আজকাল ওয়েবডেস্ক: একবিংশ শতকের ভারতেও যে কতরকম উপায়ে প্রতারণার জাল বিছানো হতে পারে, তার সাম্প্রতিক উদাহরণ মিলল বিহারে। নিঃসন্তান মহিলাদের অন্তঃসত্ত্বা করতে পারলে মিলবে লক্ষ লক্ষ টাকা – এমনই এক ‘চাকরি’র বিজ্ঞাপন দিয়ে অভিনব প্রতারণা চক্র ফেঁদেছিল একদল দুষ্কৃতী। সেই চাকরি পেতে ঘুষও দিয়েছেন বহু মানুষ। অবশেষে এই চক্রের পর্দাফাঁস করেছে বিহারের নওয়াদা জেলা পুলিশ। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে।


পুলিশ সূত্রে খবর, চক্রটি ‘অল ইন্ডিয়া প্রেগনেন্ট জব সার্ভিস’- এই চটকদার নামে সোশ্যাল মিডিয়া এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বিজ্ঞাপন দিত। বিজ্ঞাপনে পুরুষদের প্রস্তাব দেওয়া হতো যে, যেসব মহিলা সন্তানধারণে অক্ষম, তাদের অন্তঃসত্ত্বা করতে সাহায্য করলে ৫ লক্ষ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত উপার্জন করা সম্ভব। শুধু তাই নয়, কাজে সফল না হলেও ৫০ হাজার থেকে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ‘সান্ত্বনা পুরস্কার’ দেওয়ার মিথ্যা আশ্বাসও দেওয়া হতো। বেকারত্ব এবং সহজে অর্থ উপার্জনের লোভে বেশ কিছু যুবক এই ফাঁদে পা দেন।

তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, আগ্রহীরা যোগাযোগ করলে চক্রের সদস্যরা প্রথমে রেজিস্ট্রেশন ফি, সদস্যপদ গ্রহণ বা অন্য কোনও কারণ দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিত। এরপর আবেদনকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য, ছবি ইত্যাদি সংগ্রহ করে রাখা হত। কেউ যদি বুঝতে পেরে টাকা ফেরত চাইতেন বা পিছিয়ে আসতে চাইতেন, তখন সেই ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস করে দেওয়ার বা অন্য উপায়ে হেনস্থা করার হুমকি দিয়ে ব্ল্যাকমেল করা হতো বলে অভিযোগ।

নওয়াদা জেলার ডেপুটি পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট ইমরান পারভেজ সংবাদমাধ্যমকে জানান, "এই চক্রটি একটি ভুয়ো ওয়েবসাইট এবং ফেসবুক বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে গ্রাহকদের প্রলুব্ধ করত। আমরা গোপন সূত্রে খবর পেয়ে তদন্ত শুরু করি। ইতিমধ্যেই তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।" ধৃতদের নাম প্রিন্স রাজা, ভোলা কুমার এবং রাহুল কুমার।

এই বিষয়ে তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ শুভ্রনীল দেবনাথের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “জনসাধারণকে এই ধরনের অবাস্তব ও লোভনীয় বিজ্ঞাপন এবং কাজের প্রস্তাব সম্পর্কে নিজেই সতর্ক হতে হবে। অনলাইন জগতে চাকরির নামে প্রতারণা নতুন নয়, তবে এই প্রতারণার কৌশল প্রমাণ করে যে মানুষ যেন তেন প্রকারে টাকা উপার্জনের চেষ্টা করেন। হয়তো দারিদ্র্যের তাড়নায় যুক্তিবোধ হারিয়ে যায়। অনলাইনে যে কোনও চাকরির বিজ্ঞাপন দেখলে আগে যাচাই করুন সোর্সটি নির্ভরযোগ্য কি না। যাঁরা চাকরি দিচ্ছেন তাঁদের ইতিহাস কেমন। কোম্পানির ইতিহাস কেমন। সব কিছু যাচাই করে নিশ্চিত হওয়ার পরেই নিজের ব্যক্তিগত তথ্য দিন, আগে নয়।”