আজকাল ওয়েবডেস্ক: সরকার সম্প্রতি জিএসটি ২.০ কাঠামোর অধীনে স্বাস্থ্য ও জীবনবীমার প্রিমিয়ামের ওপর থেকে পণ্য ও পরিষেবা কর (জিএসটি) প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। উদ্দেশ্য ছিল সাধারণ মানুষের জন্য বীমাকে আরও সাশ্রয়ী করা। তবে এই ঘোষণার পর থেকেই প্রশ্ন উঠছে—আসলেই কি এর সুফল গ্রাহকদের কাছে পৌঁছাবে?
সর্বশেষ পরিস্থিতিতে দেখা যাচ্ছে, এই সংস্কার বীমা শিল্পের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ—এজেন্ট ও পরিবেশক নেটওয়ার্কে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। অল ইন্ডিয়া জেনারেল ইনসুরেন্স এজেন্টস ফেডারেশন ইন্টিগ্রেটেড (GIAFI)-এর সর্বভারতীয় সভাপতি প্রশান্ত মাতরে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন, এই সিদ্ধান্ত এজেন্ট, ব্রোকার এবং উপদেষ্টাদের ভূমিকা দুর্বল করে তুলতে পারে। অথচ ভারতের বীমা খাতে এদের অবদানই সবচেয়ে বেশি।
ইনপুট ট্যাক্স ক্রেডিট হারালেন এজেন্টরা
মাতরের মতে, প্রিমিয়ামে জিএসটি তুলে দেওয়ার ফলে পরিবেশকরা সঙ্গে সঙ্গে ইনপুট ট্যাক্স ক্রেডিট (ITC) হারিয়েছেন। আগে কমিশন, পুরস্কার এবং ব্যবসায়িক খরচের ওপর তারা ITC দাবি করতে পারতেন। কিন্তু এখন সেই সুযোগ আর নেই। তিনি বলেন, “এটি কোনও ছোট পরিবর্তন নয়। এটি সরাসরি এজেন্সি, ব্রোকারেজ এবং স্বাধীন পরামর্শদাতাদের কার্যকরী মূলধনের ওপর আঘাত হেনেছে। বহু ক্ষুদ্র ও স্বতন্ত্র এজেন্ট বেঁচে থাকাই কঠিন হয়ে পড়বে।”
কমিশনের ওপর বাড়তি চাপ
GIAFI আরেকটি বড় উদ্বেগের বিষয় তুলেছে—এখন পরিবেশকদের নিজেদের কমিশন থেকে জিএসটি মেটাতে হচ্ছে। অনেক বীমা সংস্থা ইতিমধ্যে এজেন্টদের জানিয়েছে যে এতে কার্যত তাদের প্রায় ১৮% পর্যন্ত আয় কমে যাচ্ছে। মাতরে জানান, “কর প্রদানের বোঝা এখন এজেন্টদের কাঁধে এসে পড়েছে। এতে আমাদের হাতে পাওয়া আয় কমছে, ব্যবসা ধরে রাখা এবং বাড়ানো দুটোই কঠিন হয়ে যাচ্ছে।”
আরও পড়ুন: পার্সোনাল লোন: পাঁচটি সাধারণ ভুল এড়িয়ে চলুন
বাজারে প্রবেশাধিকার হ্রাসের আশঙ্কা
এজেন্ট সংগঠন সতর্ক করেছে, এর প্রভাব ছোট শহর ও গ্রামীণ অঞ্চলে বীমা বিস্তারের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। মাতরের মতে, এইসব অঞ্চলে মানুষকে বীমা বোঝানো, আস্থা তৈরি করা এবং পণ্য পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব মূলত এজেন্ট ও পরামর্শদাতাদের ওপরই পড়ে। তিনি বলেন, “আমাদের আয় যদি কেটে দেওয়া হয়, প্রেরণা কমবে এবং বীমা পাওয়ার সুযোগও সঙ্কুচিত হবে। এটি প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ‘২০৪৭ সালের মধ্যে সবার জন্য বীমা’ লক্ষ্যের বিরোধী।”
নিজের বিবৃতিতে মাতরে বীমা পরিবেশক সম্প্রদায়ের প্রতি ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি জীবন, সাধারণ ও স্বাস্থ্যবীমার এজেন্ট, ফেডারেশন এবং সমিতিগুলোকে এক প্ল্যাটফর্মে আসার আহ্বান জানান।
শিল্প মহলের একাংশ আশঙ্কা করছে, বর্তমান কাঠামো অপরিবর্তিত থাকলে এটি বীমা সংস্থাগুলোর জন্য খরচ কমানোর সহজ উপায় হয়ে দাঁড়াবে। দক্ষতা বাড়ানোর পরিবর্তে তারা যদি পরিবেশকদের আয় কেটে লাভ টিকিয়ে রাখতে চায়, তবে তা পুরো নেটওয়ার্ককেই দুর্বল করবে।
GIAFI একটি ভারসাম্যপূর্ণ সমাধানের দাবি জানিয়েছে—যাতে গ্রাহকরা যেমন কম জিএসটির সুবিধা পান, তেমনি পরিবেশক নেটওয়ার্কও টিকে থাকে। কারণ এই নেটওয়ার্কই দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বীমা পৌঁছে দেয়।
জিএসটি ছাড়ের এই সংস্কার এখন নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। একদিকে গ্রাহকদের জন্য খরচ কমানোর লক্ষ্য থাকলেও, অন্যদিকে পরিবেশকদের টিকিয়ে রাখা এখন বড় চ্যালেঞ্জ। বীমা শিল্পের ভবিষ্যৎ অনেকটাই নির্ভর করছে এক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও কোম্পানিগুলো কিভাবে ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে তার ওপর।
