আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর কাছাকাছি আসা হাজারো গ্রহাণুর ওপর নজর রাখেন, কিন্তু তাদের মধ্যে কয়েকটি বিশেষভাবে “সম্ভাব্য বিপজ্জনক গ্রহাণু” হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে। এদের আকার বড় এবং এদের কক্ষপথ পৃথিবীর অদূর দিয়ে অতিক্রম করে। ফলে ভবিষ্যতে কোনও সংঘর্ষের আশঙ্কা সম্পূর্ণ উড়িয়ে দেওয়া যায় না। নিচে এমন ১০টি গ্রহাণুর তালিকা দেওয়া হল যেগুলির গতিবিধির ওপর আন্তর্জাতিক মহাকাশ সংস্থাগুলি নিবিড় নজর রাখছে।
১. 2023 DW: ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে আবিষ্কৃত এই গ্রহাণুটি শুরুতেই আলোচনায় আসে, কারণ প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী এটি ২০৪৬ সালে পৃথিবীতে আঘাত হানতে পারে—এমন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল। প্রায় ৫০ মিটার ব্যাসের এই গ্রহাণু বর্তমানে নাসার Sentry পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থার নজরদারিতে রয়েছে। এখন পর্যন্ত আঘাতের সম্ভাবনা খুবই কম, তবু এটি নিয়মিত পর্যবেক্ষণের আওতায় আছে।
২. Bennu: প্রায় ৪৯০ মিটার প্রশস্ত এই বিখ্যাত গ্রহাণুর সঙ্গে পৃথিবীর সংঘর্ষের সম্ভাবনা ১–এর মধ্যে ২,৭০০। সম্ভাব্য সংঘর্ষকাল ধরা হয়েছে ২১৭৫ থেকে ২১৯৯ সালের মধ্যে। যদিও সেটি বহু দূরের ভবিষ্যৎ, তবু ২১৩৫ সালের নিকটতম অতিক্রমণ এর কক্ষপথ পরিবর্তন করতে পারে, তাই এটি নজরদারিতে রয়েছে।
৩. 1950 DA: এটি এক বিশালাকার গ্রহাণু, ব্যাস ১.৩ কিলোমিটার। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন এটি ২৮৮০ সালে পৃথিবীর কাছাকাছি আসবে। এর কক্ষপথে কয়েকটি “গ্র্যাভিটেশনাল কী–হোল” রয়েছে—যেখানে প্রবেশ করলে ভবিষ্যতে সংঘর্ষের সম্ভাবনা বাড়তে পারে। যদি এটি আঘাত হানে, তবে বিশ্বব্যাপী ধ্বংসযজ্ঞ ঘটতে পারে।
৪. 2005 ED224: প্রায় ৭০ মিটার ব্যাসের এই গ্রহাণুর একটি সম্ভাব্য সংঘর্ষ তারিখ ছিল ১১ মার্চ ২০২৩, যা পরে বাতিল হয়েছে। তবে ২০৬০–এর দশকে এটি আবার কাছাকাছি আসবে। ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার NEO Coordination Centre এর ওপর নিরন্তর নজর রাখছে।
৫. 2009 FD: প্রায় ৪০০ মিটার প্রশস্ত এই গ্রহাণুটি ২১৮৫ থেকে ২১৯৬ সালের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটাতে পারে বলে প্রাথমিক ধারণা। তবে ২০৬৭ সালের পৃথিবী সংস্পর্শ এর কক্ষপথে পরিবর্তন আনতে পারে, তাই এটি দীর্ঘমেয়াদি পর্যবেক্ষণের তালিকায় রয়েছে।
আরও পড়ুন: বায়ুদূষণ থেকে বাড়ছে ডায়াবেটিসের সমস্যা, জানিয়ে দিলেন চিকিৎসকরা
৬. Apophis: “God of Chaos” নামে পরিচিত এই গ্রহাণুটি ২০০৪ সালে আবিষ্কারের পর আতঙ্ক ছড়িয়েছিল, কারণ তখন ধারণা ছিল ২০২৯ সালে এটি পৃথিবীতে আঘাত করতে পারে। পরে সেই আশঙ্কা নাসা বাতিল করে। তবে এর ২০৬৮ সালের ঘনিষ্ঠ অতিক্রমণ এখনও মনোযোগের দাবি রাখে। আকারে এটি প্রায় ৩৪০ মিটার।
৭. 2010 RF12: মাত্র ৭ মিটার ব্যাসের হলেও এর আঘাতের সম্ভাবনা প্রায় ৫ শতাংশ—যা পরিচিত নিকট–পৃথিবী বস্তুগুলির মধ্যে অন্যতম উচ্চতম। এটি বড় আকারের নয়, তবে আঘাত ঘটলে চেলিয়াবিন্স্ক বিস্ফোরণের মতো একটি বায়ুমণ্ডলীয় বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে।
৮. 2000 SG344: প্রায় ৩৭ মিটার আকারের এই গ্রহাণুর একাধিক সম্ভাব্য অতিক্রমণ রয়েছে ২০৩০ থেকে ২০৬০ সালের মধ্যে। এটি বর্তমানে শতাব্দীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ NEO, কারণ এর আঘাত সম্ভাবনা সম্পূর্ণ শূন্য নয়।
৯. 2011 AG5: প্রায় ১৪০ মিটার প্রশস্ত এই গ্রহাণু ২০৪০ সালে পৃথিবীর ১.১ মিলিয়ন কিলোমিটার দূর দিয়ে অতিক্রম করবে—এটি চাঁদের দূরত্বের প্রায় তিনগুণ। আপাতত কোনো সংঘর্ষের আশঙ্কা নেই, তবে নাসা এটি পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যাচ্ছে।
১০. 1979 XB: প্রায় ৭০০ মিটার ব্যাসের এই বৃহদাকার গ্রহাণুটি ২০৫৬ সালে পৃথিবীর কাছাকাছি দিয়ে যাবে। যদিও বর্তমান হিসাব অনুযায়ী আঘাতের সম্ভাবনা কম, কিন্তু এর আকার এতটাই বিশাল যে এটি নাসার তালিকায় রয়েছে।
এই ১০টি গ্রহাণু বিজ্ঞানীদের কাছে “নজরদারির বিশেষ বস্তু”। অধিকাংশের সংঘর্ষের সম্ভাবনা এখন খুবই ক্ষীণ, কিন্তু মহাকর্ষীয় প্রভাব, কক্ষপথ পরিবর্তন কিংবা সূক্ষ্ম অনিশ্চয়তা ভবিষ্যতে ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তাই নাসা, ইএসএ ও অন্যান্য মহাকাশ সংস্থা নিরন্তরভাবে এই সম্ভাব্য বিপজ্জনক গ্রহাণুগুলোর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছে, যেন মানবজাতি আগাম সতর্ক থাকতে পারে।
