প্রস্রাব হল শরীরের বর্জ্য তরল অপসারণের একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। মূত্রাশয় থেকে মূত্রনালী দিয়ে প্রস্রাব শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। রক্ত থেকে বর্জ্য এবং অতিরিক্ত জল কিডনি পরিশোধন করার পরই তৈরি হয় প্রস্রাব। এরপর সেটি মূত্রাশয়ে জমা হয়। মূত্রাশয় পূর্ণ হয়ে গেলে মস্তিষ্ককে সংকেত দেয় এবং অবশেষে মূত্রাশয়ের পেশি সংকুচিত এবং স্ফিঙ্কটার পেশী শিথিল হওয়ার ফলে প্রস্রাব বেরিয়ে আসে। স্বাস্থ্যকর প্রস্রাবের অভ্যাস বজায় রাখা পেলভিক ফ্লোর এবং মূত্রথলির সঠিক কার্যক্ষমতা রক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু অনেকেই অজান্তে এমন কিছু অভ্যাস করেন, যা দীর্ঘমেয়াদে মূত্রনালীর সমস্যা, পেলভিক অঙ্গের সমস্যা এবং মূত্রনালীর সংক্রমণ (ইউটিআই) সৃষ্টি করতে পারে। তাহলে কোন কোন ভুল অভ্যাস সজাগ থাকা উচিত? জেনে নিন-
১. পর্যাপ্ত জল না খাওয়াঃ পর্যাপ্ত জল পান না করলে মূত্র ঘন হয়ে যায়, যা মূত্রথলির দেওয়ালে জ্বালা সৃষ্টি করে এবং মূত্রনালীর সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়। দিনে পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করলে মূত্র পাতলা থাকে এবং মূত্রথলি সঠিকভাবে কাজ করতে পারে। পাশাপাশি এটি নিয়মিত এবং মল ত্যাগের অভ্যাস বজায় রাখে যা পেলভিক ফ্লোরের উপর চাপ কমায়।
২. প্রস্রাবের সময় কেগেল ব্যায়াম করাঃ কেগেল ব্যায়াম পেলভিক ফ্লোর শক্তিশালী করতে সহায়তা করে। কিন্তু প্রস্রাবের সময় কেগেল ব্যায়াম করলে মূত্রপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়, যা মূত্রথলি সম্পূর্ণ খালি হতে দেয় না এবং সংক্রমণ ও কার্যক্ষমতায় সমস্যা তৈরি করতে পারে। কেগেল ব্যায়াম অবশ্যই মূত্রথলি খালি অবস্থায় করা উচিত এবং পেশাদারের তত্ত্বাবধানে অনুশীলন করলে পেলভিকের স্বাস্থ্য ঠিক থাকে।
আরও পড়ুনঃ দিনে ১০,০০০ পা হাঁটলেই উপকার নয়, উল্টে হতে পারে শরীরের ক্ষতি! কাদের এতটা হাঁটলে বিপদের ঝুঁকি?
৩. চাপ দিয়ে প্রস্রাবঃ অনেকেই দ্রুত প্রস্রাব শেষ করতে পেটের পেশি চেপে প্রস্রাব করতে চান, যাকে ‘পাওয়ার পিইং’ বলা হয়। দীর্ঘমেয়াদি এই অভ্যাস মূত্রথলিতে চাপ বাড়ায়, মূত্রথলি পুরোপুরি খালি হতে বাধা দেয় এবং পেলভিক অঙ্গের প্রোল্যাপ্স-এর ঝুঁকি বাড়ায়। প্রস্রাবকে প্রাকৃতিকভাবে প্রবাহিত হতে দিলে পেশি সমন্বয় ও মূত্রথলির স্বাস্থ্য ঠিক থাকে।
৪. টয়লেট সিটে ঠিকমতে না বসাঃ বিশেষত পাবলিক টয়লেটে সিটে বসার পরিবর্তে আধা-উঠে বসা পেলভিক ফ্লোর পেশি সংকুচিত করে। ফলে মূত্রথলি সম্পূর্ণ খালি হতে পারে না এবং পেশি দুর্বল হয়। সঠিকভাবে বসে প্রস্রাব করা, পা মাটিতে রাখা এবং পেশি শিথিল করা মূত্রথলির স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ।

৫. জোর করে প্রস্রাব করাঃ অনেকে প্রস্রাবের বেগ না পেলেও মূত্র ত্যাগ করেন। জোর করে প্রস্রাব করলে মূত্রথলির স্বাভাবিক চক্র ব্যাহত হয়। দিনের মধ্যে প্রকৃত তাগিদ অনুযায়ী প্রস্রাব করা উচিত। এতে পেলভিক ফ্লোর ও মূত্রথলির স্বাস্থ্য ঠিক থাকে।
৬. মল ত্যাগ করার সময় অতিরিক্ত চাপ দেওয়াঃ দীর্ঘমেয়াদি চাপে যেমন কোষ্ঠকাঠিন্য বা ফাইবারযুক্ত খাবার কম খাওয়ার কারণে পেলভিক ফ্লোর দুর্বল হতে পারে এবং মূত্রনালী বা পেলভিক অঙ্গের সমস্যা হতে পারে। তাই ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার, পর্যাপ্ত জল, এবং সঠিক অবস্থানে মল ত্যাগ করা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
