আজকাল ওয়েবডেস্ক: বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণ-পূর্ব অংশে আবারও একটি নতুন নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়েছে, যা আগামী সপ্তাহের শুরুতেই ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়টির নাম হবে ‘মন্থা’, যা থাইল্যান্ড প্রস্তাব করেছে। থাই ভাষায় ‘মন্থা’ শব্দের অর্থ “সুগন্ধি ফুল” বা “সুন্দর ফুল”। উত্তর ভারত মহাসাগর অঞ্চলের ঘূর্ণিঝড় নামকরণের ধারাবাহিকতায় এই নামটি ব্যবহৃত হবে।


ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, শুক্রবার সকালে গঠিত এই নিম্নচাপটি বর্তমানে পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম অভিমুখে অগ্রসর হচ্ছে। আগামী ২৬ অক্টোবরের মধ্যে এটি ভয়ানক রূপ নেবে এবং পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই একটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর প্রভাবে দক্ষিণ ভারতের উপকূলীয় রাজ্য তামিলনাড়ুতে ইতিমধ্যেই ব্যাপক বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে।


চেন্নাইসহ তিন জেলায় অরেঞ্জ অ্যালার্ট জারি
আবহাওয়া দপ্তর সোমবার, অর্থাৎ ২৭ অক্টোবর ২০২৫-এর জন্য চেন্নাই, তিরুভাল্লুর এবং রানিপেট জেলায় অরেঞ্জ অ্যালার্ট জারি করেছে। ওই দিন এলাকাগুলিতে অতি ভারী থেকে অতি অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি উপকূলজুড়ে দমকা হাওয়া বইতে পারে, যা ঘণ্টায় ৬০–৭০ কিমি বেগে পৌঁছাতে পারে।

আরও পড়ুন: বঙ্গোপসাগরে তৈরি ঘূর্ণিঝড়! কবে থেকে ফের বৃষ্টিতে ভাসবে বাংলা, রইল আপডেট


এই ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা এমন এক সময়ে দেখা দিয়েছে, যখন তামিলনাড়ুতে উত্তর-পূর্ব মৌসুমী বায়ু পুরোপুরি সক্রিয়। আইএমডি জানিয়েছে, রাজ্যের বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ জেলায় ভারী বৃষ্টি হচ্ছে — বিশেষ করে কোয়েম্বাটুর, নীলগিরি, এরোড, তিরুপ্পাত্তুর, ভেল্লোর এবং রানিপেটে।


মৌসুমী বায়ুর এই সক্রিয়তা এবং বঙ্গোপসাগরে গঠিত নিম্নচাপের পারস্পরিক প্রভাবে রাজ্যজুড়ে বৃষ্টির তীব্রতা আরও বাড়ছে। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের মতে, এই দুটি সিস্টেমের সম্মিলিত প্রভাবে আগামী কয়েক দিনে তামিলনাড়ুর পশ্চিম ও উত্তরাঞ্চলে অত্যধিক বৃষ্টিপাত হতে পারে, যা কিছু এলাকায় বন্যা ও জলজটের পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে।


ঘূর্ণিঝড় ‘মন্থা’র সম্ভাব্য আঘাতের আগে থেকেই রাজ্য প্রশাসন সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিয়েছে। চেন্নাই কর্পোরেশন সোমবার স্কুল বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে, যাতে শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায় এবং অপ্রয়োজনীয় যাতায়াত কমানো যায়। জরুরি পরিষেবাগুলি প্রস্তুত রাখা হয়েছে এবং উপকূলীয় এলাকায় মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।


পূর্বে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট এই ঘূর্ণিঝড়টি অনেক বেশি স্থিতিশীল ও সক্রিয়। আবহাওয়া মডেলগুলি ইঙ্গিত দিচ্ছে যে অক্টোবরের শেষের দিকে গঠিত এই নিম্নচাপটির আশেপাশে তাপমাত্রা, আর্দ্রতা ও বায়ুর প্রবাহ ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির জন্য অনুকূল অবস্থায় রয়েছে।


ফলে, এটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘মন্থা’ হিসেবে তামিলনাড়ুর উপকূলে আছড়ে পড়তে পারে। এর প্রভাবে প্রবল বৃষ্টি, জোর হাওয়া, বিদ্যুৎ বিভ্রাট ও পরিবহন ব্যবস্থায় বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। প্রশাসন সাধারণ মানুষকে অপ্রয়োজনীয়ভাবে বাইরে না যাওয়া এবং সরকারি নির্দেশিকা মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে।

আবহাওয়া দপ্তর উপকূলীয় জেলাগুলিতে মৎস্যজীবীদের সমুদ্রযাত্রা না করার পরামর্শ দিয়েছে। ছোট ট্রলারগুলোকে নিরাপদ স্থানে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ২৬ অক্টোবরের পর থেকে আবহাওয়ার অবস্থার উপর নজর রাখা হবে, কারণ নিম্নচাপটি দ্রুত ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।