আজকাল ওয়েবডেস্ক: শুধু ইউক্রেন নয়, ক্যানসারের সঙ্গেও যুদ্ধ করছে রাশিয়া। স্পুটনিক পাঁচ (ভি)-এর পর আরও এক বার বিশ্বকে চমক দিতে প্রস্তুত রাশিয়া। এ বারের লড়াই আরও কঠিন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে- ক্যানসার। ক্রেমলিন সূত্রে খবর, প্রায় একই সময়ে তাদের তৈরি দু’টি ভিন্নধর্মী কিন্তু যুগান্তকারী ক্যানসার ভ্যাকসিন মানব শরীরে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের জন্য চূড়ান্ত ছাড়পত্র পেয়ে গিয়েছে। চলতি বছরের শেষেই এই ট্রায়াল শুরু হওয়ার কথা। এই খবরে আশার আলো দেখছে গোটা বিশ্বের চিকিৎসক মহল।
আরও পড়ুন: মধুচক্র চালানোয় অভিযুক্ত অভিনেত্রী অনুষ্কা দাস! সেক্স র‍্যাকেট থেকে উদ্ধার বাংলা সিরিয়ালের আরও ২ নায়িকা! তুলকালাম মহারাষ্ট্রে
সবচেয়ে বেশি আলোচনা চলছে মস্কোর বিখ্যাত গামেলিয়া রিসার্চ সেন্টারকে নিয়ে। কোভিড পর্বে যারা দ্রুত ভ্যাকসিন তৈরি করে খ্যাতি অর্জন করেছিল, তারাই এ বার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে এক পার্সোনালাইজড মেসেঞ্জার আরএনএ (এমআরএনএ) ভ্যাকসিন তৈরি করেছে। বিজ্ঞানীদের দাবি, এই ভ্যাকসিন প্রত্যেক রোগীর জন্য আলাদা ভাবে তৈরি করা হবে। রোগীর টিউমারের জেনেটিক গঠন বিশ্লেষণ করে এআই-এর সাহায্যে এমন একটি নকশা তৈরি হবে, যা রোগীর নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ক্যানসার কোষ খুঁজে বার করে ধ্বংস করার জন্য প্রশিক্ষিত করবে। অনেকটা প্রতিরক্ষা বাহিনীকে শত্রুর নিখুঁত অবস্থান জানিয়ে দেওয়ার মতো। প্রাথমিক ভাবে মেলানোমা বা ত্বকের ক্যানসারে আক্রান্তদের উপর এই ট্রায়াল শুরু হলেও, অগ্ন্যাশয়, ফুসফুস ও মস্তিষ্কের ক্যানসারের ক্ষেত্রেও এর কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হবে।
অন্য দিকে, প্রায় নিঃশব্দেই আর এক ধাপ এগিয়েছে রাশিয়ার ফেডারেল মেডিকেল অ্যান্ড বায়োলজিক্যাল এজেন্সি (এফএমবিএ)। তাদের তৈরি ভ্যাকসিনের নাম ‘এন্টেরোমিক্স’। এটিও একটি এমআরএনএ ভ্যাকসিন এবং এটিও রোগীর শরীর অনুযায়ী বিশেষভাবে তৈরি হবে। তবে এর প্রাথমিক লক্ষ্য কোলোরেক্টাল বা মলদ্বারের ক্যানসার। এফএমবিএ-এর প্রধান ভেরোনিকা স্কভোরৎসভা জানিয়েছেন, প্রি-ক্লিনিক্যাল বা প্রাণীদেহে পরীক্ষার পর্যায়ে এন্টেরোমিক্স অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছে। এটি শুধুমাত্র টিউমারের বৃদ্ধিই রোধ করেনি, সেটিকে ষাট থেকে আশি শতাংশ পর্যন্ত সংকুচিত করতেও সক্ষম হয়েছে। তাঁর কথায়, “ভ্যাকসিনটি সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং অত্যন্ত কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। আমরা মানব ট্রায়ালের জন্য প্রস্তুত।”
আরও পড়ুন: মধুচক্র চালানোয় অভিযুক্ত অভিনেত্রী অনুষ্কা দাস! সেক্স র‍্যাকেট থেকে উদ্ধার বাংলা সিরিয়ালের আরও ২ নায়িকা! তুলকালাম মহারাষ্ট্রে
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই দু’টি ভ্যাকসিনের মূল শক্তি হল এদের কার্যকারিতার ধরণ। কেমোথেরাপি বা রেডিয়েশনের মতো নির্বিচারে ভাল ও মন্দ কোষকে আক্রমণ না করে, এই ভ্যাকসিনগুলি শুধুমাত্র ক্যানসার কোষকেই নিশানা করবে। ফলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনেক কম হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
রাশিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, ট্রায়াল সফল হলে দেশের নাগরিকদের জন্য এই ভ্যাকসিন সম্পূর্ণ বিনামূল্যে সরবরাহ করা হবে। যদিও এর আনুমানিক উৎপাদন খরচ নেহাত কম নয়। তাই রাশিয়ার বাইরে এই ভ্যাকসিনের দাম কত হবে তা এখনই বলা অসম্ভব। আপাতত গোটা বিশ্ব অধীর আগ্রহে তাকিয়ে রয়েছে ক্যানসারের বিরুদ্ধে তৈরি এই ‘জোড়া ফলা’র মানব পরীক্ষার ফলাফলের দিকে। যদি সত্যিই সাফল্য আসে, তবে ক্যানসার চিকিৎসার খোলনলচে বদলে যেতে পারে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছনোর আগে দীর্ঘ এবং জটিল পরীক্ষার প্রতিটি ধাপ সফল ভাবে পেরোনোই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।