কৃশানু মজুমদার: ব্রাজিলিয়ান তারকা মিগুয়েল ফিগুয়েরা কলকাতায় পা রেখেই বাংলায় বললেন, ''আমি এসে গিয়েছি। জয় ইস্টবেঙ্গল।'' লাল-হলুদ সমর্থকদের তিনি আশ্বস্ত করলেন। গত কয়েকবছর ধরে খারাপ সময় যাচ্ছে ইস্টবেঙ্গলের। ব্যর্থতাই সঙ্গী হয়ে উঠেছে লেসলি ক্লডিয়াস সরণীর ক্লাবের। মিগুয়েল এসে কি ইস্টবেঙ্গলকে সাফল্য এনে দিতে পারবেন? বদলে যাবে লাল-হলুদের ভাগ্য?
পদ্মাপারের সবুজ মাঠে ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য মিগুয়েল রূপকথা। এখনও তাঁর কথা স্মরণ করেন বসুন্ধরার প্রাক্তন সতীর্থরা। বসুন্ধরার তারকা ফুটবলার মহম্মদ সাদউদ্দিন আজকাল ডট ইন-কে বললেন, ''মিগুয়েল যদি ঠিকমতো খেলতে পারে, তাহলে ইস্টবেঙ্গল এবার দুঃসময় কাটিয়ে উঠতে পারবে।'' সাদউদ্দিনের হোয়াটসঅ্যাপে বাঘের ছবি। সেখানে লেখা, 'পেশেন্স ইজ পাওয়ার'। সাদউদ্দিনের পছন্দ বাঘ। ফুটবল মাঠে তিনি খুব কঠিন প্রতিপক্ষ। টাফ ফুটবল খেলেন। তিনি বলছেন, ''ফুটবল এমনিতেই টাফ। আমিও রাফ অ্যান্ড টাফ ফুটবল খেলি।''
আরও পড়ুন: রায়নার বিশ্ব একাদশে জায়গা হল না দুই তারকা ভারতীয়র, দল নির্বাচন নিয়ে প্রশ্নের পর প্রশ্ন
মিগুয়েল মানে ঠিকানা লেখা পাস। ব্রাজিলীয় তারকা মাঝমাঠের জেনারেল। তিনি দলে থাকা মানেই জয়ের সহজ পাসওয়ার্ড খুঁজে পাওয়া। সাদউদ্দিন বলছেন, '' যে কোনও মুহূর্তে ম্যাচের রং বদলে দিতে পারে মিগুয়েল। বসুন্ধরার হয়ে খেলার সময়ে এমন একেকটা পাস বাড়াত যে গোল না করাটাই ছিল লজ্জার ব্যাপার। ইস্টবেঙ্গলেও একই কাজ করবে মিগুয়েল। ভাল মানের স্ট্রাইকার থাকলে মিগুয়েলের পাস থেকে গোল হবেই। আর মিগুয়েল নিজের ফর্মে খেললে ইস্টবেঙ্গল ভাল ফলাফল করবে।''

মিগুয়েলের বাংলা নিয়ে ইতিমধ্যেই চর্চা হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। কেউ বলছেন, বাংলাদেশে ছিলেন বলেই বাংলা বুঝতে পারেন।'' সাদউদ্দিন হাসতে হাসতে বলছেন, ''আমরাই তো ওকে বাংলা শিখিয়েছি। ছোট ছোট বাক্য বলতে পারে। কেমন আছো, কী করো- এগুলো শিখে গিয়েছে। অল্প অল্প বাংলা বুঝতেও পারে।''
অনুশীলনে মজা করতেন মিগুয়েল। পিছনে লাগতেন সতীর্থদের। ইংরেজিতে সড়গড় নন। তাই বসুন্ধরা কিংসের ফুটবলার বিশ্বনাথ, সোহেল, সাদউদ্দিনের সঙ্গে ইশারায় কথাবার্তা বলতেন ব্রাজিলীয় তারকা। মাঠের ভিতরে তিনি ভয়ঙ্কর। ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ করে দেন। কিন্তু মাঠের বাইরে সতীর্থদের কথায়, ''মিগুয়েল খুব ভাল ছেলে।''

ফ্রি কিক থেকে গোল করতে পারেন, আক্রমণে তিনি দক্ষ। আবার দলের প্রয়োজনে নীচে নেমে এসে প্রতিপক্ষের ফুটবলারের পা থেকে বল কেড়ে নিতে পারেন। সাদউদ্দিন বলছেন, ''মিগুয়েলকে আক্রমণ করতে দিলেই ভাল। ওর পিছনে দু'জন মিডফিল্ডার থাকবে আর ও আক্রমণ শানাবে, তাহলে সুযোগ তৈরি হবে অনেক।''
মিগুয়েলের পিঠে উঠল লাল-হলুদ জার্সি। বসুন্ধরায় তাঁর প্রাক্তন সতীর্থ রবসন রবিনহোর নতুন ঠিকানা হয়তো মোহনবাগান। দুই ব্রাজিলীয় তারকাই বসুন্ধরাকে সাফল্য এনে দিয়েছেন। কে এগিয়ে? মিগুয়েল নাকি রবসন? সাদউদ্দিনের ব্যাখ্যা, ''দু'জনে দুই পজিশনের ফুটবলার। তবে কার্যকারিতার দিক থেকে মিগুয়েল অনেক এগিয়ে।''
তবে ম্যাচ চলাকালীন মেজাজ হারিয়ে ফেলেন ব্রাজিলিয়ান ম্যাজিশিয়ান। সাদউদ্দিন বলছিলেন, ''খেলা চলাকালীন কেউ যদি ওকে প্ররোচিত করে বা ওর পিছনে লাগতে শুরু করে, তখন মিগুয়েল মেজাজ হারিয়ে ফেলে। তবে চিন্তা নেই। অস্কার ব্রুজোঁ রয়েছেন। উনি মিগুয়েলকে খুব ভাল চেলেন। অস্কার দক্ষ কোচ। ও ঠিক সামলে নেবে।''
বন্ধুর জন্য়ই সাদউদ্দিন এবার আরও ভাল করে ইস্টবেঙ্গলের খেলা দেখবেন। লাল-হলুদ সমর্থকদের উদ্দেশে বাংলাদেশ জাতীয় দলের তারকার বার্তা, ''চিন্তা নেই। মিগুয়েলকে খেলতে দিন। ও অনেক বড় মাপের ফুটবলার। আপনাদের ওর খেলা ভাল লাগবে। মিগুয়েলের ফুটবল উপভোগ করুন সবাই।''
সাদউদ্দিনের গলার সুর আর ব্রাজিলীয় মায়েস্ত্রোর আশ্বাসবাণী, 'আমি এসে গিয়েছি' একইরকম শোনায়। লাইট, ক্যামেরা, অ্যাকশন--মিগুয়েল শো শুরু হল বলে ইস্টবেঙ্গলে।
আরও পড়ুন: ফের জোড়া গোল মেসির, এবার রোনাল্ডোকেও ছাপিয়ে গেলেন যুবরাজ
