মিল্টন সেন,হুগলি: এক পারে চাষ এক পারে বাস মাঝে ডিভিসি খাল। ফেরি চালু থাকলে দু মিনিট লাগত এই খাল পার হতে। কিন্তু বর্তমানে অনেকটা পথ ঘুরতে হচ্ছে গ্রামবাসীদের।ফেরি চালুর দাবীতে পঞ্চায়েতে বিক্ষোভ গ্রামবাসীদের।রাজনৈতিক কারণে দু বছর ধরে ডিভিসি কর্তৃপক্ষ ফেরি বন্ধ করেছেন অভিযোগ তৃণমূলের। ঘটনায় পালটা বিজেপি জানিয়েছে, 'অন্যের ঘাড়ে দোষ না চাপিয়ে কাজ করুন।'
খবর অনুযায়ী, হুগলির বৈঁচিগ্রাম উত্তরপাড়ায় ডিভিসি খাল পারাপারের জন্য চলত নৌকা। কিন্তু গত দু'বছর ধরে তা বন্ধ হয়ে রয়েছে। গত কয়েক বছর আগেও টেন্ডারের মাধ্যমে নৌকো চালানোর জন্য মাঝি ও নৌকা দেওয়া হত ডিভিসি কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি স্থানীয়দের। কিন্তু হঠাৎ করেই তা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে সমস্যায় পড়তে হয়েছে গ্রামের কয়েকশো চাষি সহ এলাকার বাসিন্দাদের। স্থানীয়দের বক্তব্য দু মিনিটেই পারাপার করা যেত। বর্তমানে সেটা দু কিলোমিটার ঘুরে প্রায় 15 থেকে কুড়ি মিনিট সময় লাগছে।
ডিভিসি ক্যানেলের এলাকায় কয়েকশো কৃষকের কয়েক হাজার বিঘা জমি রয়েছে। বর্তমানে চাষের জমিতে ধান রোয়ার কাজ চলছে। অনেকটা ঘুর পথে যেতে চাষীদের যেমন সময় লাগছে ,তেমনই ফসল তুলে ঘরে আনতে গেলেও অনেক খরচা বেড়ে যাচ্ছে। তাই নৌকা হলে কৃষিকাজে সুবিধা যেমন হবে তেমনই মানুষের যাতায়াতেরও সুবিধা হবে। এমনকি ডিভিসির পার সংলগ্ন এলাকায় রয়েছে কবরস্থান। মৃতদেহ সৎকার করতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে অনেককে। কয়েক কিলোমিটার ঘুরে যাতায়াত করতে হচ্ছে তাঁদের। আজ নৌকার দাবিতে বাঁটিকা বৈঁচিগ্রাম পঞ্চায়েতে প্রধানের ঘরের সামনে বিক্ষোভ দেখায় গ্রামবাসী ও এলাকার চাষীরা। বর্তমানে ঝুঁকি নিয়ে জল পেরিয়েই যাতায়াত করছে গবাদিপশু সহ মানুষও।
এলাকার এক কৃষক হাফিজ মহম্মদ বলেন, 'দীর্ঘদিন ধরে ডিভিসির খালে নৌকো চলত। এতে আমাদের কৃষি কাজে অনেক সুবিধা হতো। গত দু'বছর ধরে সেই নৌকা বন্ধ রয়েছে। প্রশাসনের দপ্তরে জানিয়েও কোন কাজ হয়নি। এমনকি জামনা পঞ্চায়েত এলাকার মানুষও নৌকা পার হয়ে চিকিৎসা করাতে আসতো । বর্তমানে সেসব বন্ধ । এমএলএ এমপি পঞ্চায়েত সমস্তই রাজ্য সরকারের অধীনে। এতকিছু কাজ হচ্ছে তাই আমরা চাই অবিলম্বে নৌকা চালু হোক। না হলে সেতুর ব্যবস্থা করে দিক।'
অপর এক গ্রামবাসী নিতেশ মন্ডল মুন্নি মূর্মুরা বলেন, 'দু বছর ধরে নৌকো বন্ধ। আমাদের অনেকটা ঘুর পথে যাতায়াত করতে হচ্ছে। চাষীরা সবসময় নৌকো পেরিয়ে যাতায়াত করত। বামফ্রন্টের আমলে এই ফেরিঘাট হয়েছিল কিন্তু এখন হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়।'
বাঁটিকা বৈঁচি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান মালা বেগম বলেন, 'এই ক্যানেলটা ডিভিসির অধীনে। ডিভিসি এটার টেন্ডার করত। পাশাপাশি সেটাকে ফেরিঘাট হিসেবে ব্যবহার করা হতো। এখন ডিভিসি টেন্ডার করা বন্ধ করে দিয়েছে। আমরাও বিষয়টি খতিয়ে দেখেছি যে এলাকার মানুষের সমস্যা রয়েছে। আমরা সমস্ত দপ্তরে জানিয়েছি। কিন্তু ডিভিসি থেকে আমরা কোনও অবজেকশন পাইনি। গত শুক্রবার সদস্যদের নিয়ে একটা বৈঠক করা হয়েছিল যাতে আমরা এটা একটা সুরাহা করতে পারি। এবং সেখানে ঠিক হয় নিজস্ব তহবিল থেকেই এই নৌকাটা কেনা হবে। তার জন্য ভিডিও এবং ডিভিসির কাছে চিঠি করা হয়েছে। যখন থেকে টেন্ডার উঠে গেছে তখন থেকেই এই সমস্যা হয়েছে।'
আর এ নিয়েই শুরু হয়েছে শাসক বিরোধী রাজনৈতিক দড়ি টানাটানি। বাটিকা বৈঁচি অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি বিকাশ ভট্টাচার্য বলেন, 'রাজনৈতিক কারণে এটাকে তুলে দেওয়া হয়েছে। ডিভিসি কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে। তারা মানুষকে বঞ্চনার মধ্যে ফেলে দিচ্ছে । রাজ্য সরকারের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চনা করছে কেন্দ্র। গ্রামীন এলাকায় যে সুবিধা গুলো রয়েছে সেগুলো কেউ তারা বঞ্চনা করছে।'
যদিও পাল্টা তৃণমূল কে আক্রমণ করতে ছাড়েনি বিজেপি, বিজেপির মন্ডল সভাপতি বিশ্বজিৎ পোদ্দার বলেন,' তৃণমূলের কাজই হচ্ছে কেন্দ্রের ঘারে দোষ চাপানো। এমপি এমএলএ পঞ্চায়েত প্রধান তৃণমূলের সদস্যরা থাকতেও কেন্দ্রের ওপর দোষ চাপাচ্ছে। অন্যের ঘারে দোষ না চাপিয়ে সমস্যা মেটান।'
পান্ডুয়া ডিভিসির এক আধিকারিক সোমা রায় জানিয়েছেন, 'বর্তমানে নৌকা চলছে না। নৌকা আমাদেরই চলত। কিন্তু এখন উপর মহল থেকে কন্টাক দিচ্ছে না সে কারণেই চলছে না। ফিরিয়ে আনা সম্ভব কিনা সেটা আমি বলতে পারব না এটা উচ্চ স্তর বলতে পারবে।'
