আজকাল ওয়েবডেস্ক: শক্তি বাড়িয়ে ঘূর্ণিঝড় মান্থা মঙ্গলবার ভোরে পরিণত হয়েছে অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে। আশঙ্কা সত্যি করে, আরও শক্তি বাড়িয়ে এগিয়ে আসছে দ্রুত গতিতে। ভোর সাড়ে পাঁচটা নাগাদ ঘূর্ণিঝড়ের অবস্থান সম্পর্কে হাওয়া অফিস জানিয়েছে, অন্ধ্রপ্রদেশের কাকিনাড়া থেকে ২৭০ কিমি দক্ষিণ - দক্ষিণ পূর্বে, বিশাখাপত্তনম থেকে ৩৪০ কিমি দক্ষিণ - দক্ষিণ পশ্চিমে, ওড়িশার গোপালপুর থেকে ৫৫০ কিমি দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছে ঘূর্ণিঝড়টি।
অন্ধ্র উপকূলের দিকে যত এগোচ্ছে ঘূর্ণিঝড়, তত বেশি আতঙ্ক ছড়াচ্ছে সতর্কতা জারি হওয়া এলাকাগুলিতে। সোমবারেই জানা গিয়েছিল, মান্থার প্রভাবে একাধিক ট্রেন বাতিল। মঙ্গলবার জানা গেল, রেলের সঙ্গে বাতিল বিমানও। অন্যদিকে ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কায় হু হু করে কমছে ওড়িশার পর্যটনের গতি। একদিনেই ওড়িশায় ৮০ শতাংশ থেকে বুকিং নেমে গিয়েছে ৫০ শতাংশ, অর্থাৎ ৩০ শতাংশ কমে গিয়েছে বুকিং।
অন্যদিকে দুর্যোগের আশঙ্কায় বিশাখাপত্তমের উপর দিয়ে যাতায়াত করা ৪৩টি ট্রেন বাতিল হয়েছে। ইন্ডিগো এবং এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান বাতিল হয়েছে। বিজয়ওয়াড়া বিমানবন্দরে একাধিক নির্ধারিত পরিষেবা স্থগিত করা হয়েছে বলে খবর সূত্রের। দুর্যোগের আবহাওয়ায় উপকূলবর্তী এলাকাগুলি থেকে অন্তত তিন হাজার মানুষকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রস্তুত প্রায় দেড় হাজার ত্রাণ শিবির। এনডিআরএফ, ওডিআরএফ-এর মোট ১৪০টি দল প্রস্তুত উদ্ধারকার্যের জন্য। ল্যান্ডফলের আগে এবং তার পরের ২৪ ঘণ্টায় উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে বিদ্যুৎ পরিষেবা বিঘ্ন হতে পারে বলে সতর্কতা জারি।
অন্যদিকে, সোমবারেই ইস্ট কোস্ট রেলের তরফে ঘোষণা করা হয়েছে, আজ ২৭ অক্টোবর থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ৪৩টি ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কিছু রুটে একাধিক ট্রেন বাতিল হয়েছে। বিশাখাপত্তনম -কোরাপুট, বিশাখাপত্তনম- কিরণদুল, বিশাখাপত্তনম- তিরুপতি, বিশাখাপত্তনম -চেন্নাই রুটে ট্রেন বাতিল করা হয়েছে।
মঙ্গলবার, অর্থাৎ ২৮ অক্টোবর অন্ধ্রপ্রদেশ ও ওড়িশার স্কুল বন্ধের ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী তিনদিন অন্ধ্রপ্রদেশের আনাকাপল্লিতে সমস্ত স্কুল ও কলেজ বন্ধের ঘোষণা করা হয়েছে। বিশাখাপত্তনম ও কাকিনাড়ার সমস্ত সমুদ্র সৈকত বন্ধ রাখা হয়েছে। পর্যটকদের এই পরিস্থিতিতে সমুদ্র সৈকতে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। রাজ্যজুড়ে ৪০০টি অস্থায়ী শিবির তৈরি রয়েছে। একাধিক দমকল বাহিনী, বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী মোতায়েন রয়েছে জেলায় জেলায়। ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কায় পুলিশ উপ্পাডা, সুব্বামপেট, মায়াপত্তনম ও সুরাডাপেট গ্রামের বাসিন্দাদের সরিয়ে নিয়েছে। তিরুপতির জেলা প্রশাসনের প্রধান জানিয়েছেন, উপকূলবর্তী পাঁচটি এলাকায় প্রবল বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইতিমধ্যেই বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। ইন্ডিগো তাদের এক্স হ্যান্ডলে যাত্রীদের সতর্ক করে বলেছে, ‘বিশাখাপত্তনম, বিজয়ওয়াড়া ও রাজামুন্দ্রির এলাকায় ঘূর্ণিঝড় ও ভারী বৃষ্টির কারণে ফ্লাইট স্ট্যাটাস আগে দেখে নিন।’ রেল পরিষেবাতেও প্রভাব পড়েছে। জানা গিয়েছে, হাওড়া–জগদলপুর সামলেশ্বরী এক্সপ্রেস বর্তমানে রায়গড়া পর্যন্ত চলবে।
হিরাখণ্ড এক্সপ্রেস ও ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস রায়গড়া থেকে শুধুমাত্র ভুবনেশ্বর বা রাউরকেলা পর্যন্ত চলবে। জগদলপুর অংশের পরিষেবা আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অন্ধ্রপ্রদেশ সরকারকে কেন্দ্রীয় সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘উপকূলবর্তী রাজ্যগুলির সুরক্ষা ও ত্রাণকাজে কেন্দ্রীয় সরকার সবরকম সহায়তা দেবে।’
ঝড়ের পর যাতে তড়িঘড়ি উদ্ধারকাজ শুরু করা যায় সেই ব্যবস্থাও করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব থেকে রক্ষা পাচ্ছে না ওড়িশাও। রাজ্য সরকার মলকানগিরি, কোরাপুট, নবরঙ্গপুর, রায়গড়া, গজপতি, গঞ্জাম, কলাহান্ডি ও কাংধমাল জেলায় লাল সতর্কতা জারি করেছে।
শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় মান্থার জেরে লাল সতর্কতা জারি রয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশে। ২৬টি জেলার মধ্যে ২৩টিতে লাল, কমলা সতর্কতা জারি রয়েছে। পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছেন অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী এন চন্দ্রবাবু নাইডু। পরিস্থিতি সামাল দিতে কী কী পদক্ষেপ করা হচ্ছে, তা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
