আজকাল ওয়েবডেস্ক: আধুনিক জীবনযাত্রার দৌলতে যে অসুখগুলি প্রায় মহামারির আকার ধারণ করেছে, ফ্যাটি লিভার তার মধ্যে অন্যতম। একটা সময় পর্যন্ত মনে করা হত, শুধুমাত্র মদ্যপানের কারণেই লিভারে চর্বি জমে। কিন্তু বর্তমানে ‘নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ’-এ আক্রান্তের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে, যার মূল কারণ অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন এবং অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস। চিকিৎসকেরা এই রোগকে ‘নীরব ঘাতক’ বলে থাকেন, কারণ প্রাথমিক পর্যায়ে এর নির্দিষ্ট কোনও উপসর্গ থাকে না। তবে আশার কথা হল, এই রোগের নিরাময়ের চাবিকাঠি লুকিয়ে রয়েছে আপনার দৈনন্দিন অভ্যাসের মধ্যেই। শুধু ওষুধ নয়, জীবনযাত্রায় পাঁচটি জরুরি পরিবর্তন আনলেই এই বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ফ্যাটি লিভার সারিয়ে তোলার জন্য কোনও ম্যাজিক পিল নেই। এর একমাত্র পথ হলো অনুশাসন। আর পঞ্চবান মন্ত্র সেই অনুশাসনের পাঁচটি ধাপ, যা নিয়মিত মেনে চললে লিভার আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসতে পারে।
আরও পড়ুন: ৩ মিনিটে ভাঙা হাড় জুড়ে যাবে! যুগান্তকারী ‘আঠা’ আবিষ্কার চীনের বিজ্ঞানীদের, বদলে যাবে চিকিৎসাশাস্ত্রের রূপরেখা?

১। খাদ্যাভ্যাসে আনুন বিপ্লব: লিভারকে সুস্থ রাখার প্রথম শর্তই হল সঠিক খাবার বেছে নেওয়া। খাদ্যতালিকা থেকে চিনি এবং সরল শর্করা (যেমন - ময়দার রুটি, সাদা ভাত, মিষ্টি, নরম পানীয়) বাদ দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। অতিরিক্ত ভাজাভুজি, ট্রান্স ফ্যাটযুক্ত খাবার (প্যাকেটজাত স্ন্যাকস, ফাস্ট ফুড) এবং লাল মাংস (রেড মিট) লিভারের ওপর চাপ বাড়ায়। পরিবর্তে খাদ্যতালিকায় যোগ করুন ফাইবার বা আঁশযুক্ত খাবার, যেমন- প্রচুর পরিমাণে সবুজ শাকসবজি, মরসুমি ফল এবং গোটা শস্য (হোল গ্রেন)। মাছ, ডিমের সাদা অংশ, ডালের মতো প্রোটিন এবং বাদাম, অ্যাভোকাডো, অলিভ অয়েলের মতো স্বাস্থ্যকর ফ্যাট লিভারের বন্ধু।
আরও পড়ুন: বাবা ভাঙ্গা আর নস্ত্রাদামুস দু’জনেই সাবধান করেছিলেন! ২০২৫-এর ভয়ঙ্কর ভবিষ্যদ্বাণী শুনে কাঁপছে গোটা বিশ্ব

২। ওজন কমানো অত্যন্ত জরুরি: ফ্যাটি লিভার কমানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায় হল ওজন নিয়ন্ত্রণ। চিকিৎসকদের মতে, শরীরের মোট ওজনের মাত্র ৫ থেকে ১০ শতাংশ কমালেই লিভারের চর্বি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসে এবং প্রদাহ নিয়ন্ত্রণে থাকে। এর জন্য ডায়েটের পাশাপাশি কায়িক পরিশ্রম অপরিহার্য।

৩। শরীরচর্চাকে করুন নিত্যসঙ্গী: লিভারে জমা ফ্যাট ঝরিয়ে ফেলতে ব্যায়ামের কোনও বিকল্প নেই। সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট হালকা শরীরচর্চা, যেমন- দ্রুত হাঁটা, জগিং, সাইকেল চালানো বা সাঁতার কাটার চেষ্টা করুন। এর সঙ্গে সপ্তাহে দু’দিন পেশি মজবুত করার ব্যায়াম বা ওয়েট ট্রেনিং করলে আরও ভাল ফল মেলে। শরীরচর্চা শুধু ওজন কমায় না, ইনসুলিনের কার্যকারিতাও বাড়ায়, যা ফ্যাটি লিভারের মোকাবিলায় সহায়ক।

৪। মদ্যপানে ইতি: অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভারের ক্ষেত্রে মদ্যপান সম্পূর্ণ বন্ধ করা ছাড়া আর কোনও পথ নেই। নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভারের ক্ষেত্রেও মদ্যপান লিভারের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলতে পারে। তাই এই অভ্যাস বর্জন করাই শ্রেয়।

৫। অন্যান্য রোগের নিয়ন্ত্রণ: ফ্যাটি লিভারের সঙ্গে ডায়াবিটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং রক্তে উচ্চ কোলেস্টেরলের মতো রোগগুলির গভীর যোগ রয়েছে। তাই লিভারকে সুস্থ রাখতে হলে এই রোগগুলিকেও নিয়ন্ত্রণে রাখা আবশ্যক। চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে নিয়মিত ওষুধ খাওয়া এবং পরীক্ষা করানো জরুরি।

লিভারে মেদ জমলে, শরীর সতর্কবার্তা পাঠায়। তাই আতঙ্কিত না হয়ে, যত দ্রুত সম্ভব জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনুন। সুস্থ লিভার নীরোগ জীবনের চাবিকাঠি।