বলিউডে ফের শিরোনামে কাপুর পরিবার। প্রয়াত শিল্পপতি ও সোনা কমস্টারের চেয়ারম্যান সঞ্জয় কাপুরের মৃত্যু-পরবর্তী সম্পত্তি নিয়ে এবার দিল্লি হাইকোর্টে হাজির হয়েছেন করিশ্মা কাপুরের দুই সন্তান, কিয়ান রাজ কাপুর ও সামাইরা কাপুর।বার অ্যান্ড বেঞ্চের রিপোর্ট অনুযায়ী, কিয়ান–সামাইরার অভিযোগ—তাঁদের সৎমা প্রিয়া কাপুর (সঞ্জয়ের তৃতীয় পক্ষের স্ত্রী) একটি জাল উইল তৈরি করেছেন, যাতে তিনি পুরো সম্পত্তির দখল নিতে পারেন। শুধু তাই নয়, প্রিয়া নাকি আরও দুই সহযোগী—দীনেশ আগরওয়াল ও নীতিন শর্মার সঙ্গে মিলে উইল সাত সপ্তাহ গোপন রেখে পরে ৩০ জুলাই ২০২৫-এ এক পারিবারিক বৈঠকে তা উপস্থাপন করেন।তাদের দাবি—“যে তথাকথিত উইল আমাদের বাবার নামে তৈরি দেখানো হয়েছে, তা আসলে আইনি বৈধ নথি নয়। এটি জাল, কৃত্রিম এবং সন্দেহজনক পরিস্থিতিতে তৈরি।” কিয়ান ও সামাইরা আদালতের কাছে আবেদন জানিয়েছেন, তাঁদের ক্লাস ওয়ান লিগ্যাল হেয়ার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হোক এবং বাবার বিশাল সম্পত্তি পাঁচ ভাগে ভাগ করা হোক। তাঁরা দাবি, প্রত্যেকের প্রাপ্য মোট সম্পত্তির এক-পঞ্চমাংশ করে।
বলিউড-ইন্ডাস্ট্রিয়াল দুনিয়া কাঁপিয়ে দিয়েছে সঞ্জয় কাপুরের উত্তরাধিকার কাণ্ড। প্রয়াত শিল্পপতি সঞ্জয় কাপুরের (১৯৬৯-২০২৪) সন্তান সামাইরা ও কিয়ান — মা করিশ্মা কাপুরের সঙ্গে তাঁরা দিল্লি হাইকোর্টে দৌড়েছেন সৎমা প্রিয়া সচদেবের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, বাবার উইল নাকি ভুয়ো, আর ওই নথি বানিয়েছেন প্রিয়াই।
কাপুর পরিবারের জটিল ইতিহাস
সঞ্জয়ের জীবনে ছিল একের পর এক বিয়ে—
প্রথম স্ত্রী ফ্যাশন ডিজাইনার নন্দিতা মহতানি (বিয়ে ১৯৯৬, ডিভোর্স ২০০০)।
দ্বিতীয় স্ত্রী অভিনেত্রী করিশ্মা কাপুর (বিয়ে ২০০৩, ডিভোর্স ২০১৬)। তাঁদের দুই সন্তান সামাইরা ও কিয়ান।
তৃতীয় স্ত্রী প্রিয়া সচদেব, যাঁকে ২০১৭ সালে বিয়ে করেছিলেন সঞ্জয়।
তবে আশ্চর্যের বিষয়, সঞ্জয়ের প্রথম স্ত্রী নন্দিতা মহতানির নাম কিন্তু এই উত্তরাধিকার টানাপোড়েনে নেই। তাঁদের সংসারে সন্তান হয়নি। তবে নন্দিতার ঝলমলে সামাজিক জীবন কম আলোচনায় নয় — একসময় ডিনো মোরিয়া ও রণবীর কাপুরের সঙ্গে তাঁর নাম জড়িয়েছিল, আবার বিদ্যুত জামওয়ালের সঙ্গে বাগদানও হয়েছিল ২০১৭-তে। বর্তমানে তিনি পরিচিত ক্রিকেট তারকা বিরাট কোহলির স্টাইলিস্ট হিসেবে। উল্লেখ্য, নন্দিতার আত্মীয়তা রয়েছে দেশের বড় বড় ব্যবসায়িক পরিবারের সঙ্গে। তাঁর বোন অনু বিয়ে করেছেন দেশের অন্যতম খ্যাতনামা ব্যবসায়ী সঞ্জয় হিন্দুজাকে।
প্রিয়া সচদেব গত জুলাই মাসে আদালতে একটি নথি জমা দেন, যেখানে লেখা মার্চ মাসে সুনজয় নাকি নিজের উইল তৈরি করেছিলেন। সেই উইলে করিশ্মা কিংবা নন্দিতার কোনো নাম নেই। কিন্তু সামাইরা ও কিয়ান দাবি করেছেন, নথি সম্পূর্ণ ভুয়ো। সূত্র বলছে, সঞ্জয় জীবদ্দশায় জানিয়ে গিয়েছিলেন, উত্তরাধিকার ভাগ হবে কেবলমাত্র তাঁর সন্তান ও নিকট পরিবারের মধ্যে। তাই প্রাক্তন স্ত্রীদের উইলে না থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু সমস্যা দেখা দিয়েছে প্রিয়ার ‘হঠাৎ হাজির হওয়া’ নথি নিয়ে।
এই মামলায় সঞ্জয়ের মা, রানি কাপুরও আলাদা করে মামলা করেছেন প্রিয়ার বিরুদ্ধে। আদালত ইতিমধ্যেই প্রিয়াকে নির্দেশ দিয়েছে, প্রয়াত শিল্পপতির সমস্ত সম্পত্তি ও সম্পদ আদালতে প্রকাশ করতে হবে।
এখন নজর অক্টোবরের দিকে, যখন মামলার পরবর্তী শুনানি হবে দিল্লি হাইকোর্টে।
২০২৫ সালের ১২ জুন পোলো খেলতে গিয়ে হঠাৎ মৃত্যু হয় সঞ্জয় কপূরের। এরপর ১৯ জুন লোধি শ্মশান ঘাটে ছেলের হাতে বাবার চিতায় অগ্নিসংস্কার হয়। কিন্তু তারপর থেকেই শুরু হয় পারিবারিক দ্বন্দ্ব। অভিযোগ, প্রিয়া তাঁদের ট্রাস্ট সম্পর্কিত নথি ও আর্থিক খাতার কাগজপত্রে প্রবেশাধিকার সীমিত করতে থাকেন।এমনকী, সোনা কমস্টারের কর্পোরেট মিটিংয়েও তাঁদের ডাকা হয়, আইনি নথিতে স্বাক্ষর করতে চাপ দেওয়া হয়, কিন্তু সম্পূর্ণ তথ্য গোপন রাখা হয়।
