আজকাল ওয়েবডেস্ক: গত ৭ মে, ২০২৫ পাহেলগাঁও-এর নারকীয় সন্ত্রাসবাদী হামলার পরিপ্রেক্ষিতে মাত্র কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে ভারতের নজিরবিহীন প্রতিক্রিয়া — অপারেশন সিন্দুর, পাকিস্তান ও পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের (POK) ৯টি সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটিতে কার্যত আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। এই অভিযানে নিহত হয়েছে ৮০-র বেশি জঙ্গি, যাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন ২৬/১১ মুম্বই হামলার সংগঠকদের ঘনিষ্ঠ বলে সূত্রে জানা গেছে। কিন্তু এই পাল্টা জবাব আসলে একটি দীর্ঘ ইতিহাসের নতুন অধ্যায়মাত্র। ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের কেন্দ্রে যে সংঘাতের আগুন জ্বলছে, তা শুরু হয়েছিল স্বাধীনতার সূচনালগ্নেই।
১৯৪৭: প্রথম কাশ্মীর যুদ্ধ
ব্রিটিশ ভারতের বিভাজনের ঠিক পরই কাশ্মীর হয়ে ওঠে সংঘর্ষের কেন্দ্র। পাকিস্তান-সমর্থিত উপজাতীয় আক্রমণের মুখে ভারত সেনা পাঠায়। যুদ্ধ শেষে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপে গঠিত হয় লাইন অফ কন্ট্রোল (LoC)—কাশ্মীর ভাগ হয়ে যায়।
১৯৬৫: দ্বিতীয় ভারত-পাক যুদ্ধ
পাকিস্তানের 'অপারেশন গিব্রাল্টার' এর মাধ্যমে কাশ্মীরে সন্ত্রাস ছড়ানোর চেষ্টা। ভারত তীব্র সামরিক প্রতিক্রিয়ায় পুরো পশ্চিম সীমান্ত জুড়ে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে। তাসখন্দ চুক্তিতে যুদ্ধবিরতি হলেও সম্পর্কের ফাটল গভীর হয়।
১৯৭১: বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও তৃতীয় ভারত-পাক যুদ্ধ
পূর্ব পাকিস্তানে গনহত্যা ও শরণার্থীদের ঢল ঠেকাতে ভারত হস্তক্ষেপ করে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিজয় ও পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের মাধ্যমে জন্ম নেয় স্বাধীন বাংলাদেশ। যুদ্ধটি ছিল দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সামরিক বিজয়।
১৯৯৯: কার্গিল যুদ্ধ
উপত্যকায় পাকিস্তানি অনুপ্রবেশ। ভারতীয় সেনার অপারেশন বিজয়-এর মাধ্যমে পাহাড়ি এলাকা পুনর্দখল। যুদ্ধের সময় পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে উদ্বেগ ছড়িয়েছিল বিশ্বজুড়ে।
২০১৬: উরি হামলা ও সার্জিকাল স্ট্রাইক
উরিতে ভারতীয় সেনা ঘাঁটিতে জঙ্গি হামলার পরে, ভারত প্রথমবারের মতো সীমান্ত পেরিয়ে সার্জিকাল স্ট্রাইক চালায়। জঙ্গি ঘাঁটিতে নির্ভুল হামলা করে ভারত বিশ্বের সামনে নতুন কৌশল তুলে ধরে।
২০১৯: পুলওয়ামা ও বালাকোট বিমান হামলা
৪০ জওয়ানের প্রাণ নেওয়া পুলওয়ামা হামলার জবাবে, ভারতীয় বিমান বাহিনী পাকিস্তানের অভ্যন্তরে বালাকোটে বোমা বর্ষণ করে। স্বাধীনতার পর প্রথমবার পাকিস্তানে গভীরে ঢুকে বিমান হানা।
২০২৫: অপারেশন সিঁদুর
পাহেলগামের বর্বর হামলার পরে মাত্র ২৫ মিনিটের মধ্যে ৯টি জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করে ভারত। এই অভিযানে প্রযুক্তি, সময়ানুগত্য ও সুনির্দিষ্টতা—সব পূর্ণমাত্রায় ছিল।
ভারত-পাক সম্পর্কের ইতিহাস রক্ত, যুদ্ধ ও রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে ভরা। তবে প্রতিবার ভারত দেখিয়েছে, সংযমের পাশাপাশি তাঁর শক্তি প্রদর্শনের ক্ষমতাও আছে।
