আজকাল ওয়েবডেস্ক: প্রকৃতির রোষে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল যোগাযোগ। সেই যাতায়াতের পথ ফের জুড়ে দিল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। মাত্র ১৬ দিনে দার্জিলিং-এর দুধিয়ায় বিকল্প হিউম পাইপ সেতুর (ভেন্টেড কজওয়ে) নির্মাণকাজ শেষ করল পি ডব্লিউ ডি। আগামীকাল থেকেই এই সেতুর সাহায্যে মিরিক ও শিলিগুড়ির মধ্যে স্বাভাবিক যানচলাচল পুনরায় শুরু হবে বলে প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে। মাত্র ১৬ দিনের রেকর্ড সময়ে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও এই বিশাল প্রকল্পের কাজ শেষ করে রাজ্য সরকারের জনপথ দপ্তর এক নজির স্থাপন করেছে বলে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
দুধিয়া অঞ্চলে পুরনো সেতুটি ১৯৬৫ সালে তৈরি হয়। দীর্ঘদিনের পুরোনো সেতুটি কাঠামোগতভাবে দুর্বল হয়ে পড়ায় ভ্রমণকারী, স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য তা বিপজ্জনক হয়ে উঠেছিল। তাই এর আগেই পশ্চিমবঙ্গ সরকার ৫৪ কোটি টাকার ব্যয়ে নতুন একটি আধুনিক সেতু নির্মাণ শুরু করে। কিন্তু পাহাড়ে বিধ্বংসী ধস নামায় নিমেষে বদলে যায় পরিস্থিতি। পুরোনো সেতু ভেঙে পড়ে। মিরিকের সঙ্গে শিলিগুড়ির যোগাযোগ রক্ষার ক্ষেত্রে এই সেতুটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। নতুন সেতু নির্মাণ সম্পূর্ণ হতে সময় লাগবে বলে আপৎকালীন ভিত্তিতে বিকল্প সেতু তৈরির সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
এই নতুন বিকল্প সেতুটি মোট ৪৬৮ মিটার দীর্ঘ এবং ৮ মিটার চওড়া। এর মধ্যে ৭২ মিটার অংশে হিউম পাইপ কজওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। ব্যবহার করা হয়েছে মোট ১৩২টি হিউম পাইপ, প্রতিটির ব্যাস ১২০০ মিলিমিটার। ১০ অক্টোবর কাজ শুরু হয়েছিল সেতু নির্মাণের কাজ, দিন-রাত একটানা শ্রমিক, ইঞ্জিনিয়ার ও পি ডব্লিউ ডি দপ্তরের কর্মীরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে ১৬ দিনের মধ্যেই পুরো প্রকল্পটি শেষ করলেন। পাহাড়ি অঞ্চলের বৃষ্টি, কাদা, এবং নদীর প্রবল স্রোতের মতো প্রতিকূল অবস্থাতেও কাজ থামাননি তাঁরা।
রাজ্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই বিকল্প সেতুটি চালু হলে মিরিক ও শিলিগুড়ির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ পুনরায় স্বাভাবিক হবে, যা স্থানীয়দের পাশাপাশি পর্যটকদের জন্যও বিরাট স্বস্তির। দীর্ঘদিন ধরে এই পথে যান চলাচল ব্যাহত থাকায় এলাকার অর্থনীতি এবং দৈনন্দিন জীবন অনেকটাই প্রভাবিত হয়েছিল।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন ফেসবুকে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেন। লেখেন, “আমি আনন্দের সাথে জানাচ্ছি যে, মিরিক ও শিলিগুড়ির সংযোগকারী দুধিয়ায় বিকল্প হিউম পাইপ ব্রিজ (ভেন্টেড কজওয়ে)-এর নির্মাণ কাজ সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। আগামীকাল থেকে এটির উপর দিয়ে স্বাভাবিক যান চলাচল পুনরায় শুরু হবে।
এই ৪৬৮-মিটার দীর্ঘ সেতুটিতে ৮-মিটার চওড়া একটি ৭২-মিটার দীর্ঘ হিউম পাইপ কজওয়ে রয়েছে। এটি ১২০০ মিমি ব্যাসের ১৩২টি হিউম পাইপ ব্যবহার করে নির্মিত হয়েছে। ১০.১০.২০২৫ তারিখে সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেই দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে মাত্র ১৬ দিনের মধ্যে সেতু তৈরির কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। ১৯৬৫ সালে নির্মিত পুরোনো সেতুটি কাঠামোগতভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছিল এবং সেই কারণে পশ্চিমবঙ্গ সরকার আগেই ৫৪ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি নতুন সেতু নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছিল। সেই সেতুর কাজও বর্তমানে পুরোদমে চলছে।
রেকর্ড ১৬ দিনের মধ্যে নির্মাণকাজ সম্পন্ন করার জন্য, আমি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পূর্ত দপ্তরের গভীরভাবে প্রশংসা করছি। গুরুত্বপূর্ণ এই সেতুটি তৈরির ফলে স্থানীয় বাসিন্দা ও যাত্রীদের অত্যন্ত উপকার হবে।”
