আজকাল ওয়েবডেস্ক: লোকসভায় বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী এবার মানবিক মুখে সামনে এলেন জম্মু-কাশ্মীরের পুঞ্চ জেলার জন্য। এপ্রিল মাসে পাহেলগামে জঙ্গি হামলা এবং তার পর মে মাসে ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর জেরে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে যে সংঘর্ষ হয়েছে, তাতে বহু পরিবার তাঁদের একমাত্র উপার্জনকারী বা পিতামাতাকে হারিয়েছেন। এমনই ২২ জন শিশুর দায়িত্ব এবার নিজের কাঁধে তুলে নিলেন রাহুল গান্ধী। জম্মু ও কাশ্মীর প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তারিক হামিদ কারা জানিয়েছেন, এই ২২ জন শিশুর উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত সমস্ত শিক্ষাগত খরচ বহন করবেন রাহুল। বুধবার, ৩০ জুলাই থেকে প্রথম কিস্তির অর্থছাড় করা হবে যাতে এই শিশুরা নিরবচ্ছিন্নভাবে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে।

মে মাসে পুঞ্চ সফরে গিয়ে রাহুল গান্ধী স্থানীয় কংগ্রেস নেতাদের নির্দেশ দেন, সংঘর্ষে ক্ষতিগ্রস্ত এমন শিশুদের একটি তালিকা প্রস্তুত করতে। এরপর একটি বিশেষ সমীক্ষার মাধ্যমে ২২ জন শিশুর নাম চূড়ান্ত করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে ফিরে এসে রাহুল বলেছিলেন, "এটা এক বিশাল মানবিক বিপর্যয়। অনেকেই প্রাণ হারিয়েছেন, ঘরবাড়ি নষ্ট হয়েছে। নিরীহ সাধারণ মানুষকে লক্ষ্য করে হামলা হয়েছে। অনেকে আমাকে অনুরোধ করেছেন যাতে আমি এই বিষয়টি জাতীয় স্তরে উত্থাপন করি। আমি তা করব।" এই সহানুভূতিশীল পদক্ষেপের মাধ্যমে রাহুল গান্ধী শুধু রাজনৈতিক নেতার ভূমিকা পালন করছেন না, বরং একজন অভিভাবকের মতো সামনে এসে দাঁড়াচ্ছেন সীমান্তবর্তী অঞ্চলের নিঃসহায় শিশুদের পাশে।

আরও পড়ুন: বাঙালি শ্রমিককে বাংলাদেশী বলে দেগে দিয়ে দিল্লি পুলিশের নির্মমতা ও জবরদস্তির অভিযোগ, তৃণমূলের পাশে দাঁড়িয়ে সাংবাদিক বৈঠকে মালদার পরিবার

২০২৫ সালের মে মাসে জম্মু-কাশ্মীরের পুঞ্চ ও রাজৌরি জেলার সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ভারতীয় সেনাবাহিনী একটি ব্যাপক পাল্টা সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান চালায়, যার নাম দেওয়া হয় অপারেশন সিঁদুর। এই অভিযান ছিল এপ্রিল মাসে পাহেলগাম জঙ্গি হামলায় নিহত সেনা জওয়ানদের প্রতিক্রিয়ায় চালানো একটি কৌশলগত এবং প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ। পাহেলগাম হামলার পর নিরাপত্তা বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলির তরফে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয় যে সীমান্ত পার থেকে চালানো জঙ্গি কার্যকলাপের উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে। মে মাসের প্রথম সপ্তাহে শুরু হওয়া এই অভিযানে সেনা ও আধাসেনার যৌথবাহিনী একাধিক সন্দেহভাজন ঘাঁটি ও লুকিয়ে থাকা জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান চালায়।

'সিঁদুর' নামকরণ এই অভিযানের জন্য প্রতীকীভাবে করা হয়। একদিকে এটি শহিদদের আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা, অন্যদিকে সীমান্তে ভারতের প্রতিরক্ষা ও প্রতিশোধের লাল প্রতীক হিসেবেও এটি ব্যবহৃত হয়। সেনা সূত্রে জানা যায়, বেশ কয়েকজন জঙ্গিকে নিকেশ করা হয় এবং বড়সড় অস্ত্রভাণ্ডার উদ্ধার হয় এই অভিযানে। এই অভিযানের সময় পাক সেনা ও জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির তরফে পাল্টা গোলাবর্ষণও শুরু হয়, যার ফলে পুঞ্চ জেলার বহু অসামরিক নাগরিক প্রাণ হারান বা আহত হন। বহু শিশু তাদের বাবা-মাকে হারায়। এই শিশুদের শিক্ষাগত সহায়তার জন্যই রাহুল গান্ধীর সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত এক আবেগঘন এবং সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন।