আজকাল ওয়েবডেস্ক: পৃথিবী থেকে যদি একদিন মানব সভ্যতা সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়ে যায়, তবে পরবর্তী সভ্যতার পতাকা কোন প্রাণীর হাতে উঠবে? দীর্ঘদিন ধরেই এই প্রশ্ন বিজ্ঞানী, দার্শনিক ও লেখকদের মনে কৌতূহল সঞ্চার করছে। কেউ কেউ বলেন প্রাণী নয়, রোবট! কারও মতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। কেউ আবার ভিনগ্রহের প্রাণীদের কথা তোলেন। তবে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক টিম কোলসনের বক্তব্য অন্য। তাঁর মতে, মানুষের পরে সভ্যতার সম্ভাব্য উত্তরাধিকারী হতে পারে অক্টোপাস!

অক্টোপাস কেন?
অধ্যাপক কোলসনের মতে, অক্টোপাস এমন এক প্রাণী যার বুদ্ধিমত্তা স্তন্যপায়ীদের সঙ্গেও টক্কর দিতে পারে। তারা ধাঁধা সমাধান করতে পারে, বোতল খুলতে জানে, এমনকি ছোটখাটো যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতেও সক্ষম। তাদের শরীরের প্রতিটি বাহুই কার্যত এক একটি আলাদা স্নায়ুতন্ত্রের মতো কাজ করে। তাই কেন্দ্রীভূত নয়, বরং বিকেন্দ্রীকৃত চিন্তাশক্তি রয়েছে তাদের। আরও আশ্চর্যের বিষয় তারা রঙ পরিবর্তনের মাধ্যমে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে, যা ভবিষ্যতে ভাষার বিকল্প হিসেবে কাজ করতে পারে।

সীমাবদ্ধতা কোথায়?
তবে সবকিছু এত সহজ নয়। মানুষের মতো দীর্ঘ আয়ু নেই অক্টোপাসের, বেশিরভাগ প্রজাতিই তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে মারা যায়। অধিকাংশ অক্টোপাস একাকী জীবনযাপন করে, দলবদ্ধ ভাবে বসবাস করে না। সন্তান জন্মের পর বহু মা অক্টোপাস মারা যায়, ছানারা বড় হয় একা একাই। ফলে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে জ্ঞান সঞ্চার হয় না, যা সভ্যতা গড়ে তোলার অন্যতম প্রধান শর্ত। কোলসনের নিজের বক্তব্য, এই সীমাবদ্ধতাগুলো বিবর্তনের পথে হয়তো একদিন কাটিয়ে উঠতে পারবে তারা।
আরও পড়ুন: মধুচক্র চালানোয় অভিযুক্ত অভিনেত্রী অনুষ্কা দাস! সেক্স র‍্যাকেট থেকে উদ্ধার বাংলা সিরিয়ালের আরও ২ নায়িকা! তুলকালাম মহারাষ্ট্রে

অলস কল্পনা না সম্ভাবনা?
বিজ্ঞানী সমাজে অবশ্য এই নিয়ে মতভেদ প্রবল। অনেকের মতে, সামাজিক কাঠামো ছাড়া কোনও উন্নত সভ্যতার বিকাশ সম্ভব নয়। অক্টোপাসদের আচরণ মূলত স্বতন্ত্র তারা প্রয়োজনে বুদ্ধি খাটায়, কিন্তু সম্মিলিত উদ্যোগ নেই। তবু সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, পরিবেশগত চাপে প্রাণীরা দ্রুত অভিযোজন ক্ষমতা গড়ে তুলতে পারে। মানুষের মতো জটিল না হলেও, অক্টোপাসরা হয়তো নিজেদের ভিন্ন ধরনের সামাজিক কাঠামো তৈরি করতে পারে ভবিষ্যতে।

অধ্যাপক কোলসন অবশ্য কল্পনা করেছেন, যদি মানুষ একদিন জলবায়ু পরিবর্তন, পারমাণবিক যুদ্ধ বা অন্য কোনও বিপর্যয়ে বিলুপ্ত হয়, তবে কয়েক হাজার বা কয়েক মিলিয়ন বছরের মধ্যে সাগরের গভীর অন্ধকার থেকে উঠে আসতে পারে এক নতুন সভ্যতা। হয়তো সেটি হবে জলের তলায় হারিয়ে যাওয়া কিংবদন্তির শহর ‘অ্যাটলান্টিস’-এর মতো জগৎ, যেখানে অক্টোপাসরা নিজেদের স্বতন্ত্র কৌশলে সমাজ গড়বে।

আরও পড়ুন: মধুচক্র চালানোয় অভিযুক্ত অভিনেত্রী অনুষ্কা দাস! সেক্স র‍্যাকেট থেকে উদ্ধার বাংলা সিরিয়ালের আরও ২ নায়িকা! তুলকালাম মহারাষ্ট্রে

বিশেষজ্ঞরা অবশ্য সতর্ক করছেন, এই তত্ত্ব অনুমান ছাড়া আর কিছু নয়। এমনকী এই ভাবনার পিছনে পর্যাপ্ত প্রমাণও নেই। তবে মানুষের মতো নয়, সম্পূর্ণ ভিন্ন পথে গিয়ে যদি কোনও প্রজাতি সুদূর ভবিষ্যতে সভ্যতা গড়ে তোলে, তবে অক্টোপাস সেই তালিকায় শীর্ষে থাকবে এ নিয়ে অনেকেই একমত।

অক্টোপাসকে নিয়ে বহুদিন ধরেই মানুষের কৌতূহল প্রবল। তাদের রহস্যময় বুদ্ধিমত্তা, অদ্ভুত শরীর আর অভূতপূর্ব অভিযোজন ক্ষমতা বারবার চমকে দিয়েছে বিজ্ঞানীদের। এখন প্রশ্ন একটাই মানুষের পতনের পর সত্যিই কি সমুদ্রের অন্ধকার গহ্বর থেকে জেগে উঠবে অক্টোপাস সভ্যতা? উত্তর আজ নেই। কিন্তু কল্পনার ডানা মেলে এই প্রশ্নই আজ চর্চার কেন্দ্রবিন্দু।