আজকাল ওয়েবডেস্ক: আলোর উৎসবের রাতে ঘনাল এক ভয়ঙ্কর অন্ধকার। দীপাবলির আলোকছটায় মেতে উঠেছিল গোটা শহর। আলিপুরের বিদ্যাসাগর কলোনি থেকে শিউরে ওঠার মতো এক খবর ছড়িয়ে পড়ল।
এক পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রীকে উদ্ধার করা হল ঝুলন্ত অবস্থায়! ঘটনাটি ঘটেছে আলিপুর থানার অন্তর্গত ডি.এল খান রোডের বিদ্যাসাগর কলোনিতে। মৃত নাবালিকার বয়স মাত্র ১১ বছর। পরিবারের একমাত্র মেয়ে, পড়াশোনা করত কলকাতার এক নামী বেসরকারি স্কুলে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার সন্ধ্যায় বাড়িতে একা ছিল ওই ছাত্রী। বাবা ছিলেন অফিসে, মা গিয়েছিলেন কালীপুজোর বাজারে। বাড়ি ফিরে বারবার মেয়েকে ডাকেও সাড়া না পাওয়ায় মায়ের মনে অজানা আশঙ্কা জাগে।
চারপাশে খোঁজাখুঁজি করতে করতে যখন ঘরের বড় আলমারির দরজা খোলেন, তখনই দেখতে পান ভয়ঙ্কর দৃশ্য। দেখা যায়, আলমারির ভিতরে ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে নাবালিকা মেয়েটির মৃতদেহ। পরিবারের চিৎকারে ছুটে আসেন প্রতিবেশীরা।
খবর যায় আলিপুর থানায়। পুলিশ এসে দেহ উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। এরপরই দেহ পাঠানো হয় ময়নাতদন্তের জন্য। সোমবার কালীপুজোর রাতে নাবালিকার মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায় পুলিশ।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, এটি আত্মহত্যার ঘটনা হতে পারে। তবে খুনের সম্ভাবনাও পুরোপুরি উড়িয়ে দিচ্ছে না তদন্তকারীরা। ঘটনাস্থল থেকে কোনও সুইসাইড নোট পাওয়া যায়নি। ফলে মৃত্যু আত্মঘাতী না পরিকল্পিত খুন—তা নিশ্চিত করতে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে খবর, নাবালিকার পরিবারের সদস্য এবং স্কুলের সহপাঠীদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানা গেছে। ইতিমধ্যেই আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে, এবং ফরেনসিক দলও ঘটনাস্থল থেকে নানা নমুনা সংগ্রহ করেছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায়, ‘ও মেয়ে খুবই শান্ত স্বভাবের ছিল। পড়াশোনায় ভালো। এমন কিছু করবে—ভাবাই যায় না। তবে ওর বাবা-মা প্রচন্ড অত্যাচার করত মেয়েটির ওপরে। একটু পড়াশোনা না পারলেই ভয়ঙ্কর ভাবে মারত। মাঝেমধ্যেই চুলের মুঠি ধরে টেনে হিঁচড়ে বার করে নিয়ে আসত রাস্তায়।’
ওই নাবালিকাকে যে গৃহশিক্ষক পড়াতেন তিনি জানিয়েছেন, একটু পড়াশোনা না পারলেই অমানুষিক অত্যাচার করা হত মেয়েটির ওপরে। মাঝেমধ্যেই গৃহশিক্ষকের সামনেই নাবালিকার গায়ে হাত তুলত পরিবার।
এদিন পরিবারের লোকজনের ওপর চড়াও হয় এলাকাবাসীরা। বাবা-মাকে রীতিমত কিল, চড়, ঘুষি, এমনকি জুতোপেটাও করা হয়। তাদের ইতিমধ্যেই আটক করেছে পুলিশ। তদন্তকারীদের মতে, ‘ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে এলেই মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।
আপাতত সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’ স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এই নাবালিকা অভয়া কাণ্ডে যাবজ্জীবন সাজা প্রাপ্ত সঞ্জয় রায়ের দিদির মেয়ে। স্থানীয় সূত্রে খবর, নাবালিকা সৎ মায়ের সঙ্গে থাকতেন।
আদৌ ওই নাবালিকার ওপর পরিবার অত্যাচার চালাত কিনা তা তদন্ত করে দেখছে পুলিশ। এদিকে, নাবালিকার অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘিরে স্থানীয়রা ক্ষোভ উগরে দেয় নাবালিকার বাবা-মায়ের ওপর। পরিবারের ওপর চড়াও হয়ে মারধর করে। পরে আলিপুর থানার পুলিশ তাদের এসে উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
