আজকাল ওয়েবডেস্ক: মধ্যপ্রদেশের গণেশপুরা গ্রামে এক হৃদয়বিদারক ঘটনার সাক্ষী রইল স্থানীয় মানুষ। অভিযোগ, বিজেপি নেতা মহেন্দ্র নাগর ও তাঁর সহযোগীরা এক কৃষককে পিটিয়ে হত্যা করেছে এবং তার দুই কন্যাকে নির্মমভাবে মারধর ও অপমান করেছে। নিহত কৃষকের নাম রামস্বরূপ ধাকড় (বয়স প্রায় ৫০)।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সকালে রামস্বরূপ ধাকড় তাঁর স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে জমিতে যাচ্ছিলেন। সেই সময় মহেন্দ্র নাগর ও তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা তাঁদের পথ আটকায়। অভিযোগ, অভিযুক্তরা প্রথমে লাঠি ও রড দিয়ে ধাকড়কে আক্রমণ করে এবং পরে একটি থার গাড়ি তুলে দেয় তাঁর উপর। ঘটনাস্থলেই তিনি গুরুতরভাবে আহত হন।
নিহতের পরিবার জানিয়েছে, মহেন্দ্র নাগর এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে ক্ষুদ্র কৃষকদের জমি কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য করছিলেন। রামস্বরূপ ধাকড় ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায়, তাঁর উপর এই নৃশংস আক্রমণ চালানো হয়।
আরও পড়ুন: ওলা-উবারের দিন শেষ? চড়া ভাড়া থেকে মুক্তি দিতে আসছে সরকারি অ্যাপ ক্যাব ‘ভারত ট্যাক্সি’
রামস্বরূপের মেয়ে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, “আমি বাবাকে বাঁচাতে ছুটে যাই। তারা আমাকে মাটিতে ফেলে দেয়, আমার গায়ে হাত তোলে, জামাকাপড় ছিঁড়ে ফেলে। গুলি চালানোরও চেষ্টা করে। আমার বাবা-মা জমিতে যাচ্ছিলেন, তখনই তারা গাড়ি নিয়ে এসে হামলা চালায়। মা বাধা দিলে, তারা বাবার উপর গাড়ি চালিয়ে দেয়।”
নিহতের ভাই রামকুমার জানান, “ওরা প্রায় এক ঘণ্টা ধরে অত্যাচার চালিয়েছে। মেয়েদের জামাকাপড় ছিঁড়ে ফেলে, গুলি চালিয়ে ভয় দেখায়। ওরা প্রথমে লাঠি দিয়ে মারধর করে, পরে ট্র্যাক্টর এবং গাড়ি তুলে দেয় ভাইয়ের শরীরের উপর।”
অভিযোগ আরও গুরুতর হয়ে ওঠে যখন জানা যায়, আহত কৃষককে প্রায় এক ঘণ্টা হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেওয়া হয়নি। অভিযুক্তরা অস্ত্র নিয়ে দেহ পাহারা দিচ্ছিল, যাতে কেউ কাছে যেতে না পারে। পরে যখন রামস্বরূপকে জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
ফতেহগড় থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক (এসএইচও) জয়নারায়ণ শর্মা জানিয়েছেন, “নিহতের পরিবারের বক্তব্য আমরা রেকর্ড করেছি। মহেন্দ্র নাগর, তাঁর পরিবারের তিনজন মহিলা সদস্য এবং আরও ১৪ জনের বিরুদ্ধে খুন ও সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। অভিযুক্তদের ধরতে তল্লাশি শুরু হয়েছে।”
বামোরি বিধানসভার কংগ্রেস বিধায়ক ঋষি আগরওয়াল এই ঘটনাকে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার চরম অবক্ষয় বলে মন্তব্য করেছেন। তাঁর অভিযোগ, “মধ্যপ্রদেশে হত্যা, লুঠ, ধর্ষণের ঘটনা দিন দিন বাড়ছে। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, অথচ সব কিছু তাঁর চোখের সামনেই ঘটছে। পুলিশ শাসকদলের ভয়ে কাজ করতে পারছে না।”
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মহেন্দ্র নাগর বহুদিন ধরে গ্রামাঞ্চলে ক্ষুদ্র কৃষকদের হুমকি দিয়ে আসছে। তাঁর প্রভাবে অন্তত ২৫ জন কৃষক বাধ্য হয়ে কম দামে জমি বিক্রি করে গ্রাম ছেড়ে চলে গেছেন।
গ্রামজুড়ে এখন তীব্র ক্ষোভ ও আতঙ্ক। নিহত কৃষকের পরিবার অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও কড়া শাস্তির দাবি জানিয়েছে। অন্যদিকে, প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে রাজ্য জুড়ে। গণেশপুরা গ্রামের এই নির্মম হত্যাকাণ্ড মধ্যপ্রদেশে রাজনৈতিক সন্ত্রাস ও কৃষকদের অসুরক্ষার চিত্র আবারও উন্মোচন করেছে।
