আজকাল ওয়েবডেস্ক: মোবাইলে সন্তানের ছবি তুলতে গিয়ে ফ্ল্যাশের আলোয় তার চোখে কি অদ্ভুত সাদা এক আভা দেখেছেন? অথবা লক্ষ্য করেছেন, শিশুর একটি চোখ অন্যটির তুলনায় ট্যারা লাগছে? বিষয়টিকে মামুলি ভেবে উড়িয়ে দেবেন না। এই লক্ষণগুলি হতে পারে রেটিনোব্লাস্টোমার মতো এক গুরুতর রোগের ইঙ্গিত। এটি শিশুদের চোখে হওয়া এক ধরনের ক্যানসার। সময়মতো চিকিৎসা শুরু না হলে এই রোগ কেড়ে নিতে পারে দৃষ্টিশক্তি, এমনকী ঘটতে পারে মৃত্যুও।
কী এই রেটিনোব্লাস্টোমা?
চিকিৎসকদের মতে, রেটিনোব্লাস্টোমা হল চোখের রেটিনায় (অর্থাৎ অক্ষিপটের) হওয়া একটি ম্যালিগন্যান্ট টিউমার। রেটিনা হল চোখের পিছনের আলোক সংবেদনশীল স্তর, যা আমাদের দেখতে সাহায্য করে। এই ক্যানসার সাধারণত পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুদের মধ্যে দেখা যায়। পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি ১৫ থেকে ২০ হাজার শিশুর মধ্যে একজন এই রোগে আক্রান্ত হয়। এর পিছনে জেনেটিক বা বংশগত কারণও থাকতে পারে। রেটিনার কোষগুলির অস্বাভাবিক এবং অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধির ফলেই এই টিউমার হয়।
আরও পড়ুন: পৃথিবীর একমাত্র সাদা জিরাফ কোথায় থাকে? কার ভয়ে ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তায় মুড়ে রাখা হয় তাকে? জানলে চোখে জল আসবে
উপসর্গ চিনবেন কীভাবে?
রেটিনোব্লাস্টোমার সবচেয়ে সাধারণ এবং প্রাথমিক উপসর্গ হলো লিউকোকোরিয়া, অর্থাৎ চোখের মণির মধ্যে সাদা আভা বা আস্তরণ তৈরি হওয়া। অন্ধকারে বা কম আলোয় ফ্ল্যাশ দিয়ে ছবি তুললে এই সাদা আভা বিড়ালের চোখের মতো জ্বলজ্বল করে ওঠে, যাকে ‘ক্যাটস আই রিফ্লেক্স’ বলা হয়। এছাড়াও এর বেশি কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপসর্গ রয়েছে।
১। স্ট্র্যাবিসমাস: ট্যারা দৃষ্টি বা একটি চোখের মণি অন্যটির সঙ্গে এক সরলরেখায় না থাকা।
২। দৃষ্টিশক্তি হ্রাস: শিশু কোনও কিছুর দিকে ঠিকমতো না তাকালে তার দৃষ্টি অস্পষ্ট হতে পারে।
৩। চোখ লাল হওয়া এবং ফুলে যাওয়া: কোনও আঘাত ছাড়াই একটানা চোখ লাল থাকা বা ফুলে যাওয়া।
৪। গ্লুকোমা: চোখের অভ্যন্তরের চাপ বেড়ে যাওয়ার ফলে ব্যথা হওয়া।
৫। চোখের মণির রঙ পরিবর্তন: কোনও একটি চোখের মণির রঙ অন্যটির চেয়ে আলাদা মনে হওয়া।
অনেক অভিভাবকই ট্যারা ভাব বা চোখের এই সাদা আভাকে শিশুর স্বাভাবিক শারীরিক গঠন ভেবে ভুল করেন। কিন্তু এই লক্ষণগুলি দেখামাত্র এক মুহূর্ত দেরি না করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ এই রোগের ক্ষেত্রে ‘আর্লি ডিটেকশন’ বা দ্রুত রোগ নির্ণয়ই হল চিকিৎসার সাফল্যের মূল চাবিকাঠি।
চিকিৎসা কী?
সৌভাগ্যবশত, আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৌলতে রেটিনোব্লাস্টোমার উন্নত চিকিৎসা এখন সম্ভব। টিউমারের আকার, অবস্থান এবং তা কতটা ছড়িয়েছে তার উপর নির্ভর করে চিকিৎসার পদ্ধতি ঠিক করা হয়। মূল লক্ষ্য থাকে তিনটি। শিশুর জীবন বাঁচানো, চোখটিকে রক্ষা করা এবং যতটা সম্ভব দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে আনা।
চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে কেমোথেরাপি। এক্ষেত্রে শিরার মাধ্যমে (সিস্টেমিক), চোখের ধমনীতে সরাসরি (ইন্ট্রা-আর্টেরিয়াল) অথবা চোখের ভিতরে ইনজেকশনের (ইন্ট্রাভিট্রিয়াল) মাধ্যমে কেমোথেরাপি দেওয়া হয়। লেজার থেরাপি, ক্রায়োথেরাপি এবং রেডিয়েশন থেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসা হয়।
যদি টিউমার খুব বড় হয়ে যায় এবং চোখ বা দৃষ্টিশক্তি বাঁচানোর আর কোনও উপায় না থাকে, তবেই অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে চোখটি বাদ দেওয়া হয়।
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ ধরা পড়লে ৯৫ শতাংশেরও বেশি ক্ষেত্রে শিশুর জীবন বাঁচানো সম্ভব হয় এবং অনেক ক্ষেত্রেই চোখ ও দৃষ্টিশক্তি রক্ষা করা যায়। তাই সন্তানের চোখের যে কোনও অস্বাভাবিক পরিবর্তনে সতর্ক হন এবং অবিলম্বে চিকিৎসকের দ্বারস্থ হন। আপনার সচেতনতাই হতে পারে আপনার সন্তানের সুন্দর ভবিষ্যতের চাবিকাঠি।
