আজকাল ওয়েবডেস্ক: মহারাষ্ট্রের চিকিৎসক মৃত্যুতে উত্তাল রাজনীতি। ঘটনার কেন্দ্রে মৃত্যুর পর তাঁর বা হাতের তালুতে লেখা কয়েকটি লাইন। যেখানে তিনি এক পুলিশ অফিসার এবং অপর এক ব্যক্তির নামে অভিযোগ জানিয়েছেন। ঘটনার মোড় ঘুরছে দিনে দিনে। তার  মাঝেই সামনে এসেছে খাস দিল্লির ঘটনা। অভিযোগ, দিল্লির চিকিৎসক ধর্ষণের। অভিযোগের তীর ভুয়ো সেনা অফিসারের বিরুদ্ধে। দিল্লির সফদরজং হাসপাতালের  ওই চিকিৎসক অভিযোগ জানিয়েছেন, সেনা  অফিসারের পরিচয়ে যোগাযোগ, এবং তার পরেই তাঁকে ধর্ষণ করেছেন এক ব্যক্তি, ভুয়ো সেনা অফিসারের পরিচয়ে।

জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম আরভ। তিনি মূলত ডেলিভারি পার্টনারের কাজ করতেন। তবে তিনি ওই চিকিৎসকের কাছে পরিচয় দিয়েছিলেন অন্য। ঘটনা প্রসঙ্গে পুলিশ জানিয়েছে, ওই ব্যক্তি ইনস্টাগ্রামে চিকিৎসক যুবতীর সঙ্গে আলাপ করেন। নিজেকে তখন লেফটেন্যান্ট হিসেবে পরিচয় দিয়েছিলেন। কথোপকথনের পর মোবাইল নম্বর বিনিময় করেন। তিনি জানিয়েছিলেন,  জম্মু ও কাশ্মীরে কর্মরত। সেনাবিহিনীর পোশাক পরা ছবিও পাঠিয়েছিলেন যুবতীকে। অভিযোগ, এমাসের শুরুতে তিনি জানান, দিল্লিতে এসেছেন। চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করেন। তাঁর বাড়িতে যান এবং তাঁকে খাবারের সঙ্গে মাদক মিশিয়ে খাইয়ে ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে যুবকের বিরুদ্ধে। চিকিৎসক জ্ঞান ফিরে পাওয়ার পর, ১৬ অক্টোবর সফদরজং এনক্লেভ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ অভিযোগ পেয়ে, ছতরপুর এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে ওই ব্যক্তিকে আটক এবং গ্রেপ্তার করে।

আরও পড়ুন: কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের জন্য স্বস্তি, নভেম্বরেই বড় পদক্ষেপের পথে মোদি সরকার

সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যম সূত্রে খবর, পুলিশ জানিয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদে আরভ স্বীকার করেছেন, তিনি লম্বা সময় ধরে পরিকল্পনা করেই প্রতারণার ছক কষেন। নিজের মিথ্যাকে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ করার জন্য দিল্লিরই একটি দোকান থেকে সেনাবাহিনীর পোশাক কিনেছিলেন। 

দিল্লির ঘটনা সেই সময়ে সামনে এসেছে, যখন দেশ উত্তাল মহারাষ্ট্রের ঘটনা নিয়ে। মহারাষ্ট্রের মহিলা চিকিৎসক। হাতের তালুতে ভয়াবহ, মর্মান্তিক কাহিনি লিখে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন। পেনের কালি দিয়ে লিখে গিয়েছিলেন, পুলিশ ইনস্পেক্টরের নাম। নাম ছিল আরও এক যুবকের। ওই যুবক, পরিচয়ে মহিলা চিকিৎসকের ভাড়া বাড়ির মালিকের ছেলে গ্রেপ্তার হয়েছেন আগেই। তার ঘণ্টাখানেক পর গ্রেপ্তার হলেন অভিযুক্ত পুলিশ ইন্সপেক্টর গোপাল বাদানে। সর্বভারতীয় সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, শনিবার রাতেই গ্রেপ্তার কররা হয়েছে তাঁকে। ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরেই, কাজ থেকে সাসপেন্ড করা হয়েছিল অভিযুক্তকে। তার আগেই গ্রেপ্তার করা হয়েছিল প্রশান্তকে। 

মৃত চিকিৎসকের পরিবারের দাবি, চাপ দিয়ে নানা অনৈতিক কাজ করতে বাধ্য করা হত তরুণীকে। এমনকী, লিখিয়ে নেওয়া হত ভুয়ো মেডিক্যাল রিপোর্টও। মৃতার খুড়তুতো ভাইয়ের অভিযোগ, কোনও রকম শারীরিক পরীক্ষা ছাড়াই ওই সমস্ত রিপোর্ট লিখতে বাধ্য করা হত তরুণীকে। হুমকিও দেওয়া হত। একাধিক বার ডিএসপি-সহ পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের চিঠি লিখেছিলেন তিনি, কিন্তু লাভ হয়নি। 

এছাড়াও ভাইয়ের আরও অভিযোগ যে, তরুণী চিকিৎসক এই বছরের শুরুতে, জুন-জুলাই মাসে তিনজন পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন, সেখানে তিনি তিনজন পুলিশের নাম উল্লেখ ছিল। যার মধ্যে সেই পুলিশ সদস্যও ছিলেন যিনি তাঁকে ধর্ষণ করেছিলেন বলে অভিযোগ। এই অভিযোগগুলি অস্বীকার করে, সাতারা পুলিশের একজন আধিকারিক বলেছেন যে, নির্যাতিতা চিকিৎসক সেই সময় কোনও একটা বিষয়ে অভিযোগ করেছিলেন, তবে তা "অন্য কোনও বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত" ছিল।

অন্যদিকে, সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যম সূত্রে তথ্য, ওই মহিলা যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন, তাঁদেরই একজন তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন। জানা গিয়েছে, বাড়িওয়ালার পুত্র, যাঁর বিরুদ্ধে টানা পাঁচ মাস ধরে শারীরিক এবং মানসিক হেনস্থার অভিযোগ তুলেছিলেন, সেই যুবকের দিদি জানিয়েছেন, চিকিৎসক তাঁকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার ওই যুবক বিয়েতে রাজি না হওয়ায় তরুণী তাঁকে নানাভাবে হেনস্থা করতেন, চাপ দিতেন।

সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যম সূত্রে খবর, প্রশান্তর দিদি জানিয়েছেন, অক্টোবর মাসে তাঁর ভাইকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন চিকিৎসক। তিনি রাজি হননি। প্রত্যাখান হওয়ার ক্ষোভ থেকেই হাতের তালুতে ভাইয়ের নাম লিখে রেখে গিয়েছেন, দাবি প্রশান্তর দিদির। তিনি আরও জানিয়েছেন, আত্মঘাতী হওয়ার একদিন আগে, চিকিৎসক প্রশান্তকে বারবার ফোন করেছিলেন। সেসব রেকর্ড স্ক্রিনশট তাঁরা পুলিশকে দিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন। প্রশান্তর ভাই সুশান্ত জানিয়েছেন, এই দীপাবলিতেও তাঁদের সঙ্গেই উদযাপন করেছিলেন চিকিৎসক। ভাইয়ের বিরুদ্ধে হেনস্থার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন তিনিও।