার লক্ষণ নয়, বরং নিজের প্রতি দায়িত্বশীল হওয়ার পরিচয়। মনের লাগাম আদতে নিজের হাতেই থাকে, শুধু তাকে ঠিক পথে চালনা করার কৌশলটুকু ধৈর্য ধরে শিখে নিতে হয়।
