কৃশানু মজুমদার: ইস্টবেঙ্গলে হঠাৎই গৃহদাহ। সুপার কাপ শুরু হওয়ার ঠিক আগে কোচ অস্কার ব্রজোঁ ও গোলকিপিং কোচ সন্দীপ নন্দীর মধ্যে ধুন্ধুমার লেগে গেল। যার পরিণতি ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছিন্ন করলেন বহুযুদ্ধের সৈনিক সন্দীপ। গোয়ায় পৌঁছিয়েই আবার তিনি কলকাতা ফিরে আসার বিমান ধরার জন্য ছুটলেন। লাল-হলুদের সঙ্গে মধুচন্দ্রিমা শেষ হয়ে গেল আশিয়ান জয়ী গোলকিপারের। 

সন্দীপ মানেই ইস্টবেঙ্গলে রূপকথা। লেসলি ক্লডিয়াস সরণীর ক্লাব তাঁর যৌবনের উপবন। সুভাষ ভৌমিক, ট্রেভর জেমস মর্গ্যানের জমানায় তিনি ইস্টবেঙ্গলের বারের নীচে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন সোনালী রোদ্দুর। আইএসএলের দুনিয়াতেও তাঁর কোচিংয়ে মুগ্ধ হয়েছিলেন বিদেশি কোচরাও। 

এবার অস্কার ব্রজোঁর দলের গোলকিপিং কোচ হিসেবে এসেছিলেন সন্দীপ। কিন্ত সেই অধ্যায় যে এভাবে কালীপুজোর দিন শেষ হয়ে যাবে, তার আভাস কি প্রথমদিন পেয়েছিলেন তিনি?

আরও পড়ুন: এডিলেড ম্যাচে একাধিক বদলের সম্ভাবনা টিম ইন্ডিয়ার প্রথম একাদশে, কারা বাদ পড়ছেন জানলে চমকে যাবেন...

আইএফএ শিল্ড ফাইনালে মোহনবাগানের কাছে টাইব্রেকারে হারের পর সাংবাদিক বৈঠকে লাল-হলুদ কোচ অস্কার ব্রজোঁর কাছে উড়ে এসেছিল প্রশ্ন, কেন গোলকিপার পরিবর্তন করা হল ঠিক পেনাল্টি শুট আউটের আগের মুহূর্তে? অস্কার উত্তরে বলেছিলেন, ''আমার কোচিং স্টাফদের পরামর্শ শুনেছিলাম। এখন মনে হচ্ছে আমার সিদ্ধান্তটা ভুলই ছিল।'' 

আজ সোমবার কালীপুজো। সুপার কাপ খেলার জন্য ইস্টবেঙ্গল গোয়ায় গিয়েছে। কোচ অস্কারের সঙ্গে সন্দীপের সাক্ষাৎ হয় গোয়ায় নামার পর।  সেখান থেকেই বিতর্কের যাবতীয় সূত্রপাত। ফাইনালে ইস্টবেঙ্গলের হারের নৈতিক দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়ে অস্কারকে 'সরি'ও বলেন ভারতসেরা গোলকিপার। 

কিন্তু সূত্রের খবর, স্প্যানিশ কোচ সন্দীপের ক্ষমাপ্রার্থনাকে কোনও মর্যাদাই দেননি। উলটে ইস্টবেঙ্গল ফুটবলারদের সামনে সন্দীপের উপরে চিৎকার-চেঁচামেচি জুড়ে দেন অস্কার। সেই সময়ে ছিলেন পথচললিত মানুষজনও।

সূত্রের খবর, প্রাক্তন গোলকিপারের কাছে অস্কার জানতে চান, কার প্ররোচনায় সেদিন ফাইনালে গিলকে পরিবর্তন করার জন্য পরামর্শ দিয়েছিলেন সন্দীপ। প্রভসুখান গিলের পরিবর্তে দেবজিৎ মজুমদারকে নামানোর কারণ অস্কারকে ব্যাখ্যা করে বোঝানোর চেষ্টা করেন সন্দীপ। কিন্তু ক্ষুব্ধ অস্কার সেই সব ব্যাখ্যায় কর্ণপাত করেননি। তিনি সন্দীপকে বলেন, ''তুমি এই কাজের যোগ্য নও। ইউ আর নট ক্যাপেবল।''

সন্দীপকে সর্বসমক্ষে অপমান করে বসেন অস্কার বলেই সূত্রের খবর। সন্দীপ এতে অত্যন্ত আহত হন। স্থির করে নেন ইস্টবেঙ্গলে তিনি আর কাজ করবেন না। তাঁর আত্মসম্মান আহত হয়েছে। তিলে তিলে যে সম্মান-ভালবাসা গোটা দেশের কাছ থেকে তিনি অর্জন করেছেন, সে কথাও অস্কারকে স্মরণ করিয়ে দেন। এমন ব্যবহার তিনি প্রত্যাশা করেন না। আত্মসম্মান-মর্যাদা তাঁর কাছে অনেক আগে। সূত্রের খবর, শিল্ড ফাইনালে ইস্টবেঙ্গলের হারের নৈতিক দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়ে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন সন্দীপ। দলের সঙ্গে তিনি মধ্যাহ্নভোজনও  করেননি। অভুক্ত অবস্থায় হোটেল ছেড়ে তিনি কলকাতা রওনা হন। 

ডুরান্ড কাপে মোহনবাগানকে মাটি ধরিয়েও শেষ চারে ইস্টবেঙ্গল হেরে গিয়েছিল ডায়মন্ড হারবারের কাছে। শিল্ডে ফাইনালে পৌঁছেও ট্রফি ঘরে তুলতে পারেননি অস্কার। ২৫ তারিখ থেকে শুরু হচ্ছে সুপার কাপ। তার আগেই কিন্তু মাঠের বাইরের ঘটনায় প্রবল চাপে পড়ে গেল ইস্টবেঙ্গল।  

আরও পড়ুন: উপত্যকার প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন, সেই রসুল নিলেন অবসর ...