সারা বছর ত্বক কিংবা চুলের পরিচর্যায় যারা সময় ব্যয় করেন না, তাঁরাও পুজোর আগে বেশ সচেতন হয়ে পড়েন। এদিকে শেষ মুহূর্তে চটজলদি জেল্লা বাড়াতে গিয়ে সামান্য ভুল করে বসলেই বিপদ! হুট করে অতিরিক্ত মেকআপ ব্যবহারে খেশারত দিতে হয় ত্বককে। চুলেরও হরেক ট্রিটমেন্ট থেকে বাহারি রং, শুধু ট্রেন্ডে গা ভাসালে চলবে না। নচেৎ উৎসবের দিনে সকলের মাঝে মধ্যমণি হয়ে ওঠার পরিবর্তে নাজেহাল হবেন ত্বক-চুলের নানা সমস্যায়। ঘরোয়া টোটকা হোক কিংবা নামী-দামি প্রসাধনীর ব্যবহার, পুজোর সময়ে কোন কোন বিষয় খেয়াল রাখবেন, জেনে নিন-
• হাতে-পায়ের রোম তুলতে ওয়াক্স ব্যবহার করলেও মুখে এর ব্যবহার বুঝেশুনে করুন।আসলে মুখের ত্বক অনেক বেশি কোমল হয়। তাই অভ্যাস না থাকলে এড়িয়ে চলাই শ্রেয়। সামান্য ভুলে ত্বকের চামড়া ঝুলে যেতে পারে। বরং মুখের রোম তুলতে থ্রেডিং-ই ভরসা রাখতে পারেন।
• জেল্লাদার ত্বক পেতে বেশি প্রসাধনী ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। বিশেষ করে অতিরিক্ত পরিমাণে এক্সফোলিয়েশন করলে ত্বকের প্রয়োজনীয় তেল বেরিয়ে যেতে পারে। ত্বকে জ্বালাভাব, শুষ্কতা অনুভব করতে পারেন।
* কম সময় জেল্লাদার ত্বক পেতে পিল অফ মাস্কের ব্যবহার এড়িয়ে চলুন। এতে ২০ থেকে ৩৫ শতাংশ গ্লাইকোলিক অ্যাসিড থাকে, ব্যবহারের সামান্য ভুলে ত্বকের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।
• ঘরোয়া টোটকায় অন্ধবিশ্বাস নয়। কোনও ঘরোয়া ফেসপ্যাক মুখে ব্যবহারের আগে হাতের তালুতে লাগিয়ে নিন। যদি হাত জ্বালা করে বা লাল হয়ে যায়, তাহলে বুঝবেন সেই প্যাক মুখে সহ্য হবে না।
• অনেকেই ব্রণ কমাতে টুথপেস্ট ব্যবহারের পরামর্শ দেন। কিন্তু টুথপেস্ট ত্বকের পিএইচের ভারসাম্য বজায় রাখে না। বরং টুথপেস্ট ত্বকে লাগালে র্যাশ, চুলকানি দেখা দিতে শুরু করে। তাই পুজোর আগে এই ভুল করতে যাবেন না যেন।
• ত্বকে রাতারাতি জেল্লা আনতে অনেকেই লেবুর রস ব্যবহার করেন। এতে কিন্তু কোনও সুফল পাওয়া যায় না। বরং কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কারণ লেবুর অ্যাসিডের জন্য ত্বকের পিএইচ ভারসাম্য ঠিক থাকে না। তাই সরাসরি লেবুর রস ব্যবহার না করে কোনও ফেসপ্যকের সঙ্গে লাগাতে পারেন।
• বিজ্ঞাপনের প্রলোভনে পা দেবেন না। দোকান থেকে অথবা অনলাইনের বিজ্ঞাপন দেখে যা খুশি কিনে নিয়ে ত্বকচর্চা করলে ঠকতে পারেন। নিজের ত্বকের ধরন বুঝে সঠিক প্রোডাক্ট বেছে নিন। নিয়ম করে ক্লিনজিং, টোনিং, ময়শ্চারাইজিং করলেই যথেষ্ট। বাড়তি কোনও প্রসাধনীর ব্যবহার কিংবা ত্বক সংবেদনশীল হলে প্রয়োজনে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে পারেন।
* পুজোয় যতই অনেক রাতে বাড়ি ফিরুন, শোওয়ার আগে মেকআপ তুলতে ভুলবেন না। মেকআপের রাসায়নিক সারা রাত মুখের ত্বকে থাকলে ত্বক শুষ্ক, নিস্প্রাণ হয়ে পড়তে পারে।
• পুজোয় দিনের বেলা প্যান্ডেল হপিং করলে সানস্ক্রিন ব্যবহার করা মাস্ট। নাহলে যতই মেকআপ করুন, ভিতর থেকে ত্বকের স্বাস্থ্যের বারোটা বাজবে। রৌদ্রজ্জ্বল হোক কিংবা মেঘলা, মেকআপের আগে সানস্ক্রিনের ব্যবহার এড়িয়ে যাওয়া উচিত না।

• পুজোয় স্মুদনিং, কেরাটিন, বোটক্সের মতো ট্রিটমেন্ট করার চাহিদা থাকে তুঙ্গে। হেয়ার স্টাইলিং নিঃশব্দে সাজের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু এই সব স্টাইলিং-এ অতিরিক্ত তাপের ব্যবহার করা হয়। যা চুলের গোড়াকে দুর্বল করে দিতে পারে। ফলে, চুল শুষ্ক ও প্রাণহীন হয়ে পড়ে। তাই বুঝেশুনে চুলের ধরন অনুযায়ী ট্রিটমেন্ট করুন। সঙ্গে ভাল মানের স্যাঁলো নির্বাচন করাও জরুরি।
• নিয়মিত হেয়ার ড্রায়ার বা হিট স্টাইলিংয়ের সরঞ্জাম ব্যবহার করলে অবশ্যই হিট প্রোটেকশন স্প্রে, হেয়ার সিরাম ব্যবহার করুন। এমনকী কেশসজ্জা শিল্পীদের মতে, রোদের তাপ থেকে চুলকে রক্ষা করতে হলেও এই দুই প্রসাধনীটি ব্যবহার করা উচিত।
• পুজোর আগে চুলে হরেক রকম কালার করার ঝোঁক দেখা যায়। দেখতে যতই স্টাইলিশ লাগুক, এতে যে চুলের ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। আর যদি কালার করেই থাকেন তাহলে কালার প্রোটেক্টেড শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। এতে চুলের যেমন পিএইচ ভারসাম্য বজায় থাকবে, তেমনই ঠিক থাকবে চুলের রংও।
• পুজোর সময়ে সারাদিন বাইরে থাকায় চুল ঠিকমতো পরিষ্কার করা জরুরি। পারলে রোজই শ্যাম্পু করার চেষ্টা করুন।
• চুলের ক্ষতি এবং ভাঙার পিছনে রয়েছে হাইড্রেশনের অভাব। বিশেষ করে পুজোয় হরেক স্টাইলিং করলে চুলের হাইড্রেশনে নজর দিন। শ্যাম্পুর পর অবশ্যই ভাল মানের কন্ডিশনার লাগাতে ভুলবেন না।
