আজকাল ওয়েবডেস্ক: চন্দ্র অভিযানকে পুরোপুরি রূপান্তরিত করার সম্ভাবনাময় এক সাফল্যে। চিনের বিজ্ঞানীরা এমন একটি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন যা চন্দ্র-মাটি থেকে জল আহরণ করে তা অক্সিজেন এবং জ্বালানির জন্য গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক পদার্থে রূপান্তর করতে সক্ষম। এর ফলে পৃথিবী থেকে চাঁদে জীবনধারণে প্রয়োজনীয় সম্পদ পাঠানোর প্রয়োজন অনেকাংশে হ্রাস পাবে।


এই গবেষণাটি ১৬ জুলাই ‘জুল’ (Joule) নামক সেল প্রেস জার্নালে প্রকাশিত হয় এবং সেখানে দেখানো হয়েছে কীভাবে চাঁদের নিজস্ব সম্পদ ব্যবহার করে মহাকাশচারীদের জন্য “ক্ষুদ্র জীবন-সমর্থন ব্যবস্থা” তৈরি করা যেতে পারে। 


চিনের হংকং শেনঝেন-স্থ চাইনিজ ইউনিভার্সিটির গবেষক লু ওয়াং বলেন, “আমরা কখনও কল্পনাও করিনি চন্দ্র-মাটির মধ্যে এমন ‘জাদু’ লুকিয়ে আছে।”


তাঁর মতে, সবচেয়ে বড় বিস্ময় ছিল এই যে চাঁদের মাটি থেকে জল সংগ্রহ এবং একই প্রক্রিয়ায় আলোর মাধ্যমে মহাকাশচারীদের নিঃশ্বাস থেকে নির্গত কার্বন ডাই-অক্সাইডকে অক্সিজেন এবং জ্বালানির কাঁচামালে রূপান্তর সফলভাবে সম্ভব হয়েছে। ওয়াং আরও বলেন, “এই পদ্ধতিতে শক্তির দক্ষ ব্যবহার সম্ভব হয় এবং চন্দ্রাভিযান পরিচালনার জটিলতা অনেক কমে যায়।”

আরও পড়ুন: এসআইপি থেকে ৫ কোটি টাকা পেতে হলে কীভাবে পরিকল্পনা করবেন, দেখে নিন বিস্তারিত


চাঁদে বসবাসযোগ্য বাড়ি স্থাপনের প্রধান বাধা হল পৃথিবী থেকে জল ও জ্বালানি পাঠানোর বিশাল ব্যয় ও জটিলতা। পৃথিবী থেকে এক গ্যালন জল পাঠাতে গড়ে প্রায় ৮৩,০০০ মার্কিন ডলার খরচ হয় যা চাঁদের মাটিতে বাড়ি তৈরিকে অত্যন্ত ব্যয়বহুল করে তোলে। চিনের চাং’ই-৫ অভিযানে সংগৃহীত মাটির বিশ্লেষণে প্রমাণ পাওয়া গেছে যে সেখানে জলীয় খনিজ পদার্থ রয়েছে যা ভবিষ্যতের মহাকাশচারীরা কাজে লাগাতে পারবেন।
আগের যেসব পদ্ধতিতে চাঁদের মাটি থেকে জল আহরণ করা হতো তা ছিল জটিল, বহু ধাপে বিভক্ত ও উচ্চ শক্তি-নির্ভর। সেইসব পদ্ধতিতে মহাকাশচারীদের কার্বন ডাই-অক্সাইড পুনঃব্যবহারের ব্যবস্থা ছিল না, ফলে অক্সিজেন ও জ্বালানির জন্য তা কাজে আসতো না।


চিনের গবেষকদল নতুন যে প্রযুক্তি এনেছে তা অনেক বেশি কার্যকর। তারা ইলমেনাইট নামক চাঁদের প্রচুর পরিমাণে পাওয়া এক ধরনের কালো খনিজ ব্যবহার করেছেন যা জল ধারণ করে। পাশাপাশি, তারা সূর্যালোক-নির্ভর ফোটোথার্মাল রিঅ্যাক্টর ব্যবহার করে জল ও আলো দুটোকে কাজে লাগিয়ে একটি সহজ ও টেকসই প্রক্রিয়া তৈরি করেছেন।


তবে এখনও বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। চাঁদের কঠিন পরিবেশ, বিভিন্ন মাটির গঠন, তীব্র বিকিরণ এবং তাপমাত্রার হঠাৎ হঠাৎ বড় রকমের ওঠানামা সবই বড় বাধা। আরও একটি সীমাবদ্ধতা হল বর্তমান প্রযুক্তির দক্ষতা এখনও চাঁদে স্থায়ী বসবাসের জন্য যথেষ্ট নয়। মহাকাশচারীদের নিঃশ্বাস থেকে পাওয়া কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণও চাহিদা মেটাতে পারবে না। গবেষণা দলের বক্তব্য, “এই প্রযুক্তি বাস্তবে কার্যকর করতে হলে প্রযুক্তিগত বাধা এবং উন্নয়ন, স্থাপন ও পরিচালনার বিপুল খরচ কাটিয়ে ওঠা অত্যন্ত জরুরি।”


তবুও, এই গবেষণা চাঁদের ওপর দীর্ঘমেয়াদি মানব অভিযানের পথে এক সাহসী পদক্ষেপ যা ভবিষ্যতে মহাকাশ কলোনি গঠনের স্বপ্নকে বাস্তবের আরও কাছাকাছি নিয়ে এসেছে।