আজকাল ওয়েবডেস্ক: সোমবার পশ্চিমবঙ্গ-সহ ১২টি রাজ্যে বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর)-এর ঘোষণা করেছেন ভারতীয় নির্বাচন কমিশন। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সোমবার বিকেল সওয়া ৪টে নাগাদ ঘোষণা করে জানান মঙ্গলবার থেকে রাজ্যে চালু হয়ে যাচ্ছে এসআইআর। গতকাল রাত ১২টা থেকে ভোটার তালিকা ফ্রিজ করে দেওয়া হয়েছে। আর এসআইআর ঘোষণা হতেই আতঙ্ক গ্রাস করেছে বহু মানুষের মধ্যে। আতঙ্ক এনআরসি করা হবে। সেই ভয়ে নিজেকে শেষ করে দিলেন উত্তর ২৪ পরগনার আগরপাড়ার বাসিন্দা প্রদীপ কর। ডায়েরির একটি পাতায় জড়ানো হাতে লিখে রেখে গিয়েছেন, ‘এনআরসি আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী’।
স্থানীয় সূত্রে দাবি, মঙ্গলবার বাড়ি থেকে প্রদীপের ঝুলন্ত দেহ দেখতে পাওয়া যায়। খড়দহ থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে দেহ উদ্ধার করে। ঘর থেকে উদ্ধার হয় সুইসাইড নোট। বাড়ির লোকজন এবং বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, এনআরসি সংক্রান্ত নানা খবর নিয়ে প্রদীপ চিন্তিত ছিলেন। স্থানীয় বাসিন্দা জয়দীপ ভৌমিক বলেন, “আজ সকালে খবর পাই যে প্রদীপদা গলায় দড়ি দিয়ে নিজেকে শেষ করে দিয়েছেন। পরিবারের লোকজনকে দরজা ভাঙতে মানা করে পুলিশে খবর দি। আমিও ঘটনাস্থলে পৌঁছই। দেহ উদ্ধারের পর ঘরে তল্লাশি করতে করতে পুলিশ দেখতে পায় যে একটি খাতা উল্টানো রয়েছে। সেই খাতার বিভিন্ন পাতায় এনআরসি সংক্রান্ত লেখা ছিল। সেখানেই একটি পাতার নীচের দিকে বড় করে লেখা ছিল, ‘এনআরসি আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী’। জড়ানো হাতের লেখা, কিন্তু বোঝা যাচ্ছিল। মৃত্যু নিয়ে আমি রাজনীতি করতে চাই না। কিন্তু আতঙ্ক ওনাকে শেষ করে দিল।”
তিনি আরও বলেন, “এটা দুর্ভাগ্য আমাদের ওয়ার্ডে এটা হল। আমার স্ত্রী এখানকার কাউন্সিলর। আমাদের সজাগ থাকতে হবে। প্রদীপদা এখানকরা বহুদিনের বাসিন্দা। প্রায় ৫০ বছর ধরে তিনি এখানে আছেন। বিয়ে করেননি। আমার সঙ্গে কথা বলেছিলেন। বার বার জিজ্ঞেস করছিলেন এসআইআর কী? খুব অল্প কিছু কাগজেই সমাধান হয়ে যেত। ওনার চিন্তা করার কিছুই ছিল না। খুবই দুর্ভাগ্য।”
আরও পড়ুন: খেলা শুরু করবে ‘মান্থা’, একাধিক দূরপাল্লার ট্রেনের সময়সূচি বদল করল দক্ষিণ-পূর্ব রেল
আগরপাড়ায় প্রৌঢ়ের মৃত্যুর ঘটনায় বিজেপি তথা কেন্দ্রীয় সরকারকে নিশানা করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। ফেসবুক পোস্টে প্রদীপ করের নাম উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন, “৫৭ বছর বয়সী প্রদীপ কর, ৪ মহাজ্যোতি নগর, পানিহাটি, খড়দহ (৯ নং ওয়ার্ড) থেকে আত্মহত্যা করেছেন, একটি চিরকুট রেখে গেছেন যেখানে লেখা আছে, ‘আমার মৃত্যুর জন্য এনআরসি দায়ী’। বিজেপির ভয় ও বিভাজনের রাজনীতির এর চেয়ে বড় অভিযোগ আর কী হতে পারে?”
তিনি আরও লিখেছেন, “বিজেপি বছরের পর বছর ধরে এনআরসির হুমকি দিয়ে নিরীহ নাগরিকদের উপর নির্যাতন চালিয়েছে, মিথ্যা ছড়িয়েছে, আতঙ্ক ছড়িয়েছে এবং ভোটের জন্য নিরাপত্তাহীনতার অস্ত্র তৈরি করেছে, তা কল্পনা করলে আমার মাথায় দাগ কেটে যায়। তারা সাংবিধানিক গণতন্ত্রকে একটি কঠোর আইন-শাসনে পরিণত করেছে, যেখানে মানুষকে তাদের অস্তিত্বের অধিকার নিয়ে সন্দেহ পোষণ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। এই মর্মান্তিক মৃত্যু বিজেপির বিষাক্ত প্রচারণার প্রত্যক্ষ পরিণতি। যারা দিল্লিতে বসে জাতীয়তাবাদ প্রচার করে তারা সাধারণ ভারতীয়দের এমন হতাশার দিকে ঠেলে দিয়েছে যে তারা তাদের নিজের দেশেই মারা যাচ্ছে, এই ভয়ে যে তাদের ‘বিদেশী’ ঘোষণা করা হবে।”
এখানেই থামেননি মমতা। তিনি লিখেছেন, “আমি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে এই নির্মম খেলা চিরতরে বন্ধ করার দাবি জানাচ্ছি। বাংলা কখনই এনআরসিকে অনুমতি দেবে না, এবং কাউকে আমাদের জনগণের মর্যাদা বা স্বত্ব কেড়ে নিতে দেবে না। আমাদের মাটি মা, মাটি, মানুষের, ঘৃণার উপর ভর করে এমনদের নয়। দিল্লির জমিদারদের এই কথাটি স্পষ্টভাবে শুনতে দিন: বাংলা প্রতিরোধ করবে, বাংলা রক্ষা করবে এবং বাংলা জয়ী হবে।”
মৃতের বাড়ি গিয়ে কথা বলেন মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, বিধায়ক নির্মল ঘোষ-সহ স্থানীয় নেতৃত্ব। গোটা ঘটনা শোনেন এবং ডায়রিতে কী লিখে গিয়েছেন তাও শোনেন। ঘটনাস্থলে যান ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনার মুরলীধর শর্মা-সহ উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা।
