পৃথিবীর জুড়ে অনবরত বিস্ময় তৈরি করে চলেছে বিজ্ঞান। সমাজ মাধ্যমের যুগে যার আভাস পৌঁছে যাচ্ছে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের আশীর্বাদে মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে। আমাদের আশেপাশে অনেক শতাযুর মানুষের খোঁজ পাওয়া যায়। কিন্তু কখনও মৃতের রাজ্য থেকে হুবহু একই রকম মুখের অবয়ব নিয়ে ফিরে পেতে দেখেছেন? হকচকিত হয়ে গেলেন তো! শুনতে খানিকটা জটিল মনে হলেও তেমনই এক ঘটনায় কামাল করে দেখিয়েছে বিজ্ঞান।
সম্প্রতি নতুন এক সাফল্য মিলেছে বিজ্ঞান জগতে। প্রায় ১০ হাজার বছর আগে বেলজিয়ামে বসবাসকারী এক মহিলার মুখের অবয়ব পুনর্গঠন করেছেন বিজ্ঞানীরা। ডিনান্টের কাছে মার্গাক্স গুহায় পাওয়া গিয়েছে মানবীর দেহাবশেষ। যা প্রাচীন ডিএনএ এবং কঙ্কালের প্রমাণের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করা করা হয়েছে। গবেষণার ফলাফলে ধরা পড়ে যে ওই মহিলার ফর্সা ত্বক, নীল চোখ এবং টিকালো নাক ছিল এবং তিনি একজন মধ্যপ্রস্তর যুগে জীবিত ছিলেন। যদিও তাকে বাস্তবে জীবিত করা হয়নি, তবে আধুনিক প্রযুক্তি ও প্রাচীন ডিএনএ ব্যবহার করে তার জীবন্ত মুখের ছবি ও ত্রিমাত্রিক (থ্রি ডি)মডেল বানানো হয়েছে। যা দেখে মনে হবে যেন ওই মানবী জীবন্ত সামনে বসে আছেন।
আরও পড়ুনঃ শ্যাম্পু-সাবানে ক্যানসারের বিষ! ত্বক-চুলের যত্নের আড়ালে লুকিয়ে মত্যুফাঁদ? গবেষণায় উঠে এল ভয়াবহ তথ্য
কীভাবে সম্ভব হল এই অসাধ্য সাধন? প্রত্নতাত্ত্বিকরা একটি প্রাচীন প্রত্নস্থল থেকে মানবীর কঙ্কাল উদ্ধার করেন। হাড় ও দাঁতের নমুনা নিয়ে বিজ্ঞানীরা প্রাচীন ডিএনএ সংগ্রহ করেছিলেন। এরপর উন্নত জিনোম সিকোয়েন্সিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে তার ত্বকের রং, চোখের রং, চুলের ধরন এবং মুখাবয়বের গঠন সম্পর্কে তথ্য বার করা হয়। ডিএনএ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ফরেনসিক ফেসিয়াল রিকনস্ট্রাকশন প্রযুক্তি ব্যবহার করে কম্পিউটার সফটওয়্যারে তার মুখমণ্ডলের থ্রিডি মডেল তৈরি করা হয়। এতে প্রতিটি মুখের বৈশিষ্ট্য, চোখের গভীরতা, ঠোঁটের আকার এবং নাকের গঠন যতটা সম্ভব নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

গবেষকরা বলছেন, এই ধরনের কাজ শুধু একজন মানুষের মুখ পুনর্গঠন নয়, এটি মানব ইতিহাস বোঝার নতুন পথ খুলে দেয়। এর মাধ্যমে জানা যায় যে প্রাগৈতিহাসিক যুগে মানুষের শারীরিক বৈশিষ্ট্য কেমন ছিল, তারা কোন অঞ্চলে বসবাস করত, এমনকি তাদের জীবনযাত্রা সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যায়। এটি ইউরোপের প্রাচীনতম মানব সমাজ সম্পর্কে আমাদের স্পষ্ট ধারণা গঠনেও সাহায্য করে।
বিজ্ঞানীরা মনে করেন, প্রাচীন ডিএনএ বিশ্লেষণ ভবিষ্যতে মানব বিবর্তন এবং হারিয়ে যাওয়া সভ্যতার অনেক রহস্য উন্মোচন করতে সাহায্য করবে। এই মানবী হয়তো তার সময়ে একজন সাধারণ মানুষ ছিলেন, কিন্তু হাজার বছর পর তার চেহারা ফের পৃথিবীর সামনে আসা মানব ইতিহাসের যে এক অনন্য অর্জন তা বলাই বাহুল্য।
