আজকের যুগে যেন সকলেই নিজেকে সুন্দর দেখাতে চান। সমাজমাধ্যমে চোখ রাখলে নিখুঁত মুখ, ঝলমলে ত্বক, ফ্যাশনেবল পোশাকের ঝলক নজরে আসে। কিন্তু আসল সমস্যা শুরু হয় তখনই, যখন এই সব দেখে নিজের চেহারা নিয়ে অস্বস্তি বা লজ্জা বোধ হতে থাকে। এই ভাবনাকেই বলে ‘বিউটি অ্যাংজাইটি। যার মানে নিজের সৌন্দর্য নিয়ে মানসিক ভয় বা উদ্বেগ।
 
 বিউটি অ্যানজাইটি এক ধরনের মানসিক চাপ বা চিন্তা যেখানে সেই ব্যক্তি বার বার ভাবেন যে তিনি দেখতে ভাল না, অন্যরা তাঁর থেকে সুন্দর কিংবা তাঁর ত্বক বা শরীর ঠিক নয়। এই চিন্তায় মন খারাপ হয়, আত্মবিশ্বাস কমে যায়, এবং নিজের ওপর বিরক্তি আসতে শুরু করে। দিনকেদিন বাড়ছে এই সমস্যা? কিন্তু কেন? বিশেষজ্ঞদের মতে, এর পেছনে মূলত তিনটি বড় কারণ আছে। যা হল-
আরও পড়ুনঃ ৮ ঘণ্টা ঘুমের পরও ক্লান্ত লাগে? নেপথ্যের এই কারণগুলো শুধরে নিলে এক ঘুমেই ভোর হবে
*সমাজমাধ্যমের প্রভাব: আজকাল ইনস্টাগ্রাম, টিকটক বা ফেসবুকে নিজেজে নিঁখুত দেখতে লাগে এমন ছবি সকলে পোস্ট করে। যার মধ্যে বেশিরভাগ ছবি ফিল্টার দিয়ে ফিল্টার করা হয়। যা দেখে অনেকেই ভাবতে শুরু করেন, তিনি কেন এত সুন্দর নন।
*বিজ্ঞাপন ও বিউটি প্রোডাক্ট: বিজ্ঞাপনের দুনিয়ায় ফর্সা, নিখুঁত ত্বকের জন্য হরেক রকম প্রসাধনীর হাতছানি দেওয়া হয়। যা দেখে অনেকের মনেই নিজের সৌন্দর্য নিয়ে হতাশা আসে।
*অতিরিক্ত তুলনা: অন্যের চেহারা বা জীবনযাত্রার সঙ্গে নিজের তুলনা করতে করতে আমরা নিজের মূল্য ভুলে যাই।
বিউটি অ্যাংজাইটিতে ভুগলে আত্মবিশ্বাস কমে যায়, মন খারাপ থাকে। নিজের স্বাভাবিক চেহারা লুকাতে বেশি মেকআপ বা বিউটি ট্রিটমেন্টের দিকে ঝোঁক বাড়ে, অনেক সময় আয়নায় নিজেকে দেখতে ভয় লাগে, সামাজিকভাবে মিশতেও অনীহা আসে। এমনকী চরম অবস্থায় এটি মানসিক রোগে পরিণত হতে পারে।
বিউটি অ্যাংজাইটি থেকে কীভাবে মুক্তি পাবেন? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সমস্যার সমাধান নিজের মন থেকে শুরু করতে হবে। যেমন-
*প্রত্যেক মানুষের সৌন্দর্য আলাদা। নিখুঁত হওয়ার দরকার নেই। তাই নিজেকে যেমন আছেন তেমন মেনে নিন।
*সোশ্যাল মিডিয়ার ভুয়া ছবি থেকে দূরে থাকুন। মনে রাখবেন, সমাজমাধ্যমের বেশিরভাগ ছবি বাস্তব নয়। ফিল্টার, আলো, মেকআপ-সবমিলিয়ে সব ছবি ফুটিয়ে তোলা হয়।

*নিজের শরীর ও মনকে ভালোবাসুন। শরীর আপনাকে বাঁচিয়ে রাখছে, তাই সেটিকে কৃতজ্ঞতা জানান।
*অন্যদের সঙ্গে তুলনা বন্ধ করুন। আপনি যেমন, তা-ই যথেষ্ট। অন্য কেউ আপনার মতো নয়, এটাই আপনার বিশেষত্ব।
*প্রয়োজনে কারওর সঙ্গে কথা বলুন। যদি এই চিন্তা খুব বেশি বাড়ে, তবে মনোবিজ্ঞানী বা কাউন্সেলরের সাহায্য নিন।
 
 বিশেষজ্ঞদের মতে, বিউটি অ্যাংজাইটিতে এখন অনেকেই আক্রান্ত। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এটি বেশি দেখা যায়। মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, সুন্দর দেখানোর চেয়ে মানসিকভাবে সুস্থ থাকা অনেক বেশি জরুরি। সৌন্দর্য শুধু মুখের নয়, আপনার আত্মবিশ্বাস, আচরণ, ও ইতিবাচক মনোভাব-ও সমান গুরুত্বপূর্ণ।
