আজকাল ওয়েবডেস্ক: কপালের এক পাশ থেকে শুরু হয়ে যেন গোটা মাথায় হাতুড়ি পেটার যন্ত্রণা, সঙ্গে বমি ভাব, আলো বা শব্দ সহ্য করতে না পারা- মাইগ্রেনের এহেন আক্রমণ যাঁদের হয়, একমাত্র তাঁরই বোঝেন এর তীব্রতা। চিকিৎসকেরা এর নানা কারণের কথা বললেও, অনেক সময়েই এই যন্ত্রণার পিছনে অনুঘটকের কাজ করে আমাদের রোজকার খাবার। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এমন কিছু খাবার রয়েছে যা মাইগ্রেনের ‘ট্রিগার’ হিসেবে কাজ করে, অর্থাৎ সেগুলোর প্রভাবে যন্ত্রণার অনুভূতি বহুগুণ বেড়ে যেতে পারে।
মাইগ্রেনের যন্ত্রণা কেন হয়, তার সঠিক কারণ এখনও সম্পূর্ণ স্পষ্ট না হলেও বিজ্ঞানীরা মনে করেন, মস্তিষ্কের স্নায়ু এবং রক্তনালীর সাময়িক পরিবর্তন এর জন্য দায়ী। কিছু বিশেষ খাবার এই পরিবর্তনকে প্রভাবিত করতে পারে। তাই বার বার মাইগ্রেনের সমস্যায় ভুগলে, নিজের খাদ্যতালিকায় নজর রাখা অত্যন্ত জরুরি।
কোন কোন খাবারে বিপদ?
১। চকোলেট: অনেকেরই অত্যন্ত পছন্দের এই খাবারটি মাইগ্রেনের অন্যতম প্রধান কারণ হতে পারে। চকোলেটে ক্যাফিন এবং বিটা-ফিনাইলইথ্যালামাইন নামক দু’টি উপাদান থাকে, যা মস্তিষ্কের রক্তনালীর উপর প্রভাব ফেলে যন্ত্রণার উদ্রেক করতে পারে। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, মাইগ্রেনে আক্রান্ত প্রতি তিন জনের মধ্যে এক জনের সমস্যা বাড়িয়ে তোলে চকোলেট।
২। কফি বা ক্যাফিনযুক্ত পানীয়: পরিমিত পরিমাণে ক্যাফিন অনেক সময়ে মাথাব্যথা কমাতে সাহায্য করলেও, এর অতিরিক্ত ব্যবহারে হিতে বিপরীত হতে পারে। অতিরিক্ত কফি, এনার্জি ড্রিঙ্ক বা নরম পানীয় পান করলে ‘ক্যাফিন রিবাউন্ড হেডেক’ হতে পারে। অর্থাৎ, শরীর যখন অভ্যস্ত হয়ে যাওয়ার পর হঠাৎ ক্যাফিন পায় না, তখন যন্ত্রণা শুরু হয়।
৩। পুরনো চিজ ও প্রক্রিয়াজাত মাংস: পারমেসান, চেডার, ফেটা-র মতো পুরনো বা ‘এজড’ চিজে ‘টাইরামাইন’ নামক এক প্রকার অ্যামাইনো অ্যাসিড তৈরি হয়। এই টাইরামাইন মস্তিষ্কের রক্তনালীকে সংকুচিত ও প্রসারিত করে মাইগ্রেনের সূচনা করতে পারে। একই ভাবে, সসেজ, সালামি, হট ডগ বা অন্যান্য প্রক্রিয়াজাত মাংসে ব্যবহৃত নাইট্রেট এবং নাইট্রাইট নামক পদার্থও মাইগ্রেনের কারণ হতে পারে।
৪। অ্যালকোহল, বিশেষত রেড ওয়াইন: অ্যালকোহল শরীর থেকে জল শুষে নেয়, যা ডিহাইড্রেশনের কারণে মাথাব্যথার কারণ হতে পারে। তবে রেড ওয়াইনের ক্ষেত্রে সমস্যা আরও জটিল। এতে টাইরামাইন এবং হিস্টামিন- দুই উপাদানই থাকে, যা মাইগ্রেনে আক্রান্তদের জন্য অত্যন্ত খারাপ।
৫। মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট (এম এস জি): ‘টেস্টিং সল্ট’ বা ‘আজিনোমোটো’ নামে পরিচিত এই উপাদানটি বহু প্যাকেটজাত খাবার, চিনা খাবার এবং রেস্তরাঁর রান্নায় স্বাদ বাড়াতে ব্যবহৃত হয়। এই এমএসজি একটি স্নায়ু উদ্দীপক (নিউরোট্রান্সমিটর) হিসেবে কাজ করে মাইগ্রেনের সূচনা করতে পারে।

৬। কৃত্রিম মিষ্টি: অনেকেই চিনির বদলে অ্যাসপারটেম বা অন্যান্য কৃত্রিম মিষ্টি ব্যবহার করেন। বিভিন্ন ‘ডায়েট’ পানীয় বা খাবারে এর ব্যবহার দেখা যায়। গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে, এই উপাদানগুলিও অনেকের ক্ষেত্রে মাইগ্রেনের যন্ত্রণা ডেকে আনে।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, সকলের ক্ষেত্রে সব খাবার সমানভাবে কাজ করে না। তাই একটি ‘ফুড ডায়েরি’ তৈরি করার কথা বলা হয়। কোন দিন কী খাচ্ছেন এবং কবে যন্ত্রণা হচ্ছে, তা লিখে রাখলে সহজেই নিজের ‘ট্রিগার ফুড’ চিহ্নিত করা সম্ভব। মাইগ্রেনের সমস্যা থাকলে এই খাবারগুলি সম্পর্কে সচেতন হওয়া এবং প্রয়োজন হলে তা খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দেওয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
