আজকাল ওয়েবডেস্ক: পৃথিবীর একদম কাছ ঘেঁষে গত সপ্তাহে ছুটে গেছে এক ক্ষুদে গ্রহাণু। যে দূরত্বে এটি এসেছিল, তা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন-এর কক্ষপথের সমান প্রায়। এই ঘটনাকে এখন পর্যন্ত রেকর্ড করা দ্বিতীয়-নিকটতম পরিচিত ‘নন-ইমপ্যাক্টিং’ ফ্লাইবাই বা অতিক্রমণ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে।
 
 গ্রহাণুটির নাম দেওয়া হয়েছে ২০২৫ টিএফ। এটি ১ অক্টোবর, বুধবার অ্যান্টার্কটিকার উপরে দিয়ে ছুটে যায়, প্রায় ৪২৮ কিলোমিটার উচ্চতায়। তুলনার জন্য বলা যায়, ISS সাধারণত ৩৭০ থেকে ৪৬০ কিলোমিটার উচ্চতায় পৃথিবীর চারপাশে ঘোরে। অর্থাৎ, এই মহাজাগতিক পাথরটি মানবনির্মিত স্টেশনের কাছাকাছি দিয়েই চলে গেছে। একেবারে মহাজাগতিক মাত্রায় ‘চুলচেরা’ দূরত্বে।
 
 তবুও, এটি ইতিহাসের সবচেয়ে কাছাকাছি আসা গ্রহাণু নয়। সেই রেকর্ড এখনও ২০২০ ভিটিফোর নামের এক ছোট্ট পাথরের দখলে, যা ২০২০ সালের নভেম্বরে পৃথিবীর মাত্র ৩৬৮ কিলোমিটার দূর দিয়ে ছুটে গিয়েছিল। অবশ্যই এখানে কথা হচ্ছে সেই সব গ্রহাণুর, যেগুলো পৃথিবীতে আঘাত করেনি  অর্থাৎ ‘নন-ইমপ্যাক্টিং’ ফ্লাইবাই। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এমনও ঘটে যে, কোনও গ্রহাণু বায়ুমণ্ডলে ঢুকে কিছুটা পুড়ে গিয়ে আবার মহাকাশে ফিরে যায়, অনেকটা পাথর ছুঁড়ে জলের উপর দিয়ে লাফিয়ে যাওয়ার মতো।
আরও পড়ুন: বেঁকে বসলেন জিতন রাম মাঝি, বিহার ভোটের আগে এনডিএ শিবিরে চরম অস্বস্তি
 
 তবে পৃথিবীর ইতিহাসে এমন বহু গ্রহাণু এসেছে, যারা আরও কাছে কিংবা সরাসরি আঘাত করেছে। এর সবচেয়ে নাটকীয় উদাহরণ নিশ্চয়ই ডাইনোসরদের বিলুপ্তি ঘটানো বিশাল গ্রহাণু। আর আমরা যে ঘটনাগুলো জানি, তা কেবল বর্তমান প্রযুক্তিতে ধরা পড়া তথ্যের ওপর নির্ভর করে। বাস্তবে, গত ৪.৫ বিলিয়ন বছরের পৃথিবীর ইতিহাসে আরও বহুবার এর চেয়ে কাছাকাছি গ্রহাণু এসে গিয়েছিল, যার খবর আমাদের জানা নেই।
 
 যদি ২০২৫ টিএফ সত্যিই পৃথিবীতে আঘাত করত, তবুও তা কোনও বিপদের কারণ হতো না। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের হিসেবে, এর আকার মাত্র ১ থেকে ৩ মিটার অর্থাৎ একটি ছোট গাড়ির সমান। তাই এটি বায়ুমণ্ডলে ঢুকে সম্পূর্ণ পুড়ে যেত বা আংশিকভাবে ভেঙে পড়ে একটি দারুণ উল্কাবৃষ্টি তৈরি করত যা অ্যান্টার্কটিকার আকাশে এক চমৎকার আলোক প্রদর্শনী ছাড়া আর কিছু নয়। হয়তো কোনও সৌভাগ্যবান পেঙ্গুইনের খুঁজে পাওয়ার মতো ছোট্ট এক উল্কাপিণ্ডও রেখে যেত।
 
 আগ্রহজনক বিষয় হল, গ্রহাণুটি আবিষ্কৃত হয়েছে এর অতিক্রমণের পরেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনায় অবস্থিত কিট পিক-বক মানমন্দির প্রথম এটি শনাক্ত করে। পরে বিজ্ঞানীরা দেখতে পান যে, এটি এর আগেই ক্যাটালিনা স্কাই সার্ভের তথ্যচিত্রে ধরা পড়েছিল। 
 
 বর্তমানে ২০২৫ টিএফ দ্রুতগতিতে পৃথিবী থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, কিন্তু এটি আবার ফিরে আসবে বলেই ধারণা। নাসার জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরির পূর্বাভাস অনুযায়ী, এটি ২০৮৭ সালের এপ্রিলে আবার পৃথিবীর আশেপাশ দিয়ে অতিক্রম করবে। তবে পরের বার এটি যথেষ্ট নিরাপদ দূরত্বে থাকবে। যা চাঁদের দূরত্বের প্রায় ২১ গুণ।
 
 অতএব, এই ক্ষুদে গ্রহাণুর অতিক্রমণ আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, মহাবিশ্ব কতটা গতিশীল ও অনিশ্চিত। একদিকে, এটি বিজ্ঞানীদের জন্য এক অসাধারণ পর্যবেক্ষণ সুযোগ, অন্যদিকে মানবজাতির জন্য এক বিরাট কথা। আমরা এক অনন্ত মহাজাগতিক নাচের মধ্যে ক্ষুদ্র এক গ্রহের যাত্রী মাত্র।
