ক্যানসার নিজেই এক ভয়াবহ রোগ, তবে যদি পাকস্থলীর ক্যানসার হয়, তাহলে তার ফলাফল আরও মারাত্মক হতে পারে। এর প্রধান কারণ হল, পাকস্থলীর ক্যানসারকে প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা খুব কঠিন। এটাই এর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। সন্দেহ নেই, আজ বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে নানা পদ্ধতিতে ক্যানসারের চিকিৎসা সম্ভব হয়েছে, কিন্তু এখনো সময়মতো শনাক্তকরণ একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সঠিক সময়ে ধরা পড়লে এবং চিকিৎসা হলে পাকস্থলীর ক্যানসার নিরাময় করা সম্ভব বা অন্তত প্রতিরোধ করা যায়। কিন্তু প্রায়ই তা হয় না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই ক্যানসার ধরা পড়ে তখন, যখন এটি পাকস্থলীর দেওয়ালের ভিতর গভীরভাবে ছড়িয়ে পড়ে কিংবা আরও বাইরে চলে যায়। মিয়ামি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা ড. শ্রেয়া কুমার বলেন, দেরিতে শনাক্ত হওয়াই পাকস্থলীর ক্যানসারের রোগীদের বেঁচে থাকার হার কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ। প্রশ্ন হল—এটি দ্রুত ধরা পড়ার উপায় কী? অথবা কোন কোন বড় সংকেত দেখে পাকস্থলীর ক্যানসারকে চিহ্নিত করা সম্ভব?
পাকস্থলীর ক্যানসারের ৫টি বড় লক্ষণ
পেটে ব্যথা এবং কম খিদে
ড. শ্রেয়া কুমার জানান, সবচেয়ে বড় বিপদ হল—যখন পেটে হালকা ব্যথা হয়, আমরা তা প্রায়শই অবহেলা করি। অথচ এটি পাকস্থলীর ক্যানসার বা গ্যাস্ট্রিক ক্যানসারের একটি বড় সংকেত। সব পেটের ব্যথা যদিও ক্যানসারের কারণে হয় না, কিন্তু পেটে ব্যথার পাশাপাশি খিদে না পেলে ক্যানসারের আশঙ্কা বেড়ে যায়। এর সঠিকভাবে শনাক্তকরণ হয় এন্ডোস্কোপির মাধ্যমে, কিন্তু এই বিষয়ে সুস্পষ্ট গাইডলাইন না থাকায় চিকিৎসকরা প্রায়ই সাধারণ ওষুধ দিয়ে থেমে যান। ফলে রোগীরাও ওষুধ খেয়ে চিন্তা এড়িয়ে যান। কিন্তু যদি ব্যথা বারবার হয়, তবে অবশ্যই দ্রুত এন্ডোস্কোপি টেস্ট করানো উচিত।
পেটে ভারী ভাব থাকা
মায়ো ক্লিনিক জানায়, যদি আপনার সবসময় পেটে ভারী ভাব থাকে বা ব্লোটিং হয়, তবে এটিও ক্যানসারের একটি গুরুতর সংকেত হতে পারে। সাধারণত মানুষ এটিকে অবহেলা করে। কিন্তু খাওয়ার পর যদি প্রতিবার পেটে ভারী লাগে এবং ওষুধ খাওয়ার পরও সমস্যা না সারে, তবে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত এবং দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
অবসাদ এবং দুর্বলতা
পেটের সমস্যার সঙ্গে যদি সব সময় ক্লান্তি থাকে বা অতিরিক্ত দুর্বলতা অনুভূত হয়, তবে এটিও ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে। পেটের সমস্যার পাশাপাশি যদি অবসাদ, বমি, বমি বমি ভাব, হাড় জ্বালা, সামান্য খাওয়ার পরেই পেট ভরে যাওয়ার মতো অনুভূতি হয়, তবে পাকস্থলীর ক্যানসারের আশঙ্কা বাড়ে।
মল কালো হয়ে যাওয়া
উপরের সমস্যাগুলির পাশাপাশি যদি মল কালো হয়ে যায়, তবে গ্যাস্ট্রিক ক্যানসারের সম্ভাবনা আরও প্রবল হয়। যদিও এই লক্ষণ সাধারণত শেষ পর্যায়ে দেখা দেয়, যখন ক্যানসার পাকস্থলীর ভিতর ছড়িয়ে পড়ে এবং অন্য অংশেও চলে যায়। তাই এমন হলে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি।
ওজন কমে যাওয়া
প্রায় সব ধরনের ক্যানসারের অন্যতম বড় লক্ষণ হল—পরিশ্রম ছাড়াই ওজন হঠাৎ করে কমতে শুরু করা। আপনি স্বাভাবিকভাবে খাচ্ছেন, বিশেষ কোনও পরিশ্রমও করছেন না, অথচ ওজন ক্রমেই কমছে। এটি গ্যাস্ট্রিক ক্যানসারের শক্তিশালী সঙ্কেত। কিছু গুরুতর পেটের সমস্যাতেও ওজন কমতে পারে, তবে পেটের অসুবিধার সঙ্গে সরাসরি ওজন কমে গেলে তা ক্যানসারের ইঙ্গিত দেয়।
