আজকাল ওয়েবডেস্ক: মার্কিন প্রশাসনের নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী H-1B ভিসার জন্য আবেদন ফি একলাফে ১ লক্ষ ডলার ধার্য করা হয়েছে। জেপি মর্গান চেজের অর্থনীতিবিদ আবিয়েল রেইনহার্ট ও মাইকেল ফেরোলির মতে, এই পদক্ষেপে অভিবাসী কর্মসংস্থানের অনুমোদন প্রতি মাসে প্রায় ৫,৫০০ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। এর ফলে বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ভারতীয় প্রযুক্তি পেশাজীবীরা, যারা গত অর্থবছরে H-1B ভিসাধারীদের সিংহভাগ অংশ গঠন করেছিলেন।

অর্থনীতিবিদরা জানিয়েছেন, যদিও সামগ্রিক মার্কিন শ্রমবাজারে এর প্রভাব সীমিত, তবে প্রযুক্তি কোম্পানি ও ভারতীয় প্রফেশনালদের উপর চাপ স্পষ্ট হবে। কম্পিউটার-সংক্রান্ত কাজের ক্ষেত্রেই গত অর্থবছরে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ H-1B ভিসা অনুমোদিত হয়েছিল। একই সঙ্গে, ৭১ শতাংশ ভিসা ভারতীয় নাগরিকদের দেওয়া হয়েছে। ২০২৪ অর্থবছরে মোট ১,৪১,০০০ নতুন H-1B আবেদন অনুমোদিত হয়েছিল, যার মধ্যে প্রায় ৬৫,০০০ প্রক্রিয়াকৃত হয়েছিল বিদেশে থেকে। এদের উপরই নতুন ফি সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলবে।

একই সময়ে, মার্কিন চাকরির বাজারে মন্দা দেখা দিয়েছে। গত তিন মাসে গড়ে মাত্র ২৯,০০০ নতুন কর্মসংস্থান যোগ হয়েছে। ফেডারেল রিজার্ভ চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল বলেছেন, অভিবাসী শ্রমশক্তির ঘাটতি এই মন্থরতার একটি বড় কারণ। অন্যদিকে, অর্থনীতির নোবেল জয়ী পল ক্রুগম্যান সতর্ক করে বলেছেন, উচ্চশিক্ষিত বিদেশি শ্রমিকদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কাজের সুযোগ সীমিত করলে কেবল উদ্ভাবন ও উৎপাদনশীলতায়ই নয়, জিডিপি ও কর রাজস্বেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তিনি বলেন, H-1B ভিসাধারীরা উদ্ভাবনী কেন্দ্রগুলো যেমন সিলিকন ভ্যালি শক্তিশালী করেন এবং গোটা প্রযুক্তিখাতকে এগিয়ে নিয়ে যান।

আরও পড়ুন: সৌদি আরবে কি মদ কিনতে পারবেন আপনি? শরিয়াশাসিত দেশটিতে শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কয়েকজনেরই সেই ক্ষমতা আছে

এই প্রেক্ষাপটে ইউরোপ ও যুক্তরাজ্য দ্রুত এগিয়ে এসেছে ভারতীয় দক্ষ কর্মীদের আকর্ষণ করতে। ভারতে নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত ফিলিপ অ্যাকারম্যান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’-এ প্রকাশ্য আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, জার্মানি “বিশ্বস্ত, আধুনিক ও পূর্বানুমেয়” অভিবাসন নীতিমালা অনুসরণ করে। তিনি এই ব্যবস্থাকে তুলনা করেছেন জার্মান গাড়ির সঙ্গে, যা সোজা পথে চলে “কোনও বাঁক বা অনিশ্চয়তা ছাড়াই”—অর্থাৎ মার্কিন নীতির হঠাৎ পরিবর্তনের বিপরীতে। অ্যাকারম্যান আরও উল্লেখ করেন যে, জার্মানিতে ভারতীয় পেশাজীবীরা শীর্ষ আয়ের মধ্যে থাকেন এবং দেশটির অর্থনীতি ও কল্যাণমূলক ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।

ব্রিটিশ যুক্তরাজ্যও একইভাবে বার্তা দিচ্ছে। লন্ডনে ফিনটেক কোম্পানি রেভোলুটের নতুন সদর দপ্তরের উদ্বোধনে অর্থমন্ত্রী রেচেল রিভস ঘোষণা করেছেন, দক্ষ কর্মীদের প্রবেশ সহজতর করা হবে। তিনি বলেন, লন্ডনের আর্থিক কেন্দ্র হিসেবে অবস্থান ধরে রাখতে বিশ্বজুড়ে প্রতিভার প্রবাহ অপরিহার্য। মার্কিন সীমাবদ্ধতার বিপরীতে ব্রিটেন নিজেকে উন্মুক্ত অর্থনীতি হিসেবে তুলে ধরতে চাইছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন H-1B ফি নীতির ফলে ভারতীয় প্রযুক্তি কর্মীদের জন্য আমেরিকার দরজা অনেকটাই সঙ্কীর্ণ হয়ে উঠতে পারে। তবে এই সুযোগেই জার্মানি ও যুক্তরাজ্য নিজেদেরকে দক্ষ ভারতীয় শ্রমশক্তির জন্য আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসেবে তুলে ধরছে। ফলে নিকট ভবিষ্যতে ভারতীয় প্রফেশনালদের ইউরোপমুখী প্রবণতা আরও তীব্র হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত।