আজকাল ওয়েবডেস্ক: চলছিল শেষকৃত্যের আয়োজন। আচমকা প্রয়াত বৃদ্ধের মৃত্যুতে পরিবারের সকলেই মনমরা ছিলেন। শেষকৃত্যে হাজির বহু গ্রামবাসী। চিতায় বৃদ্ধকে তোলার আগেই ঘনাল রহস্য। নিথর দেহে এত ক্ষতের চিহ্ন কেন! মৃত্যুর আসল কারণ ঘিরে সন্দেহ হতেই পুলিশকে ডেকে পাঠান গ্রামবাসীরা।
গ্রামবাসীদের ডাকে তড়িঘড়ি ছুটে আসে পুলিশ। থামিয়ে দেয় শেষকৃত্যের কাজ। চিতা থেকে বৃদ্ধের দেহ উদ্ধার করে পাঠায় ময়নাতদন্তের জন্য। তারপরেই ফাঁস হল বৃদ্ধের পুত্রবধূর কুকীর্তি। বৌমার কেচ্ছা ছড়িয়ে পড়ল গ্রামেও। বর্তমানে ঘাতক বৌমা ও তাঁর প্রেমিকের ঠাঁই হয়েছে শ্রীঘরে।
শ্বশুরবাড়িতে দিনের পর দিন হেনস্থার শিকার হয়েছেন যুবতী। স্বামীকে শ্বশুরকে নিয়ে অভিযোগ করেও বিশেষ লাভ হয়নি। অবশেষে প্রেমিকের সঙ্গে মিলে শ্বশুরকে খুনের পরিকল্পনা করেন। খুন করলেও, তা আর ধামাচাপা দেওয়া যায়নি। গ্রামবাসীদের সন্দেহ যুবতীর কেচ্ছা ফাঁস করে দিয়েছে।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটেছে ছত্তিশগড়ের বালোদ জেলায়। পুলিশ জানিয়েছে, ৬০ বছরের মৃত বৃদ্ধের নাম, মনোহর নির্মলকর। তাঁকে খুন করার অভিযোগ রয়েছে পুত্রবধূ গীতা নির্মলকর ও তাঁর প্রেমিক লেখরাম নিষাদের বিরুদ্ধে। দু'জনকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ইলেক্ট্রিক শক দিয়ে বৃদ্ধকে খুন করেছে তাঁরা।
তদন্তে নেমে জানা গেছে, এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পিছনে গীতা ও তাঁর প্রেমিকের দীর্ঘদিনের পরিকল্পনা ছিল। কীভাবে খুন করলে, কেউ সন্দেহ করবেন না, তা ঘিরেও নানা ছক কষেছিলেন। শেষমেশ ঠিক করেন, ঘুমন্ত অবস্থায় শ্বশুরকে ইলেক্ট্রিক শক দেবেন। গীতা হাতে পরেছিলেন ইলেক্ট্রিশিয়ানের গ্লাভস। বিদ্যুৎবাহী তার দিয়ে ধাতুর রড জড়িয়ে দেন লেখরাম।
ঘটনার দিন মত্ত অবস্থায় বাড়ি ফিরেছিলেন মনোহর। মত্ত অবস্থায় তিনি ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। সেই সুযোগে গভীর রাতে তাঁকে ইলেক্ট্রিক শক দেন দু'জনে। ঘুমন্ত অবস্থায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে বৃদ্ধের মৃত্যু হয়। পরদিন সকালে পরিবারের সদস্যদের এবং গ্রামবাসীদের চিৎকার করে ডেকে বৃদ্ধের মৃত্যুর খবর দেন পুত্রবধূ। সকলকে জানান, মত্ত অবস্থায় সাইকেল চালাচ্ছিলেন মনোহর। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সাইকেল থেকে ছিটকে পড়েই তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
প্রথমে কেউই সন্দেহ করেনি। কিন্তু শেষকৃত্যের সময়েই বৃদ্ধের মৃত্যু ঘিরে সন্দেহ দানা বাঁধে। গ্রামবাসীদের সন্দেহ হয়, তাঁকে খুন করা হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে বৃদ্ধের দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে জানা যায়, বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে। এরপর তাঁর পুত্রবধূকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে পুলিশ।
দীর্ঘ জেরায় গীতা স্বীকার করে নেন, শ্বশুরকে তিনি ও তাঁর প্রেমিক মিলে খুন করেছেন। দিনের পর দিন শ্বশুর হেনস্থা করতেন। কখনও শারীরিকভাবে, কখনও মানসিকভাবে। শ্বশুরের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরেই খুনের সিদ্ধান্ত নেন। খুনের পর মৃতদেহে হলুদ ও গোলাপ জল লাগিয়ে দিয়েছিলেন। যাতে ক্ষতের চিহ্ন দেখা না যায়। ক্ষত দেখা না গেলেই কারো সন্দেহ হবে না। কিন্তু এতকিছু করেও শেষরক্ষা হয়নি। গীতা ও তাঁর প্রেমিককে হেফাজতে নিয়ে তদন্ত জারি রেখেছে পুলিশ।
