আজকাল ওয়েবডেস্ক: পশ্চিম আফ্রিকার উপকূলের ছোট দ্বীপরাষ্ট্র কেপ ভার্দেতে রচিত হল ইতিহাস। দেশটি তাদের ইতিহাসে প্রথমবারের জন্য যোগ্যতা অর্জন করল ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপে। শুনলে অবাক হতে হবে যে প্রায় পাঁচ লক্ষ জনসংখ্যার এই ছোট্ট দেশটি প্রথমবারের মতো আসন্ন ফিফা বিশ্বকাপের মূলপর্বে যোগ্যতা অর্জন করেছে।

শুক্রবার রাতে প্রাইয়ার ঘরের মাঠে অনুষ্ঠিত ক্যাফ কোয়ালিফায়ারসের শেষ গ্রুপ ম্যাচে তারা এসওয়াতিনিকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে এই ঐতিহাসিক সাফল্য নিশ্চিত করে। ‘ব্লু শার্কস’ নামে পরিচিত কেপ ভার্দে গ্রুপ ডি-এর শীর্ষে থেকে কোয়ালিফায়ার শেষ করে। এই গ্রুপে তাদের সঙ্গে ছিল শক্তিশালী ক্যামেরুন।

১৯৮৬ সালে ফিফার সদস্যপদ পায় কেপ ভার্দে। তার কয়েক বছরের মধ্যেই ফুটবলে উন্নতি করে ফুটবল বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চে সুযোগ পাওয়া দেশটির জন্য এক স্বপ্নপূরণের মুহূর্ত। গত ৯ সেপ্টেম্বর ক্যামেরুনকে ১-০ গোলে হারিয়ে বিশ্বকাপে ওঠার আশা জাগিয়েছিল কেপ ভার্দে। তখনও তাদের হাতে ছিল আরও দুটি ম্যাচ লিবিয়া ও এসওয়াতিনির বিরুদ্ধে।

এরপর গত ৮ অক্টোবর লিবিয়ার বিপক্ষে রোমাঞ্চকর এক ম্যাচে ৩-৩ গোলে ড্র করে ‘ব্লু শার্কস’-রা। ফলে ১৩ অক্টোবরের এসওয়াতিনি ম্যাচটি হয়ে ওঠে ‘ডু অর ডাইয়ের’ লড়াই। প্রাইয়ার গ্যালারি ছিল কানায় কানায় পূর্ণ, প্রথমার্ধে একাধিক সুযোগ তৈরি করেও গোলের দেখা পায়নি স্বাগতিকরা। দ্বিতীয়ার্ধ শুরু হতেই ৪৮তম মিনিটে গোল করে দেশকে এগিয়ে দেন দলের তারকা ফরোয়ার্ড ডেইলন লিভ্রামেন্টো।

এটি ছিল তাঁর কোয়ালিফায়ার অভিযানে চতুর্থ গোল। এরপর ৫৮তম মিনিটে উইলি সেমেডো এবং ম্যাচের সংযুক্ত সময়ে (৯৩’) অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার ইয়ানিক টাভারেস স্টপিরা আরও একটি গোল যোগ করেন। গোলের পর আনন্দে তারা জার্সি খুলে ভক্তদের সঙ্গে মেতে ওঠেন, রেফারির কার্ডের তোয়াক্কা না করেই।

ছোট্ট এই দ্বীপরাষ্ট্রের ফুটবলের কাঠামো খুব একটা উন্নত নয় অন্যান্য দেশগুলির মতো। কিন্তু সেই ধরনের পরিকাঠামো থাকা সত্ত্বেও কেপ ভার্দে প্রমাণ করে দিল তাদের দৃঢ়তা ও প্রতিভা। ১০ ম্যাচে ৭টি জয় ও ২৩ পয়েন্ট নিয়ে তারা গ্রুপ শীর্ষে থেকে শেষ করেছে। ক্যামেরুন শেষ করেছে ১৯ পয়েন্টে দ্বিতীয় স্থানে।

এই সাফল্যের মধ্য দিয়ে আফ্রিকা থেকে আলজেরিয়া, মিশর, ঘানা, মরক্কো ও তিউনিশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হল কেপ ভার্দে। আগামী বছর যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত হতে চলা ফিফা বিশ্বকাপে অংশ নেবে তারা। নতুন মুখ হিসেবে কেপ ভার্দের সঙ্গে বিশ্বকাপে দেখা যাবে জর্ডান ও উজবেকিস্তানকেও।

ম্যাচের আগেই প্রাইয়ায় উচ্ছ্বাস ছিল তুঙ্গে। খেলোয়াড়রা স্থানীয় বাজারে হাঁটাহাঁটি করে সমর্থকদের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন। সরকার ঘোষণা করেছিল জাতীয় ছুটি, যাতে সবাই এই ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হতে পারে। জয়ের পর সমুদ্রপারের এই ছোট্ট দেশ জুড়ে এখন একটাই ধ্বনি, ‘ভিভা কাবো ভার্দে!’।