আজকাল ওয়েবডেস্ক: কোনও পক্ষই থামার কোনও লক্ষ্মণ দেখাচ্ছে না। গত শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া ইজরায়েল-ইরান সংঘাত সোমবার চতুর্থ দিনে পড়েছে। দুই দেশই আক্রমণের তীব্রতা আরও বৃদ্ধি করেছে। এর ফলে দুই দেশেই শিকার হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। লাফিয়ে লাফিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে মৃত্যু সংখ্যা। ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, সংঘাত শুরুর হওয়ার পর থেকে কমপক্ষে ২২৪ জন নিহত হয়েছেন। বেশিরভাগই অসামরিক নাগরিক। যার মধ্যে অনেকের মৃত্যু ইজরায়েলি বিমান হামলার কারণে হয়েছে। ইজরায়েলে মৃতের সংখ্যা ২০ জনেরও বেশি। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৩০০ জন।
বিভিন্ন সংবাদ সংস্থার প্রতিবেদন থেকে জানা গিয়েছে, ইজরায়েল ইরানের বেশ কয়েকটি অসামরিক স্থানে হামলা চালিয়েছে। একটি হাসপাতাল এবং একটি সরকারি টিভি চ্যানেলের ভবনে হামলা চালানো হয়েছে। সোমবার ইজরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বলেছিলেন, "ইরানের উস্কানিমূলক মুখপত্রটি বিলুপ্তির পথে"। এরপরেই হামলা চালানো হয়। পরে কাটজ জানিয়েছেন, ইজরায়েলি সেনাবাহিনী এই হামলা চালিয়েছে।
ইরান দাবি করেছে, সোমবার দেশের পশ্চিমে একটি হাসপাতালকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে ইজরায়েল। এটিকে ‘যুদ্ধাপরাধ’ বলেও নিন্দা করা হয়েছে। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র ইসমাইল বাকিয়ি বলেছেন, "পশ্চিম ইরানের কেরমানশাহ শহরের ফারাবি হাসপাতাল ইজরায়েল সরকারের আক্রমণাত্মক হামলার নিশানায় পরিণত হয়েছে।" তিনি আরও বলেন, "আবাসিক এলাকায় হামলার পাশাপাশি হাসপাতালগুলিতে হামলা আন্তর্জাতিক আইনের চরম লঙ্ঘন এবং যুদ্ধাপরাধ।"
সোমবার ইরানের সংবাদ সংস্থা ফার্স জানিয়েছে, তেহরানের পশ্চিমাঞ্চলে একটি সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে ইজরায়েলি হামলা চালানো হয়েছে। ইরানে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে রাজধানীর পূর্বাঞ্চলে বিস্ফোরণের খবরও জানানো হয়েছে। রবিবার শহরের বেশ কয়েকটি এলাকায় বোমা হামলার পর ইজরায়েলি সেনাবাহিনী তেহরানের কিছু অংশে হামলার হুমকি দেওয়ার পর এই ঘটনা ঘটে। পশ্চিম তেহরানে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম।
রবিবার রাতে এবং সোমবার পর্যন্ত, ইরান তেল আভিভ, হাইফা এবং পেতাহ টিকভাতে অসামরিক এলাকা লক্ষ্য করে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলা চালিয়েছে। এই হামলায় কমপক্ষে আটজন ইজরায়েলি নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। ইসরায়েল তেহরান-সহ ইরানের সামরিক, পারমাণবিক এবং জ্বালানি ঘাঁটিগুলিতে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়ে প্রতিশোধ নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু দাবি করেছেন, ইজরায়েল বিমান বাহিনী ইরানের আকাশসীমার উপর ‘সম্পূর্ণ অপারেশনাল স্বাধীনতা’ অর্জন করেছে। ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কোরের (IRGC) কুদস ফোর্সের মতো গুরুত্বপূর্ণ কমান্ড সেন্টারগুলিতে হামলা চালিয়েছে।
ইজরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, চার দিনের সংঘর্ষে ইরানের প্রায় ১২০টি ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চার ধ্বংস করা হয়েছে। যা মোট লঞ্চারের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। সোমবার সকালে, ইজরায়েল তেহরানের দিকে আসা ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চার বহনকারী ট্রাক-সহ অস্ত্রের সরবরাহ আটকে দেয়।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনেইকে হত্যা করলেই সংঘাতের অবসান হবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই পরিকল্পনায় ভেটো দেওয়ার একদিন পরই নেতানিয়াহুর এই মন্তব্য।
উভয় দেশের নেতাদের কেউ নমনীয় মনোভাব দেখাতে চাইছেন না। ইজরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী সতর্ক করে বলেছেন, আক্রমণ অব্যাহত রাখার ফলে তেহরানের জনগণকে ‘মূল্য দিতে হবে’। অন্যদিকে ইরানের রাষ্ট্রপতি ইজরায়েলের আক্রমণকে ‘গণহত্যা আগ্রাসন’ হিসাবে বর্ণনা করে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন।
